সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীরীতি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, এখনো নিখোঁজ অন্তত ২৭ : মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা

পরের সংবাদ

বৈধ দোকানিদের উচ্ছেদের চেষ্টা : যশোরের মণিহার কমপ্লেক্সের ঐতিহ্য হারানোর আশঙ্কা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলমগীর কবীর, যশোর থেকে : মণিহার কমপ্লেক্সে থাকা বৈধ দোকানিদের অবৈধভাবে উচ্ছেদ করে দখলে নেয়ার চেষ্টাসহ সংঘবদ্ধ চক্রের নানামুখি হুমকির অভিযোগে থানায় একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের ২২ জুলাই স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হামলা ও চাঁদাবাজির জন্যই সিনেমা হলটি ২০ দিন বন্ধ রাখা হয়। যশোরের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে মনিহার সিনেমা হল। প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানোসহ বিদ্যমান সমস্যার সমাধান না হলে মনিহারের ঐতিহ্য হারানোর শঙ্কা স্থানীয়দের।
এ আশঙ্কার কারণ হিসেবে কমপ্লেক্সের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, যশোরের মণিহার কমপ্লেক্স মার্কেট থেকে বৈধ দোকান মালিকদের অবৈধভাবে উচ্ছেদ করার চেষ্টাসহ সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। চক্রটি দোকান ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একাধিক অভিযোগ দিয়েছেন। তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন।
থানায় দেয়া লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, খোদ এস ইসলাম এন্ড সন্স লিমিটেড ও মণিহারের প্রজেক্ট ম্যানেজার সাইদুল হকের মাধ্যমে লেনদেন করে দোকান নিয়ে ব্যবসা করলেও তারা এখন পথে পথে ঘুরছেন। ওই ব্যবসায়ীরা বৈধ পজিশন গ্রহিতা কিংবা তাদের ওয়ারিশগণের মাধ্যমে পজিশন কিনে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে পড়েছেন বিপদে। অনেক দোকানির ওপর চড়াও হচ্ছে একটি চক্র। মণিহার কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মিঠু, বারান্দী মোল্লাপাড়ার আব্দুর রশিদ, ঢাকা রোডের ফারুক, বেজপাড়া আনছার ক্যাম্প এলাকার তোফাজ্জেল হোসেন, শামীম হোসেন, ইমরান হোসেন, সিটি কলেজ পাড়ার হাবিবুল্লাহ বাবু, শক্তিসহ আরো ৫-৭ জনের একটি চক্র যথেচ্ছা আচরণ করে বৈধ ভোগদখলে থাকা ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে।
এ ঘটনায় নাজির শংকরপুরের পিয়ারী মোহন রোডের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে এবিএম কামরুজ্জামান পলাশ অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন, মণিহার কমপ্লেক্সের পূর্ব পাশের জিএফ ও ই ৩, ৪ ও ১৯ নাম্বার দোকান কেনা পজিশন হিসেবে তার নামে রয়েছে। এস ইসলামের কাছ থেকে প্রভাতী, সুফিয়া এবং হাফিজা নামে ৩ জন প্রথম পজিশন নেন। তাদের কাছ থেকে জীবদ্দশায় প্রয়াত সাংবাদিক এসএম হাবিবুল্লাহ হাবিব পজিশন কেনেন। তার মৃত্যুর পর ছেলে মেয়ের ভোগদখলীয় দোকান তিনটি পজিশন কিনে ব্যবসা করছিলেন কামরুজ্জামান পলাশ।
কিন্তু সম্প্রতি তাদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ওই ঘরের ভাড়াটিয়া ইমরান, শক্তি ও হাবিবুল্লাহ বাবু ওই তিনটি ঘর অবৈধ দখলের চেষ্টা করছে। ৩০ লাখ টাকায় প্রয়াত এসএম হাবিবুল্লাহর ছেলে আতিকুর রহমান ও মেয়ে হোসনে আরা মিনুর কাছ থেকে কেনেন পলাশ। কিন্তু গত ৭ সেপ্টেম্বর অবৈধভাবে দখল করে ওই চক্রটি।
একইসঙ্গে ওই চক্রের মধ্যে জিয়াউল ইসলাম মিঠু, রশিদসহ ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় আরো একটি অভিযোগ করেন মোখলেছুর রহমান নামে এক বৃদ্ধ দোকানি। তিনি বলেন, তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে মণিহার কমপ্লেক্স মার্কেটে পজিশন কিনে প্রথমে মহেশপুর নামে বইয়ের দোকান ও পরে মোবাইল ওয়ান নামে দোকান পরিচালনা করে আসছিলেন। দোকান নাম্বার জিএফই-৫।
মণিহারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল হক মিঠু, বাবা সিরাজুল ইসলাম মারা যাওয়ার পর ভাড়া আদায় করে আসছেন মোখলেছুরের কাছ থেকে। সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর ওই দোকানের ভাড়া প্রদান করেন মোখলেছুর রহমান। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায় জিয়াউল হক মিঠু মোখলেছুরের দোকানে অবৈধভাবে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ব্যাপারে তিনি যথাযথ বিচার দাবি করেন।
তিনি দাবি করেন, সব বৈধ কাগজপত্র তার হালনাগাদ রয়েছে। অথছ পেশি শক্তি খাটিয়ে যথেচ্ছা করেছেন চক্রটি।
এদিকে এবিএম কামরুজ্জমানের হালনাগাদ সব বৈধ কাগজপত্র, ভাড়ার রশিদ, পজিশন কেনার ৩০ লাখ টাকার কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তাকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র চলছে। তিনিসহ বহু দোকানিকে হুমকি দেয়া

হচ্ছে বলেও তার অভিযোগ। এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অসমর্থিত একটি সূত্রে জানা গেছে, সরকার কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনার ৩ কোটি টাকা গ্রহণ শেষে মণিহার কর্তৃপক্ষ যশোরের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি গুটিয়ে নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালের ৮ ডিসেম্বর এটি প্রতিষ্ঠিত হয় মণিহার। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই সিনেমা হলটি খ্যাতি অর্জণ করে। জাপান, কোরিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশ থেকে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা মণিহারে আসতেন চলচ্চিত্র দেখার জন্য। বাংলাদেশি চলচ্চিত্র শিল্পে মণিহার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। এর নকশা করেন কাজী মোহাম্মদ হানিফ। উদ্বোধনের পর মণিহারে প্রথম প্রদর্শিত হয় দেওয়ান নজরুল পরিচালিত সোহেল রানা ও সুচরিতা অভিনীত চলচ্চিত্র জনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়