সোনারগাঁওয়ে দলিল লিখককে হত্যা স্ত্রী আটক

আগের সংবাদ

জন্মদিনের শুভেচ্ছা : জননেত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার

পরের সংবাদ

ইডেনকাণ্ডে বিব্রত ছাত্রলীগ : মধ্যরাতে বহিষ্কার ১৬ নেত্রী > অনশনের ঘোষণা থেকে পিছু হটলেন বহিষ্কৃতরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুহাম্মদ রুহুল আমিন ও রাফিউজ্জামান লাবীব (ঢাবি প্রতিনিধি) : ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে বিব্রত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। টানা ২ দিন নানা ঘটনার পর রবিবার মধ্যরাতে কলেজ কমিটির সব ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়। বহিষ্কার করা হয় কমিটির ১২ নেত্রী ও ৪ কর্মীসহ মোট ১৬ জনকে। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা যায়। আর নিজেদের বহিষ্কার আদেশের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। বহিষ্কার প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের আশ্বাস ও হস্তক্ষেপে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন বহিষ্কৃতরা। এর মধ্য দিয়ে টানা দুই দিন কলেজ ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে চলা হামলা পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষের আপাত অবসান ঘটে।
জানা গেছে, গত ১৩ মে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হয়। তামান্না জেসমিন রিভাকে সভাপতি ও রাজিয়া সুলতানাকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষণার পর নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কয়েকজন সহসভাপতি- যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন। এরপর থেকেই ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। একটি পক্ষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ। আরেকটি পক্ষে বেশ কয়েকজন সহসভাপতিসহ একটি গ্রুপ। কমিটিকে না মানার ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করে বিরোধী গ্রুপটি। পরে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরও পরস্পরবিরোধী দুই গ্রুপের মধ্যে তেমন সমঝোতা হয়নি। শনিবার রাতে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন বিরোধী গ্রুপের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। তা নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের সঙ্গে জান্নাতের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যা পরবর্তীতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। শুরু হয় হামলা পাল্টা হামলা। এতে সভাপতিসহ ২৫ জন আহতের ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে গণমাধ্যমেও নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিরূপ মন্তব্য আসে ছাত্রলীগ নিয়ে। এতে বিব্রত হয়ে পড়েন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরাও। ফলে ঘটনার কারণ উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করে সংগঠনটি। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু দুই পক্ষের সংঘর্ষ এমন পর্যায়ে গেছে, উপায় না দেখে তদন্ত কমিটিকে বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই রবিবার গভীর রাতে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কেমিটি। সেইসঙ্গে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নেœর অভিযোগে ১২ নেত্রী ও ৪ কর্মীসহ মোট ১৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কারও করা হয়। বহিষ্কৃত ১২ নেত্রী হলেন- কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা ঊর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এসএম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া

আক্তার বৈশাখি।
নিজেদের বহিষ্কারের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার দুপুরে ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করেন বহিষ্কৃতরা। এতে লিখিত বক্তব্যে সদ্য বহিষ্কৃত সহসভাপতি সুষ্মিতা বাড়ৈ বলেন, কলেজ শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তাদের বহিষ্কার না করে আমাদের কেন বহিষ্কার করা হলো। কোন তদন্তের ভিত্তিতে এই প্রেস রিলিজ করা হলো? লিখিত বক্তব্যে বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেন, এই স্থায়ী বহিষ্কারের পেছনে কে বা কারা আছে এর সুষ্ঠু জবাব দিতে হবে। আমাদের কেন সরাসরি স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো, তাহলে কি কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের এই অন্যায়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করছে? তিনি বলেন, আমাদের গণহারে পদত্যাগের যে ফল আসতে পারে সেটাকে ফলপ্রসূ হতে দেবে না বলেই তারা কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই নির্দিষ্ট সংখ্যক নেত্রীকে বহিষ্কার করেছে।
এরপর তারা আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে গিয়ে অনশনের ঘোষণাও দেন। সাত আটজনের একটি দল পার্টি অফিসের ভেতরে প্রবেশ করে ঘণ্টাখানেক আলোচনা শেষে বের হয়ে আসেন। এ সময় তারা অনশন প্রত্যাহারের কথা বলেন। তবে কী কারণে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন, তা নিয়ে তাৎক্ষণিক মুখ খুলতে রাজি হননি কেউই। কলেজ শাখার বহিষ্কৃত সহসভাপতি সানজিদা পারভীন চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের একজন প্রতিনিধি আমাদের বলেছেন, নাছিম ভাই আমাদের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন এবং সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেবেন। এমন আশ্বাস পেয়ে আমরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসি। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি। কবে নাগাদ সেই আলোচনা হবে সেটি এখনো আমাদের জানানো হয়নি। আমরাও নতুন কোনো কর্মসূচিতে এখন যাচ্ছি না। তবে কোনো কিছু করলে জানানো হবে।
এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিলোত্তমা শিকদার ও বেনজির হোসেন নিশিকে সদস্য করে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন রবিবার বেলা ১১টায় জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারার সাংগঠনিক জবাব দেয়াসহ সাত দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিক্ষুব্ধ অংশটি। পরে বিকালে সভাপতি রিভা সংবাদ সম্মেলন করতে এলে দুগ্রুপের মধ্যে মারামারি লেগে যায়। এতে সভাপতি রিভাসহ দুই গ্রুপের গুরুতর আহত ১০ জনেরও বেশি। পরে ক্যাম্পাস থেকে সভাপতি রিভা ও সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া পুলিশি প্রটোকোলে বের হলে আনন্দ মিছিল করে বর্তমানে বহিষ্কৃত নেত্রীরা।
এসব বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান জয় ভোরের কাগজকে বলেন, ছাত্রলীগ একটা আদর্শ ও সাংগঠনিক নিয়মের মধ্যে পরিচালিত হয়। এই সংগঠনের কর্মীদের নিজেদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কেন্দ্রের দৃষ্টিতে তা আনা হলে সমাধান করা হয়ে থাকে। কিন্তু সেটা না করে শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে যারা সংগঠনকে বিতর্কিত করবে। বিরোধী পক্ষকে কথা বলার সুযোগ দেবে। দল ও সরকারকে বিব্রত করবে। তারা আর যাই হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ছাত্রলীগকে ধারণ করে না- এটা স্পষ্ট। আর এ ধরনের কর্মকাণ্ড আমরাও বরদাস্ত করব না। রবিবার ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের দুটি অংশের মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। আমরা গণমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজ শনাক্ত করে এবং আমাদের কেন্দ্র ঘোষিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কলেজ ছাত্রলীগের কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছি। সেইসঙ্গে বিশৃঙ্খলায় জড়িত কমিটির ১২ জনসহ আরো ৪ জন মোট ১৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের তদন্ত কার্যক্রম এখনো চলছে। এতে আরো জড়িত যাদের নাম পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভবিষ্যতে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদার ভোরের কাগজকে বলেন, ছাত্রলীগের একটা কলেজ শাখা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে যেভাবে অপমান ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে, উপস্থিত সাংবাদিকরাও তা দেখেছেন। আমরা তদন্ত করে ও ভিডিও ফুটেজ দেখেই কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক রিভা-রাজিয়ার বিভিন্ন অনিয়ম, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য ও হল দখল নিয়ে একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন জান্নাতুল ফেরদৌস। সাক্ষাৎকার দেয়ার দুদিন পর শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার সময়ে হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ করা হয়। এরপর থেকেই অস্থিরতা বিরাজ করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়