সোনারগাঁওয়ে দলিল লিখককে হত্যা স্ত্রী আটক

আগের সংবাদ

জন্মদিনের শুভেচ্ছা : জননেত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার

পরের সংবাদ

সালমা-সাবিনা ক্রীড়াঙ্গনের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাবিনা খাতুন আর সালমা খাতুন। বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের দুই পরিচিত মুখ। কখনো কখনো তাদের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে ভর করে জিতে যায় দেশ। শিরোনাম হয় খবরের। কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবনের নানা প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের। বন্ধুর পথ অতিক্রম করে আজ তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল।
নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন সাবিনা খাতুন। তার পারফরম্যান্স আর নেতৃত্বে ভর করে প্রথমবারের মতো শিরোপা ঘরে তোলে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জিতেছেন তিনি। পাঁচ ম্যাচ খেলে করেছেন আট গোল। দুটি হ্যাটট্রিকও আছে তার। একটি গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে, অন্যটি সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে। পাশাপাশি সতীর্থ দিয়ে গোল করিয়েছেন সাবিনা। ফলে সাফের সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড়ের সম্মাননাও উঠেছে তার হাতে।
সাবিনা খাতুনের জন্ম ১৯৯৩ সাল। জন্মস্থান খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা। তার পিতা মো. সৈয়দ গাজী ও মা মমতাজ বেগম। ফুটবলের প্রতি তার নেশা ছোটবেলা থেকেই। ২০০৭ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল কোচ আকবরের মাধ্যমে তার ফুটবলের হাতেখড়ি। সেখান থেকে খেলেন স্কুল পর্যায়ে, আন্তঃস্কুল ও আন্তঃজেলা পর্যায়ে। ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে ডাক পান বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে। দেশের হয়ে অভিষেক হয় ২০০৯ সালে। সিটিসেল জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পর ধারবাহিকভাবে খেলেছেন ঢাকা মহানগর মহিলা ফুটবল লিগে। কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবলে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ ঘরোয়া ফুটবলের শতাধিক গোল করেন সাবিনা, হয়ে যান জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০১৫-তে এসে পান অধিনায়কের দায়িত্ব। পাকিস্তানে মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই গোল করেন সাবিনা। এর মাধ্যমেই মালদ্বীপ ফুটবল কর্তাদের নজরে আসেন তিনি। এরপর দেশের প্রথম প্রমীলা ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরের লিগে খেলার সুযোগ পান। এর আগে কাজী সালাউদ্দিন, কায়সার হামিদ, প্রয়াত মোনেম মুন্না এবং মামুনুল দেশের বাইরে খেলার ডাক পেলেও নারী হিসেবে সাবিনাই প্রথম। প্রথমবারেই বিদেশি লিগে খেলতে গিয়ে সাবিনা যে কৃতিত্ব করেছেন তা রূপকথাকেও হার মানায়। মালদ্বীপে পুলিশ ক্লাবের পক্ষে অভিষেকেই করেছেন চার গোল, পরের ম্যাচে একাই করেছেন ১৬ গোল (৫টি হ্যাটট্রিক)।
২০১১ সালে শেখ জামালের হয়ে ২৫ গোল করেন সাবিনা। ২০১৩ সালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে করেন ২৮ গোল। নারীদের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরার হয়ে করেন ৩৫ গোল। প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে ৮ ম্যাচে ১৩ গোল করে পূর্ণ করেন গোলের সেঞ্চুরি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পূর্ণ করেন এই মাইলফলক। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনার একেকটি গোল যেন ইতিহাসের অংশ। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ইতোমধ্যে তার গোল চারশর কাছাকাছি। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার, যিনি বিদেশি লিগে খেলছেন। মালদ্বীপের ক্লাবের জার্সিতেও গোল উৎসব করেছেন। মালদ্বীপে উইমেন্স ফুটসাল ফিয়েস্তা নামের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৩৭ গোল করার রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৬ সালে ভারতের শিলিগুড়ি সাফে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে তুলেছিলেন ফাইনালে। ব্রাজিলের তারকা মার্তাকে আদর্শ মানেন সাবিনা। স্কার্ট পরা পেলে হিসেবে পরিচিত মার্তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে একটি দেশের নারী ফুটবলের সমার্থক হয়ে গেছেন তিনি। ফুটবল ভক্তদের কাছে বাংলার মেসি কন্যা নামে পরিচিত এই ফুটবলার নৈপুণ্য দিয়েই তার এই নামটি সার্থক করে তুলছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র সালমা খাতুন। ১৯৯০ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন সালমা। প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৩ রানের টার্গেট দিয়েও ১১ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ। এ ম্যাচে ৪ ওভারের ১৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। ছেলেদের সঙ্গে খেলতে খেলতে বড় হয়েছিলেন, পরে খুলনায় নারীদের হয়ে ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দলের সঙ্গে ছিলেন। এরপর তাকে জাতীয় দলে স্বাগত জানানো হয়। সে বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার। অভিষেকের পর ব্যাটে এবং বলে উভয়ই ক্যারিয়ার জুড়ে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। তার নেতৃত্বে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ। সালমার টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় ২০১২ সালে। সাদা বলের ক্রিকেট এবং ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটেই তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন। সালমার সবচেয়ে প্রিয় বিদেশি নারী ক্রিকেটার ভারতের ঝুলন গোস্বামী। এছাড়া ছেলেদের মধ্যে তার প্রিয় খেলোয়াড় পাকিস্তানের সাঈদ আনোয়ার, ভারতের শচীন টেন্ডুলকার, উইন্ডজের ক্রিস গেইল।
– মোহাম্মদ আল মুকিত

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়