সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীরীতি রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০, এখনো নিখোঁজ অন্তত ২৭ : মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনরা

পরের সংবাদ

ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুগ্রুপে আধিপত্যের লড়াই

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** সংঘর্ষে আহত ২৫ ** হাসপাতালে ভর্তি সভাপতি রিভা ** বিদ্রোহীদের ৭ দাবি **
রাফিউজ্জামান লাবীব, ঢাবি প্রতিনিধি : আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। একটি গ্রুপে কলেজ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কমিটির একটি অংশ। অন্য গ্রুপে কমিটির বেশ কয়েকজন সহসভাপতিসহ মোট ২৫ জনের একটা অংশ। ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার রাতে। ওইদিন রাতে কলেজ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কথা বলেন সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। তার অভিযোগ, চাঁদাবাজি আর সিট বাণিজ্যের রাজনীতির হোতা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জান্নাতকে মারধর করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। গত শনিবার এর প্রতিবাদ জানান জান্নাতের সঙ্গে থাকা একই কমিটির ২৫ জন নেত্রী। তারা সবাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ফলে রাতেই দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সহসভাপতি তিলোত্তমা শিকদার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি এই কমিটির সদস্য। কমিটিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে কলেজ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে কেন্দ্র ঘোষিত তদন্ত কমিটিকেও প্রত্যাখান করেছে বিদ্রোহী অংশটি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) ইডেন মহিলা কলেজে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছিল।
জানা গেছে, চাঁদাবাজি ও সিট রাজনীতি নিয়ে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কথা বলেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। এর জেরে রাতেই জান্নাত ও তার অনুসারীদের মারধর করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। রাত থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। গতকাল রবিবার সকাল থেকে জান্নাতের অনুসারী ২৫ জন নেত্রী

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তারা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।
এরপর বিকালে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন ডাকেন সভাপতি রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া। বিকাল ৫টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হলে তাতে হামলা করে বিদ্রোহী গ্রুপটি। এতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষই। বিদ্রোহীদের হামলায় আহত সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সংঘর্ষে মোট ২৫ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। গুরুতর অবস্থায় ৭ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কলেজের ভেতরে অবস্থান নেয় বিদ্রোহী গ্রুপটি। তারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ক্যাম্পাস থেকে বের না করা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আর সভাপতি-সম্পাদকের গ্রুপের অংশটিও বিরোধী গ্রুপটিকে ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। কলেজের দুই নম্বর গেইটের সামনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন বিরোধীরা। তারা ‘রিভা-রাজিয়া, মানি না, মানবো না’, ‘রিভা-রাজিয়ার বহিষ্কার চাই, করতে হবে’, ‘রিভা-রাজিয়ার ঠিকানা, ইডেনে হবে না’, ‘রিভা-রাজিয়া, ইডেন কলেজের লজ্জা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ সময় সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দায়িত্বে আসার পর থেকেই কলেজ ছাত্রলীগের একটা মহল আমাদের বিপক্ষে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
এদিকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তামান্না জেসমিন রিভা আহত হলে তাকে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসে কলেজ প্রশাসন। কিন্তু বিদ্রোহীরা অ্যাম্বুলেন্সকে বাধা দেয়। তাদের দাবি, সহানুভূতি পাওয়ার জন্যই রিভা এই পন্থা বেছে নিয়েছে। তবে প্রশাসনের সহায়তায় পরে রিভাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় বিরোধী গ্রুপের সানজিদা পারভীন চৌধুরী বলেন, আমরা এ রকম সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাই না। যারা ক্যাম্পাসে অরাজকতা করে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে, এমনকি যারা সহকর্মীদেরও হামলা করে। আমরা তাদের কাছে আদৌ নিরাপদ না।
তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছি। কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে লাগাতার আন্দোলন চলবে। একই গ্রুপের সামিয়া আক্তার বৈশাখী বলেন, এমন দুর্নীতিবাজ প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে রাখবো না। মূলত তাদের অপকর্মের প্রতিবাদে আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। আমরা যদি দুই-তিনজন এখানে আসতাম তাহলে এটা বলতে পারতেন প্রতিহিংসা করে আন্দোলন করছি। কিন্তু এখানে অর্ধেকেরও বেশি নেত্রী সমবেত হয়েছি। আমরা প্রত্যেকেই তাদের অত্যাচারের শিকার। আমরা কয়েকজন মিলে আড্ডা দিলেও সেটাকে তারা অন্য খাতে নিয়ে যায়। আমরা নাকি সংগঠনবিরোধী। আমরা নাকি জামায়াত-শিবির করি।
তিনি আরো বলেন, আমরা তাদের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) বলেছিলাম, গতকালের ভিকটিমকে নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করতে। কিন্তু তারা সেটা করেনি। কারণ ভিকটিমকে নিয়ে বসলে তারা তো ফেঁসে যাবে। এ কারণে তারা কৌশলে তাদের জুনিয়রদের বলে রেখেছে ঝামেলা বাঁধানোর জন্য। তারা এ পর্যন্ত আমাদের দুইজন সহকর্মীর ওপর হাত তুলেছে। আমরা ধীরে ধীরে সবাই হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছি।
এদিকে সভাপতি ও সেক্রেটারি গ্রুপের একাধিক সদস্য বলছেন, এই আন্দোলনের পেছনে উসকানিদাতা হিসেবে ইডেনের সাবেক নেত্রী নিঝুম ও ইতির ইন্ধন রয়েছে। এ ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। পরবর্তী সময়ে তাকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে একাধিকবার ফোন করা হলেও, তারা তা রিসিভ করেননি।
এর আগে গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জান্নাতুল ফেরদৌসকে মারধর ও হেনস্তার ঘটনায় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া না হলে গণপদত্যাগের ঘোষণা দেয় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ নেত্রী। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা সাতটি দাবি জানান। ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি মার্জানা ঊর্মি দাবিগুলো পড়ে শোনান। দাবিগুলো হলো- প্রথমত; জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর হামলার সাংগঠনিক জবাব, দ্বিতীয়ত; সাধারণ শিক্ষার্থীদের হেনস্তার সুষ্ঠু বিচার চাই, ক্যাম্পাসের সব সিসিটিভি ফুটেজ লোকানোর চেষ্টা করা যাবে না, তৃতীয়ত; অধ্যক্ষকে নিয়ে কটাক্ষ করার জবাব, চতুর্থত; একচেটিয়া রাজনীতি এবং চাঁদাবাজির রাজনীতি বন্ধ করা, পঞ্চমত; প্রতিটি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা নেয়া, ষষ্ঠত; গণহারের প্রায় শতাধিক রুম দখলের হিসাব দেয়া এবং সপ্তমত; জান্নাতুল ফেরদৌসের যেসব অশ্লীল ছবি তোলা হয়েছে তা সবার সামনে ডিলিট করতে হবে সেইসঙ্গে তার সব জিনিসপত্র ফেরত দিতে হবে।
শনিবার রাতে মারধরের ঘটনায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঘটনার বিচার না হলে আত্মহত্যা করবেন উল্লেখ করে আহত জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমার রুম থেকে ওরা আমার মোবাইল, ল্যাপটপ ও কিছু টাকা নিয়ে গেছে। আমি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত এই ঘটনার বিচার করা হোক। না হলে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হব। ছাত্রলীগ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আমরা সেটাকে মানি না। কেননা, সেটা একপক্ষীয় কমিটি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়