আলফাডাঙ্গায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভা

আগের সংবাদ

নতুন মাথাব্যথা ‘হিজরত’! : আফগানিস্তানে তালেবান সাফল্যে উজ্জীবিত আইএস অনুসারী আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশে সক্রিয়

পরের সংবাদ

ডলারের দাপটে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে লাফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ২০২১ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যাংক খাত থেকে ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছেন। এই প্রবৃদ্ধি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় টাকার ব্যাপক দরপতনে ওলটপালট হয়ে যাওয়া অর্থনীতিতে একটি সুখবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সুখবরটি আবার বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর মুদ্রা এই ডলারের বদৌলতেই। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা মুদ্রানীতিতে ঘোষিত লক্ষ্যের প্রায় সমান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালের আগস্ট মাসের তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা ব্যাংক খাত থেকে ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছেন। আগের মাস জুলাইয়ে গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে বেশি নিয়েছিলেন ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে এতে আমেরিকার মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের অবদান রয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তারা বলেছেন, দেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহককে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। আর এটি বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, টানা আট মাস ধরে বাড়তে বাড়তে ২০২২ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ০৭ শতাংশে উঠেছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি কমে ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে নেমে আসে। মার্চে তা দশমিক ৫৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে ওঠে। এপ্রিল মাসে তা ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। মে মাসে তা আরও বেড়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ওঠে। জুন মাসে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। জুলাই মাসে ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে ওঠে। সবশেষ আগস্টে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এর অর্থ হলো ২০২১ সালের আগস্ট মাসের চেয়ে এই বছরের আগস্টে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর থেকেই কমতে থাকে এই সূচক।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছিল। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল, তাতে এর অবদান ছিল। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় দেশে বিনিয়োগের একটি অনুকূল পরিবেশও দেখা দিয়েছিল। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেলসহ কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে উদ্যোক্তারা নতুন পরিকল্পনা সাজিয়ে বিনিয়োগে নেমেছিলেন। ব্যাংকগুলো তাতেও বিনিয়োগ করেছেন। সব মিলিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণের একটি গতি এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকদের এলসি খুলতে বেশি টাকা লাগছে। তাতেও ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তবে আর নয়। এখন যে করেই হোক টাকাকে শক্তিশালী করতে হবে।
ডলারের এই অস্বাভাবিক উল্লম্ফন অর্থনীতিকে প্রতি মুহূর্তে তছনছ করে দিচ্ছে। বড় ধরনের সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমদানি কমাতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারপরও খুব একটা কাজ হচ্ছে না। এখনো কার্ব মার্কেটে ১১৫ টাকার বেশি দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে। মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় আমদানি বাড়তে থাকায় গত বছরের আগস্ট থেকে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে; দুর্বল হতে থাকে টাকা। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার টাকা-ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ছিল ১০৫ টাকা ৩৫ পয়সা। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এই দর ছিল ৮৫ টাকা ২৭ পয়সা। এ হিসাবে গত এক বছরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ২০ টাকার বেশি, ২৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদ ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুর বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই দেশে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা হোঁচট খেয়েছিল। মার্চে থেকে ফের বাড়তে শুরু করে। যুদ্ধের ধাক্কা সামলাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদেক্ষেপের কারণে এখন আমদানি ব্যয় কমেছে ঠিক। কিন্তু পণ্য আমদানির করতে গিয়ে এলসি খুলতে ব্যবসায়ীদের কিন্তু আগের চেয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। সে কারণে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। তাই সংকটের এই সময়েও বেসরকারি ঋণ বেশি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দীর্ঘদিন ধরে দেশে বিনিয়োগে মন্দা চলছিল। এর অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের চিত্রও ছিল হতাশাজনক।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে তা আরও কমতে থাকে। প্রতি মাসেই কমতে কমতে গত বছরের মে মাসে তা ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বনি¤œ।
জানা গেছে, বাংলাদেশের বর্ধিষ্ণু অর্থনীতিতে ব্যাংকের ঋণ বাড়তেই থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৪ শতাংশের বেশি। বছরওয়ারি হিসেবে এরপর তা সব সময়ই ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এমনকি এক পর্যায়ে তা ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তা দুই অঙ্কের নিচে (ডাবল ডিজিট), ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমে আসে। এরপর দুই বছর বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের নিচে (সিঙ্গেল ডিজিট) অবস্থান করে। গত বছরের নভেম্বরে তা দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) ঘরে, ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠে। মহামারির ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। এরপর সরকারের প্রণোদনা ঋণে ভর করে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এই প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৯ দশমিক ২০ শতাংশ হয়। আগস্টে তা আরো বেড়ে ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশে এবং সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশে ওঠে। কিন্তু অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি কমে ৮ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমে আসে। নভেম্বরে তা আরো কমে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ হয়। ডিসেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়। ২০২১ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৫১ ও ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এপ্রিলে নেমে আসে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে। মে মাসে তা আরো কমে নেমে যায় ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে করোনার প্রকোপ কমতে থাকায় গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে উঠে কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়। তারপর থেকে ঋণপ্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়