সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীরীতি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, এখনো নিখোঁজ অন্তত ২৭ : মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা

পরের সংবাদ

পিবিআই প্রধানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে বাবুলের মামলার আবেদন খারিজ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন চট্টগ্রামের আদালত। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ সংস্থাটির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনি মামলার আবেদন করেছিলেন। গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছা বেগমের আদালত এই আদেশ দেন। এছাড়া বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে ২০০ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ এবং ফেনী কারাগারের কক্ষে তল্লাশির অভিযোগে নিরাপত্তা চেয়ে করা পৃথক দুটি আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন একই আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি চট্টগ্রাম মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাবুল আক্তার তিনটি পিটিশন দাখিল করেছিলেন। মূল পিটিশন হচ্ছে ছয়জন পিবিআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন। আদালত সেটা খারিজ করে দিয়েছেন। বাকি দু’টি সাব-পিটিশন। একটি হচ্ছে বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে ২০০ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ, আরেকটি ফেনী কারাগারের জেল সুপারকে বন্দি বাবুল আক্তারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আদেশ। দুটি আবেদনই আদালত নামঞ্জুর করেছেন। হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন, ২০১৩ এর ১২ ধারায় বাবুল আক্তার মামলার আবেদনটি করেন। এই ধারায় বলা হয়েছে, এ আইনের অধীনে করা কোনো অপরাধ, যুদ্ধাবস্থা, যুদ্ধের হুমকি, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অথবা জরুরি অবস্থায় অথবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সরকারি কর্তৃপক্ষের আদেশে করা হইয়াছে, এরূপ অজুহাত অগ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, বাবুল আক্তার সাবেক পুলিশ সুপার। তাকে একজন পরিদর্শক নির্যাতন করার কোনো সুযোগ নেই। প্রায় ১ বছর ৫ মাস পরে এসে তিনি অভিযোগ করেছেন। বাবুল আক্তারকে এর আগে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছিল, তখন অভিযোগ করেননি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আদালতে জামিন আবেদন করেছেন, তখনো কোনো আদালতে অভিযোগ করেননি।
আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন, সাবেক এসপি বাবুল আক্তার পরিস্কারভাবে অভিযোগ করেছেন- পিবিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে রিমান্ডে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন। বাবুল আক্তার স্ত্রী মিতু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি। আদালতের কাছে এটি পরিস্কার হয়েছে যে, মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলা থেকে নিজেকে রক্ষার চেষ্টায় তিনি কতগুলো অভিযোগ সৃজন করেছেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। আদেশে আরো বলা হয়, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন, ২০১৩ এর ১১ ধারা অনুযায়ী বাবুল আক্তারের মামলার আবেদন গ্রহণের বিষয়ে বিবেচ্য কিছুই পাওয়া যায়নি। ফলে এটি গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। একই আইনের ভিত্তিতে ২০০ ধারায় বাবুল আক্তারের জবানবন্দি গ্রহণেরও কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার তাকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে গত ৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে আইনজীবীরা আবেদনটি করেন। একইসঙ্গে বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে জবানবন্দি নেয়ারও আবেদন সংযুক্ত করেন। মামলার আবেদনে বিবাদী করা হয়েছিল পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, পিবিআই’র মেট্রোর ইনচার্জ পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা, পিবিআই’র তৎকালীন পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা, এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম ও কাজী এনায়েত কবির। আদালত ১৯ সেপ্টেম্বর আদেশের তারিখ ধার্য করেন। কিন্তু সেদিন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ছুটিতে থাকায় ২৫ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য তারিখ ধার্য ছিল।

এরপর ১২ সেপ্টেম্বর একই আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে তার আইনজীবী আরেকটি আবেদন দাখিল করে অভিযোগ করেন, ১০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ফেনী মডেল থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ফেনী কারাগারে প্রবেশ করে বাবুল আক্তারের কক্ষে দীর্ঘসময় ধরে তল্লাশি চালান। হেফাজতে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে বাবুল আক্তার যে ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন, তাদের নির্দেশে ও প্ররোচনায় এ তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে তার অভিযোগ। আবেদনে ওসির প্রবেশের তদন্ত এবং বাবুলের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ফেনীর জেলা সুপারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত , গত ১৩ সেপ্টেম্বর মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরো যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত বিদেশি নাগরিক এক নারীর সঙ্গে বাবুলের পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এর জেরে বাবুল আক্তার স্ত্রীকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন। তিন লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করে স্ত্রীকে খুন করায় বাবুল। নিজেকে আড়ালে রাখতে প্রচার করেন- জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল আক্তার। পরদিন ৬ জুন পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন বাবুল। পাঁচলাইশ থানা পুলিশের পর নগর গোয়েন্দা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে। তারা প্রায় তিন বছর তদন্ত করেও অভিযোগপত্র দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের ভার পায় পিবিআই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়