কাগজ প্রতিবেদক : দুর্নীতি-অনিয়ম, একের পর এক অর্থ আত্মসাতের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড। সাবেক এবং বর্তমান কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির এই দশা বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসন, মানব সম্পদ ও এস্টেট ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাবেক প্রধান শামীম আহমেদ। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম আহমেদ জানান, ঝুঁকির মুখে পড়ায় বর্তমান আমানতকারীদের অর্থ নিয়মিতভাবে পরিশোধ করা যাচ্ছে না। শুধু তাই না টাকার অভাবে বোর্ডে ঋণ পাস হওয়ার পরেও ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে হাজার হাজার আমানতকারী ও বিনিয়োগকারী তাদের বিনিযোগ হারিয়ে পথে বসতে বাধ্য হবেন বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
শামীম আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের চাকরিজীবনে যেসব দুর্নীতি, দুঃশাসন, অপকৌশল, অপকর্ম, কূটকৌশল প্রত্যক্ষ করেছি, ইতোপূর্বে আলোচিত কারণে তা প্রমাণসহ মাইডাসের সম্মানিত শেয়ার হোল্ডার, বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের জ্ঞাতার্থে উপস্থাপন করা আমার নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করেছি। পাশাপাশি অন্য স্টেকহোল্ডারদেরও বিষয়গুলো জানা আবশ্যক। এ ছাড়া উল্লিখিত অপকর্মে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, আশির দশকে এনজিও হিসেবে মাইডাস বিশেষ সুনাম অর্জন করে। এই সুনাম আর মর্যাদাকে পুঁজি করে ১৯৯৫ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড গড়ে তোলা হয়। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটির শক্ত আর্থিক ভিত্তি গড়ে ওঠে। শেয়ার হোল্ডারদের নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয়ার পাশপাশি নিজস্ব অর্থায়নে ধানমণ্ডির ২৭নং সড়কে জমি কিনে ১৩ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে প্রথমে আব্দুল করিম এবং পরে আব্দুর রশীদ গাজী সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে অকস্মাৎ এবং অকারণে বিভিন্ন দক্ষ কর্মকর্তাদের জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপরেই শুরু হয় মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের অন্ধকার যুগ। পরবর্তীতে কোম্পানির এমডি হয়ে আসা মফিকুল আযম, পর্ষদ সদস্য শামসুল আলম এবং তাদের নিকটাত্মীয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান, কোম্পানি সচিব তানবীর হাসান পারস্পরিক যোগসাজশে মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডকে ধ্বংস করতে শুরু করেন। তারা পরস্পর যোগসাজসে অবৈধ উপায়ে নিজ নামে ঋণ অনুমোদন ও গ্রহণ, ঋণ জালিয়ায়াতি, দুর্নীতির প্রমাণ বিনষ্ট করতে ঘুষ প্রদান, সীমাহীন নারী কেলেঙ্কারি, বেতন-ভাতা ম্যানিপুলেশন, নানা ডকুমেন্টস জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে লুটপাট করে বিনিযোগকারীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।
একইসঙ্গে এই চক্র প্রতিষ্ঠানটিতে দক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারীদের অপসারণ করে নিজেদের পছন্দের লোকদের নিযোগ ও পদোন্নতি দিয়ে লুটপাট করছে। সংবাদ সম্মেলনে শামীম আহমেদ বলেন, এই চক্র আমাকে অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অপসারণ করেছে, আমি আমার চাকরি ফিরে পেতে সহযোগিতা চাই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।