আলফাডাঙ্গায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভা

আগের সংবাদ

নতুন মাথাব্যথা ‘হিজরত’! : আফগানিস্তানে তালেবান সাফল্যে উজ্জীবিত আইএস অনুসারী আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশে সক্রিয়

পরের সংবাদ

ই-কমার্সের নামে প্রতারণা করছে এসপিসি ওয়ার্ল্ড : পাওনা পরিশোধের দাবি গ্রাহকদের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ই-কমার্সের নামে প্রতারণার আরেক ঠিকানা ‘এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস’-এর নাম উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের জমানো টাকা দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, বিভিন্ন উপায়ে এসপিসির মাধ্যমে আয় করা টাকাগুলো তাদের ওয়ালেটে জমা রয়েছে। তারা কোনোভাবেই এ টাকা ক্যাশ আউট করতে পারছেন না। এ নিয়ে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছেন গ্রাহকরা। সর্বশেষ গত ২৪ সেপ্টেম্বর, শনিবারও তারা মানববন্ধন করেন।
নিজেদের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দাবি করলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র জানায়, এসপিসি মূলত একটি বহু স্তরভিত্তিক বিপণন ব্যবসা (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম) প্রতিষ্ঠান। যেমনটি ছিল ডেসটিনি।
এসপিসির ভুক্তভোগী গ্রাহক চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন বলেন, এক বন্ধু আমাকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার মাধ্যমে আয়ের সুযোগের কথা বলে। সে আমাকে এসপিসিতে যুক্ত হয়ে নিয়মিত আয়ের একটি রাস্তা দেখায়। তার কথা শুনে এসপিসিতে ১২০০ টাকা দিয়ে একটি আইডি খুলি। একটি রয়েল আইডি নিতে ১৩টি সাধারণ আইডি করতে হয়। আমি সেটিও নিই। ৯ হাজার ৬০০ টাকা (প্যাকেজ) দিয়ে ১৩টি আইডি কিনি। এসব আইডি থেকে প্রতিদিন বিজ্ঞাপন দেখে আমি ১৩০ টাকা আয় করতে থাকি। একপর্যায়ে অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ হাজার টাকা তুলে নিই। আয় ভালো হওয়ায় আরো ১৩টি আইডি কিনি। বর্তমানে আমার মোট ২৬টি আইডি রয়েছে। এসব আইডির বিপরীতে প্রতিদিন আমার অ্যাকাউন্টে ২৬০ টাকা জমা হতে থাকে।
তিনি বলেন, আইডিগুলোয় টাকা জমা হতে থাকলেও গত বছর জুন-জুলাই থেকে কোনো টাকা তুলতে পারছিলাম না। এসপিসির পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়, লকডাউনের কারণে টাকা তুলতে কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে। পরবর্তীতে ওই আইডিগুলো থেকে আর কোনো টাকা তুলতে পারিনি।
মঈনউদ্দিন বলেন, আজ প্রায় ১৮ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কোনো টাকা কোম্পানি কর্তৃক না দেয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছি আমরা। করোনাকালীন সময়ে লকডাউন অবস্থায় বেকারত্ব থেকে একটু মুক্তি পাওয়ার জন্য ধার-দেনা করে এখানে বিনিয়োগ করি। কিন্তু আজ সেই বিনিয়োগ আমাদের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আমরা তাদের প্রতারণা বুঝে ওঠার আগেই বিনিয়োগকৃত অর্থ এবং পণ্য কিছু না দিয়েই কৌশলে তারা তাদের ব্যবসার ধরন পরিবর্তন করে এবং গ্রাহকদের ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়।
মানববন্ধনে গ্রাহকরা বলেন, আজ আমরা সবকিছু হারিয়ে মামলা ও হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আল-আমিন প্রধান আমাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এখনো প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলায় ঘটছে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর হামলা। প্রতিষ্ঠানটি সরকার ঘোষিত ই-কমার্স নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করুক, এটা আমরা কোম্পানির ৬৪ লাখ গ্রাহক সাধুবাদ জানাই। তবে আমাদের ন্যায্য দেনা-পাওনা মিটিয়ে তারপর তা হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পায় এজন্য মানববন্ধন থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় দেনার দায়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো রাস্তা থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন তারা।
ই-কমার্সের নামে এমএলএম ব্যবসা ও প্রতারণার অভিযোগে ২০২০ সালে আল-আমিনসহ প্রতিষ্ঠানটির ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ওই সময় ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানিয়েছিলেন, এসপিসি ২২ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি আল-আমিন গ্রাহকের ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নিজের নামে তিনটি প্রাইভেটকার কিনেছেন। এছাড়া সিটি ব্যাংকের একটি হিসাব থেকে গ্রাহকের ৩৫ লাখ টাকা তার স্ত্রী সারমীন আক্তারের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার (স্থানান্তর) করেছেন। তবে গ্রেপ্তারের দুই মাসের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আসেন আল-আমিন। আবারো নতুন উদ্যমে শুরু করেন ব্যবসা।
এসপিসি দুই পদ্ধতিতে গ্রাহকদের আয়ের প্রলোভন দেখায়। প্রথমত, বিজ্ঞাপন দেখে আয় করা এবং দ্বিতীয়ত, রেফার করে আয় (অন্যকে অ্যাকাউন্ট খোলাতে পারলেই আয়)। এসপিসি গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের লিংক দেয়। সেগুলো দেখলেই টাকা আয় হয় এবং তা গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এছাড়া এসপিসিতে একটি আইডি খুলতে ১২০০ টাকা লাগে। কেউ যদি তার পরিচিত কাউকে আইডি খুলতে রেফার করেন তাহলে তিনি ১২০০ টাকার মধ্যে ৪০০ টাকা পাবেন। রেফারেল বোনাস দীর্ঘদিন ধরে পেতে থাকবেন গ্রাহক। তবে রেফারেল ও বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের এ টাকা তারা নগদ তুলতে পারবেন না। তাদের অনলাইন ওয়ালেটে জমা হবে। টাকা তোলার সময় কাটা হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, কিনতে হবে এসপিসির পণ্য। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকে শুভেচ্ছাদূত করে এসপিসি। পরে ‘ব্যবসা সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেয়ায়’ চুক্তি বাতিল করেন তিনি।
মানববন্ধনে জানানো হয়, বর্তমানে কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার যোগাযোগ ও সম্পর্ক রক্ষা করা আমাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ, তাদের সবার ফোন বন্ধ এবং দিন দিন তারা পর্দার আড়ালে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিগত দিনে এমডি আল-আমিন প্রধান মানি লন্ডারিং মামলায় জেল খেটেছেন এবং সেই মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। মামলাটি এখনো আদালতে বিচারাধীন আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়