সোনারগাঁওয়ে দলিল লিখককে হত্যা স্ত্রী আটক

আগের সংবাদ

জন্মদিনের শুভেচ্ছা : জননেত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার

পরের সংবাদ

ইইউর নতুন দুঃশ্চিন্তা ইতালিতে মেলোনির উত্থান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দ্রুতগতিতে উত্থান। ইতালির রাজনীতিতে জর্জিয়া মেলোনির উত্থানকে রাজনৈতিক ভূমিকম্পের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ২০১২ সালে নতুন পার্টির জন্ম দিয়ে ৪৫ বছর বয়সের মেলোনি ইউরোপীয় রাজনীতি শুধু নয় বিশ্ব রাজনীতির নতুন আলোচনায় উঠে এসেছেন। বিশেষ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আর পশ্চিমের সঙ্গে হেলে থাকা ইউ জোটের নেতাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন এই নারী। সদ্য হয়ে যাওয়া নির্বাচনে চার মাস আগেও যে দল ইতালির ভোটের জরিপে মাত্র চার শতাংশ ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সেই দল এখন জয়লাভ করেছে মবং সরকার গঠনের দ্বারপ্রান্তে।
ডানপন্থি মেলোনি কি মুসোলিনির উত্তরসূরি : এর আগে তিনি সিলভিও বারলুসকোনির সরকারে সবচেয়ে কম বয়সের মন্ত্রী ছিলেন। তরুণ বয়সে নব্য নাৎসীবাদী আন্দোলনের যুব শাখায় যোগ দেন। মুসোলিনির সমর্থকরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিল। গত বছর তিনি নিজের এক বইতে দাবি করেন, তিনি ফ্যাসিস্ট নন। তবে নিজেকে তিনি মুসোলিনির উত্তরসূরিদের সঙ্গেই চিহ্নিত করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম সে দেশে কট্টর দক্ষিণপন্থি সরকার তৈরি হতে চলেছে। মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী যুগের পর এই প্রথম সে দেশে দক্ষিণপন্থি সরকার তৈরি হতে চলেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে সমীক্ষায়। মিস মেলোনির ব্রাদার্স অফ ইতালি পার্টি, যার ফ্যাসিবাদী শিকড় রয়েছে। মেলোনির পার্টির স্লোগান হলো, ‘গড, কান্ট্রি, ফ্যামিলি’ বা ‘ঈশ্বর, দেশ, পরিবার’। রোমে একটি বিজয়ী

বক্তৃতায়, তিনি বলেছেন, আমরা নিজেদের যে বড় লক্ষ্য স্থির করেছি তা হল যে ইতালীয়রা আবারো ইতালীয় হিসেবে গর্বিত হতে পারে এবং তেরঙা পতাকা ওড়াতে পারে। মেলোনি সমকামিতা নিয়ে পশ্চিমা ধারণার বিরোধী। তবে তিনি ইতালির সব মানুষের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করবেন না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। মেলোনি বলেন, ইতালির মানুষ স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, তারা এখন ডানপন্থি সরকার চায়। বিবিসি জানিয়েছে, ইতালির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডানপন্থি সরকারের নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন জর্জিয়া মেলোনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ডানপন্থি জোট ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে ইতালিতে।
ইস্যু হচ্ছে অভিবাসন : নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ইস্যু ছিল অভিবাসন এবং জীবনযাত্রার ব্যয়। তবে এর পাশাপাশি গর্ভপাত, এলজিবিটি অধিকার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বিষয় নিয়েও প্রচারণার ইস্যু। তিনি ‘এলজিবিটি লবি’র বিরুদ্ধে সোচ্চার এবং লিবিয়ার বিরুদ্ধে এক নৌ-অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে সেই পথে ইউরোপে কোনো অভিবাসী আসতে না পারে। এ ছাড়া অভিবাসন বন্ধে লিবিয়ায় নৌ অবরোধের পক্ষে অবস্থান ছিল তার। এছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন।
রাশিয়ার দিকে হেলে যাবে : ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। মেলোনির বিজয়ে দেশটি রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে কিনা, এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা। ভøাদিমির পুতিন ২০১৮ সালে চতুর্থ মেয়াদে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ওই সময় পুতিনকে অভিনন্দন জানাতে ইতালির কয়েকজন ডানপন্থি নেতাকে রীতিমতো তাড়াহুড়া করতে দেখা যায়। এবং পশ্চিম জুড়ে উদ্বেগ রয়েছে যে নতুন প্রশাসন রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে নরম অবস্থান নিতে পারে। মি. বারলুসকোনি এবং মি. সালভিনি উভয়েই দীর্ঘকাল ধরে ভøাদিমির পুতিনের চিয়ারলিডার ছিলেন। পরবর্তীতে নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে। রাশিয়ার গত নির্বাচনে পুতিনের জয়ে ব্রাদার্স অব ইতালি দলের প্রধান জর্জিয়া মেলোনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘রাশিয়ার এই নির্বাচন জনগণের ইচ্ছার দ্ব্যর্থহীন প্রতিফলন।’
ইউরোপে শঙ্কা : মেলোনি ইতালির উগ্র ডানপন্থি ব্রাদার্স অব ইতালি পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অন্য দুটি ডানপন্থি দল মাত্তেও সালভিনির লিগ ও সিলভিও বেরলুসকোনির ফোরজাকে নিয়ে জোট সরকার হতে যাচ্ছে। ডানপন্থিদের উত্থান নিয়ে ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। ইতালি ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সম্প্রতি সুইডেনের নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থিদের জয়ের পর ইতালিও ডানপন্থি সরকার পাচ্ছে। সেদিকে নজর রাখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইতালির এই নির্বাচনের দিকে ইউরোপের অনেক দেশই শঙ্কিত। অর্থ এবং শেয়ার বাজারেও বিরাজ করছে নানা ধরনের শঙ্কা। ইতালি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। ভিক্টর ওবানের নেতৃত্বে হাঙ্গেরি যেভাবে কট্টর ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নানা বিষয়ে বিরোধপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে, ইতালি সেই পথে হাঁটতে পারে, এমন আশঙ্কা করেন অনেকে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন বলেছেন, প্রয়োজন হলে ইতালিকে লাগাম দেওয়ার জন্য ইইউর ‘সরঞ্জাম’ প্রস্তুত করতে হবে। নতুন সরকার ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইতালিতে পৌঁছানোর চেষ্টাকারী অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেবে, যা ইইউ-এর সঙ্গে সংঘর্ষের কারণ হতে পারে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ইতালির প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন মারিও দ্রাঘি। জোট সরকার আস্থা হারাতেই তিনি পদত্যাগ করেন। এর পরই সে দেশে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর ইতালিতে নির্বাচন হয়েছে। আভাস মিলেছে, জর্জিয়া মেলোনির জোট পার্লামেন্টের উচ্চ ও নিম্নকক্ষ দুটিতেই পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়