সোনারগাঁওয়ে দলিল লিখককে হত্যা স্ত্রী আটক

আগের সংবাদ

জন্মদিনের শুভেচ্ছা : জননেত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার

পরের সংবাদ

কমলগঞ্জে মনিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজমে আর্থিক সম্ভাবনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সালেহ এলাহী কুটি, মৌলভীবাজার থেকে : হাওড়, পাহাড় ও সমতল ভূমির বিস্তীর্ণ জনপদ মৌলভীবাজার। চায়ের দেশ খ্যাত এ জেলায় ঐতিহ্যগতভাবে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির একাধিক নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। আর এসব নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে মনিপুরি সম্প্রদায়ের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারণকেন্দ্রিক কমিউনিটি ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এটি সিলেট বিভাগের প্রথম কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম। অনুসন্ধিৎসু মানুষ আহরণ করছে অন্য মনিপুরি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জ্ঞান। এরই ফলে মানুষে মানুষে বাড়ছে সম্প্রীতি, ভালোবাসা। বিকশিত হচ্ছে জ্ঞানের ভাণ্ডার। সম্প্রসারিত হচ্ছে সভ্যতা, বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ।
কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম বিশ্বের অনেক দেশে জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের তার প্রচলন শুরু হয়েছে মনিপুরি পল্লীতে। পর্যটকদের আকর্ষণ এক ভিন্ন ধারার এই পর্যটন সেবা। মনিপুরি কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম দেখতে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশিরা আসছেন। এর ফলে প্রত্যন্ত গ্রাম মনিপুরিপাড়া মাঝেরগাঁও-এর মনিপুরি জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে আর্থিকভাবে সচ্ছলতা এসেছে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল মাঝেরগাঁওয়ে মনিপুরি নৃত্বাত্তিক জনগোষ্ঠীর জাতিগত পর্যটনের সম্ভাবনার আলোকে মনিপুরি কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে ২০১৮ সালে। গ্রামীণ প্রকৃতিতে মনিপুরিদের দশটি বাড়িতে তাদের ব্যবহৃত স্বতন্ত্র জিনিসপত্র, ভেষজ গুণসম্পন্ন খাবারের মেন্যু, বাঁশের তৈরি কুটির শিল্প, তাঁতসহ বিভিন্ন উৎপাদিত পণ্য পর্যটকের আকর্ষণে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশিরা আসছেন। এতে পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবগাহনের বর্ণিল সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে একাত্ম হতে পারছেন। সেই সঙ্গে মনিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বুনন, গ্রামীণ কারুশিল্পসহ দৈনন্দিন যে কাজ করেন সেগুলোতে পর্যটকরা সম্পৃক্ত হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন।
পর্যটকরা জানান, মনিপুরি সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি, বাসস্থান কৃষি ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে জানার সুযোগ হয়েছে কমিউনিটি ট্যুরিজমে। কমিউনিটি ট্যুরিজম বিকশিত হলে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যাবে উল্লেখযোগ্য হারে। পর্যটকের সংখ্যা যত বাড়বে, স্থানীয়দের জীবনযাত্রার মান তত উন্নত হবে। একেবারে গ্রামীণ জনপদে শান্ত ছায়া নিবিড় গ্রাম মনিপুরি নৃ-গোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সময় কাটানো। পাওয়া যাবে এক অনন্য অনুভূতি।
ঢাকা থেকে আগত ভ্রমণপিপাসু মুর্শেদ হাসান কমিউনিটি ট্যুরিজম সম্পর্কে ভোরের কাগজকে বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং সংস্কৃতি জানার আগ্রহ রয়েছে। মনিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজমে সেই অজানাকে জানতে অনেক সহায়ক। বিশেষ করে পর্যটকদের বরণ আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে। সেই সঙ্গে খাবারের মেন্যু ও তাদের সংস্কৃতি পরিচিতির এক ভিন্ন আবহে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মনিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজমের কথা ফেস বুকের মাধ্যমে জেনে সুনামগঞ্জ থেকে আসার শিক্ষিকা ইসরাত জাহান উর্মি জানান, মনিপুরিদের নন্দন বৈচিত্র্যময় ধ্রæপদী নৃত্য ও এই ট্যুরিজম পর্যটকদের সহজে আকর্ষণ করবে। পর্যটকদের পরিবারের সদস্যের মতো করে নেয়াতে আমি তাদের রান্নাঘর থেকে শুরু করে সংস্কৃতি, বাসস্থান কৃষি ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে পেরেছি।
মনিপুরি ট্যুরিজমের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক নারী জানান, প্রায় ৩০ জন পর্যটক একসঙ্গে থাকতে পারেন। জনপ্রতি থাকার জন্য ১৯৫০ টাকা নেয়া হয়। প্রতিনিয়ত পর্যটকদের আগমনে মুখরিত থাকে পুরো গ্রাম। উপভোগ করেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ জীবনধারা। মনিপুরি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই তাঁতে কাপড় বুনন হয়ে থাকে। পর্যটকদের পরিবারের সদস্যের মতো গ্রহণ করে তাদের নিজস্ব খাবার, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরতে পারছেন। এতে আমাদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে।
এ ব্যাপারে মনিপুরি কমিউনিটি ট্যুরিজমের পরিচালক নিরঞ্জন সিংহ রাজু জানান- মনিপুরি জনগোষ্ঠীর শত শত বছর ধরে চলে আসা সামাজিক বৈচিত্র্যময় কালচারের সঙ্গে মিশে যাওয়ার এক অপূর্ব সুযোগ কমিউনিটি ট্যুরিজম। মনিপুরি পল্লী মাঝেরগাঁও গ্রামে দশটি বাড়িতে ও তাদের পরিবারের অংশগ্রহণে গড়ে তোলা হয়েছে কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম। পর্যটকদের নিরাপত্তা, খাবার, বাসস্থান, ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তার নিজ বাড়িতেই দুটি কক্ষে বিছানা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক আসবাপত্র রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ৪ জন থাকতে পারেন। এভাবেই ১০টি বাড়ি নিয়ে ট্যুরিজম বোর্ডের সহযোগিতায় প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া ভোরের কাগজকে বলেন, ট্যুরিজম খাত দেশের জিডিপিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। এই জেলার প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্র্য ও বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির জন্য আগের চেয়ে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে পর্যটকরা যাতে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন, তার জন্য জেলা পুলিশ সার্বিক তদারকি অব্যাহত রেখেছে।
বিদেশি ধ্যানধারণা থেকে সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব উদ্যোগে সুম্পূর্ণভাবে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ট্যুরিজমকে আরো সম্প্রসারিত করতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ভোরের কাগজকে বলেন, পর্যটন শিল্প বর্তমান সময়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। পর্যটন শিল্পে এক অপার সম্ভাবনার নাম মৌলভীবাজার। এ জেলায় প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্র্য অনন্য ও একক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
তিনি আরো বলেন, মনিপুরি পর্যটনে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগগুলোয় সমাজের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব হবে। টিলা কেটে প্রকৃতি ধ্বংস করে হোটেল-মোটেল তৈরি করে পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ করার চেয়ে কমিউনিটি ট্যুরিজমের উদ্যোগ নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়