সোনারগাঁওয়ে দলিল লিখককে হত্যা স্ত্রী আটক

আগের সংবাদ

জন্মদিনের শুভেচ্ছা : জননেত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার

পরের সংবাদ

সুনামগঞ্জে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণ : ৮ মাসে ৫১ মামলা > ডাক্তারি পরীক্ষায় ৩৮ জনের রিপোর্ট ‘গায়েব’

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. সাজ্জাদ হোসেন শাহ্, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে : গেল তিন মাসে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৯ জন। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ সময় মাত্র একজনের ধর্ষণের আলামত পেয়েছে।
বাকি ৩৮ জনের ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পায়নি বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তবে ভুক্তভোগীরা এ ধরনের রিপোর্ট মানতে নারাজ। সম্প্রতি এ ঘটনার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সার্টিফিকেট প্রদানকারীদের সমালোচনা করা হয়।
জানা যায়, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় গেল ৮ মাসে মামলা হয়েছে ১৫টি। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৪ আসামি। ছাতকে মামলা হয়েছে ৯টি, গ্রেপ্তার হয়েছে ৯ জন। জগন্নাথপুরে ৫টি ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৪ জন।
দোয়ারাবাজারে মামলা হয়েছে ৫টি এবং গ্রেপ্তার হয়েছে ৬ জন। তাহিরপুরে মাত্র ১টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে এবং পুলিশ ধর্ষককে গ্রেপ্তারও করেছে। বিশ্বম্ভরপুরে ২টি মামলায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দিরাই থানায় ধর্ষণ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জামালগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে ৬টি।
এসব মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধরমপাশায় একটি ধর্ষণ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মধ্যনগর থানায় মামলা হয়েছে ৩টি। গেল ৮ মাসে শাল্লা ও শান্তিগঞ্জ থানায় ধর্ষণের অভিযোগে কোনো মামলা হয়নি বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার হালুয়ারগাঁওয়ে ৬০ বছরের বৃদ্ধ কর্তৃক ৬ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার পর শিশুটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। কিভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল প্রথমে তা বুঝতে পারেনি তারা।
এ জন্য ভিকটিমকে ভালো করে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। তবুও কোথাও কাটার দাগ মিলেনি। পরে শিশুটি ঘটনাটি অভিভাবকদের কাছে বলে।
ভিকটিমের এক প্রতিবেশী জানান, ধর্ষকের ছেলের বউ প্রথমে শিশুটিকে নিয়ে আসে। এসময় শিশুটি ভয় পেয়ে যায়। তখনো ঘটনা বুঝতে পারেননি কেউ। পরে ধর্ষকের ছেলের বউয়ের সহায়তায় শিশুটির শরীর পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। পরে ভিকটিমের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে তারা বুঝতে পারেন, কি হয়েছে তার সঙ্গে। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে হাসপাতালের ডাক্তারি প্রতিবেদনে শিশুটির ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি জানিয়ে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ভিকটিমের বাবা-মায়ের দাবি প্রতিবেদনে অনিয়ম করা হয়েছে। তারা ন্যায় বিচার চান।
শুধু এই ৬ বছরের নির্যাতিত শিশু নয়, গত ৩ মাসে ৩৯ জন ধর্ষণের শিকার হয়ে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ছাড়া ৩৮ জনের ধর্ষণের আলামত পায়নি সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগ। ডাক্তারের দেয়া এমন প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ সুশীল সমাজের নাগরিকরা।
জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বললেন, আমাদের সমাজে এই ধরনের ঘটনা প্রথমে প্রভাবশালীদের চাপে ধামাচাপার চেষ্টা করা হয়। থানা, হাসপাতাল পর্যায়ে আসতে চায় না ভোক্তভোগীরা। এই ৩ মাসে যারা এসেছেন তারা এমনিতেই আসেননি।
ন্যায় বিচারের আশায় আইনের কাছে এসেছেন। এখন যারা থানায় এসেছেন, তাদের মামলা নিচ্ছে পুলিশ।
কিন্তু হাসপাতাল ধর্ষণের আলামত পায় না। এতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তভোগীরা। ৩৯টির মধ্যে ৩৮টির আলামত পাওয়া যায়নি, এতে প্রমাণ হয় এখানে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. লিপিকা দাস বলেন, ধর্ষণের ঘটনাগুলো হয়তো সত্য, ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু সেভাবে আলামত না পাওয়ায় সেটি প্রমাণ করা যায়নি। পরীক্ষায় যা পেয়েছি তাই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. সুমন মিয়া ৬ বছরের শিশুর রক্তাক্ত হাফ পেন্ট ও জুতা পুলিশের সংগ্রহে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, পহেলা জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৯টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ অভিযুক্তকে আটক করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আনিছুর রহমান বললেন, জুলাই মাসে ১৪, আগস্টে ১৫ জন ভিকটিম হাসপাতালে এসেছে। তাদের কারোও ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি।
সেপ্টেম্বর মাসে (১৯ তারিখ পর্যন্ত) ১০ জন ভিকটিম হাসপাতালে এসেছেন। এদের মধ্যে একজনের ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তিনি জানান, সাজানো ধর্ষণ ও সম্মতিক্রমে আলামত নষ্ট করে হাসপাতালে আসার কারণে ফলাফল নেগেটিভ আসে।
সুনামগঞ্জের নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহ্সান শাহ্ ভোরের কাগজকে বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে ধর্ষণের ঘটনা বেশি হয়।
তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে যা এক পর্যায়ে প্রেমসহ অন্য দিকে মোড় নেয়।
এক্ষেত্রে পরিবার ও সমাজকে আরো সচেতন হতে হবে। আমাদের ১২টি থানাকে ৯৮ বিটে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমাদের পুলিশ প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া ধর্ষণের ঘটনার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তারের বাধ্যবাধ্যকতা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অতীব গুরুত্ব সহকারে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার তদন্ত কাজ নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়