সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে ১৪ দল

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

পরের সংবাদ

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাস : গণধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি দুই বছরেও

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, সিলেট ব্যুরো : সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার ২ বছর পূর্ণ হলো আজ। তবে এখনো শুরু হয়নি বর্বরোচিত সেই ঘটনার সাক্ষ্যগ্রহণ। মামলার বিচার কার্যক্রম কী কারণে থমকে আছে- এ প্রশ্ন সচেতন মহলের।
বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান এডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, গত বছর ধর্ষণ মামলার ও গত মে মাসে চাঁদাবাজির মামলার অভিযোগ গঠন করা হলেও আজো কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার চেয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছেন। উচ্চ আদালত এর মধ্যে সংক্ষিপ্ত আদেশও দিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি পাওয়ার পর মামলার ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করা হবে। আমরা ন্যায় বিচার চাই।
ভয়ঙ্কর সেই সন্ধ্যার কথা মনে হলে গা শিউরে ওঠে! ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, দিনটি ছিল শুক্রবার। এদিন বিকালে দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের ২৪ বছর বয়সী এক যুবক তার ১৯ বছর বয়সী নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে প্রাইভেটকারে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান। এর আগে শাহপরাণ (রহ.) মাজারও ঘুরে আসেন তারা। সন্ধ্যার পরে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে তারা থামেন। এ সময় কয়েক যুবক তাদের ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ দুজনকে জোরপূর্বক জিম্মি করে কলেজের ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে স্বামীকে আটকে রেখে ছাত্রাবাসের ৭নং ব্লকের ৫ তলা বিল্ডিংয়ের সামনে প্রাইভেটকারের মধ্যেই স্ত্রীকে ধর্ষণ করে। তাদের সঙ্গে থাকা টাকা, স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আটকে রাখে তাদের প্রাইভেটকার। পরে ছাত্রাবাস থেকে টিলাগড় পয়েন্টে এসে যুবকটি পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ আসতে বেশ দেরি করে। এ সুযোগে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। পুলিশ পরে নির্যাতিতাকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করে। ওই রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ৩-৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন। শাহপরাণ থানার মামলা নং-২১। তারিখ-২৬/০৯/২০২১।
দেশের অন্যতম পুরনো বিদ্যাপীঠ সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী তুমুল আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে সরকার ধর্ষণের সাজার আইনের পরিবর্তন করে মৃত্যুদণ্ডের ঘোষণা দেয়। ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে জাতীয় সংসদে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল ২০২০ পাস হয়।
সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট রাশিদা সাঈদা খানম বলেন, আমরা সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সবসময়ই প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু বাদী এ ট্রাইব্যুনাল থেকে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যেতে চান। তিনি উচ্চ আদালতে একটি রিটও করেছেন। উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি এখনো আমরা পাইনি। এ জন্য আপাতত এ ট্রাইব্যুনালে মামলার কার্যক্রম এভাবেই চলছে। উচ্চ আদালতের আদেশের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আদালত কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন ঠিক। বাদীপক্ষ এরমধ্যে এ সংক্রান্ত

বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়েছেন। তবে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ আদেশের কপি বাদীপক্ষের হাতে এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
সূত্র জানায়, সাক্ষ্য কেন শুরু করা হয় না মর্মে রাষ্ট্রপক্ষকে গত ২১ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিস দেন সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক। গত ১৮ সেপ্টেম্বর রবিবার মামলার সর্বশেষ ধার্য তারিখের জবাব দেয়া হয়নি। এদিন কোনো আসামিকেও এজলাসে তোলা হয়নি বলে বাদী পক্ষ জানিয়েছে। আগামী ১৬ অক্টোবর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার চান্দাইপাড়ার তাহিদ মিয়ার পুত্র সাইফুর রহমান (২৮), হবিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বাগুনীপাড়ার শাহ জাহাঙ্গীর মিয়ার পুত্র শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার উমেদনগরের মৃত রফিকুল ইসলামের পুত্র তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), জকিগঞ্জের আটগ্রামের মৃত অমলেন্দু লস্কর ওরফে কানু লস্করের পুত্র অর্জুন লস্কর (২৬), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুরের দেলোয়ার হোসেনের পুত্র রবিউল ইসলাম (২৫), কানাইঘাট উপজেলার লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) সালিক আহমদের পুত্র মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), সিলেট নগরীর গোলাপবাগ আবাসিক এলাকার (বাসা নং-৭৬) মৃত সোনা মিয়ার পুত্র আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল (২৬) ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নটেশ্বর গ্রামের মৃত ফয়জুল ইসলামের পুত্র মিজবাউল ইসলাম রাজনের (২৭) নামে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পুলিশ। এতে ৫২ জনকে সাক্ষী রাখা হয়। ঘটনার মাত্র ২ মাস ৮ দিন পর ১৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেয়া হয়।
গ্রেপ্তারের পর ৮ আসামির সবাই অকপটে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আসামিদের মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, মিজবাহুল ইসলাম রাজন ও আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল সরাসরি ধর্ষণ করে। রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম ধর্ষণে সহযোগিতা করে। ৮ আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপে সক্রিয় ছিল। বর্তমানে তাদের সবাই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়