সোনারগাঁওয়ে দলিল লিখককে হত্যা স্ত্রী আটক

আগের সংবাদ

জন্মদিনের শুভেচ্ছা : জননেত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার

পরের সংবাদ

যাচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে : হোগলা পাতার দড়ি বুনে ২৫ হাজার নারীর ভাগ্যবদল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এইচ এম নাহিদ, ভোলা থেকে : ভোলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার নারীদের হাতে তৈরি হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে বানানো পণ্য যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জেলার সদর উপজেলা, দৌলতখান, লালমোহন, তজুমদ্দিন, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার নারী এই দড়ি তৈরি করে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছেন। ঢাকার একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান এসব দড়ি ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে ঝুড়ি, বসার মোড়া, পাপোশ, মাদুর, ফ্লোর ম্যাট, ফুলদানি, সোফা সেট, নারীদের হাত ব্যাগ, সৌন্দর্য বর্ধনের নানান সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুত করে রপ্তানি করছে। ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইতালি, হংকং, জাপান, চীন, ভারত, জার্মানিসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এসব পণ্য পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ২৪ বছর আগে ঢাকার একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ভোলায় শুরু হয় হোগলা পাতা দিয়ে দড়ি তৈরির কাজ। প্রথম দিকে তেমন সাড়া পাওয়া না গেলেও বর্তমানে স্থানীয় নারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই কার্যক্রম। দড়ি তৈরি করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির নির্দিষ্ট পাইকাররা নারীদের বিনামূল্যে হোগলা পাতা সরবরাহ করে থাকেন। প্রতি এক হাজার হাত দড়ির দাম ১১০ টাকা দেয়া হয় কারিগরদের। এসব দড়ি নারীদের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে পাইকাররা ঢাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। সেখান থেকে হরেক রকম পণ্য তৈরি করে তা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের দড়ির পাইকার মো. সিরাজ মোল্লা জানান, জেলায় প্রায় ৫০ জন পাইকার বিভিন্ন চরাঞ্চল থেকে হোগলা পাতা সংগ্রহ করে নারীদের বিনামূল্যে দেন দড়ি তৈরির জন্য। পরে প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব দড়ি প্রতি হাজার হাত ১১০ টাকায় কেনেন। আর তারা প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে পান হাজার হাত ২১০ টাকা। বর্তমানে নারীদের মধ্যে দড়ি তৈরির আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান তিনি।
সদরের বাপ্তা ইউনিয়নের পশ্চিম চরনোয়াবাদ গ্রামের লাকি বেগম ও জাহানারা বলেন, সংসারের কাজের পাশাপাশি তারা দড়ি তৈরি করে থাকেন। দৈনিক প্রায় ১ হাজার হাত দড়ি তৈরি করা যায়। সংসারে কাজ কম থাকলে আরো বেশি দড়ি বানানো যায়। ভেলুমিয়া চরের নারী রুবিনা আক্তার জানান, পাতাগুলো প্রথমে ২-১ দিন রোদে শুকাতে হয়। তারপর লম্বা এসব পাতাকে ২-৩ ভাগ করে হাত দিয়ে পাকিয়ে দড়ি তৈরি করা হয়। অনেকেই এখন এই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। চরছিফলী গ্রামের রেহানা বেগম ও রাবেয়া বেগম জানান, তারা দীর্ঘ ৬ বছর ধরে দড়ি তৈরির কাজ করছেন। কাজের চাপ বেশি থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যরা তাদের কাজে সহায়তা করেন। তবে পরিশ্রম অনুয়ায়ী তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই কাজের মূল্য বাড়ানোর দাবি তাদের। বিডি ক্রিয়েশন ভোলার এরিয়া ম্যানেজার কাজী এনামুল হক বাচ্চু বলেন, আমরা ভোলার বিভিন্ন পাইকারের কাছ থেকে ক্রয় করে দড়িগুলো ঢাকায় পাঠাই। ঢাকায় আমাদের প্রতিষ্ঠানের কারখানায় হোগলা পাতার দড়ির সঙ্গে অন্য উপকরণের সহায়তায় বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হয়, যা দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে জেলায় মাসে ১ কোটি ২০ থেকে ৩০ লাখ হাত দড়ি তৈরি হয়।
জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ইকবাল হোসেন জানান, জেলায় প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর হোগলা পাতা তৈরি হয়। পাতা দিয়ে দড়ি তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন গ্রামীণ নারীরা। এর মাধ্যমে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। এটা অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ। তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরো দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর নারীদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়