সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে ১৪ দল

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

পরের সংবাদ

মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষ শুরু আজ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দশপ্রহরণধারিণী, অসুর বিনাশিনী, অভয়া শক্তি, বলপ্রদায়িনী দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন- এই বার্তা জানান দেয়ার দিন মহালয়া আজ রবিবার। পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু। ভোরে চণ্ডীপাঠ, মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে মহালয়া। মহালয়া মানেই দুর্গাপূজার দিন গোনা শুরু হয়ে যাওয়া।
মহালয়া কথাটির বিশেষ অর্থ রয়েছে। পিতৃপক্ষের অবসান বা দেবীপক্ষের পূর্ববর্তী অবস্থাকে বলা হয় মহালয়া। এই ব্যাপারে অবশ্য মতান্তর রয়েছে। ‘মহ’ শব্দটির অর্থ ‘পূজা’, আবার ‘মহ’ বলতে উৎসবও বোঝায়। এছাড়া মহালয়া বলতে বোঝা যায় ‘মহান’ ও ‘আলয়’ নিয়ে মহালয়া। এর সঙ্গে ‘আ’ যোগ করে পূজার ‘আলয়’। ‘আলয়’ শব্দের অর্থ ‘আশ্রয়’। আবার মহালয় বলতে বোঝা যায় পিতৃলোককে, যেখানে স্বর্গত পিতৃপুরুষদের অবস্থান।
সনাতন ধর্মে বলা হয়, দেবীপক্ষকে বলা হয় সবচেয়ে শুভ দিন। এ সময় সব ধরনের শুভ কাজ সম্পন্ন করা যায়। মহালয়ার ভোরবেলা থেকেই শুরু হবে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করা। সনাতন ধর্মে বলা হয়, পিতৃপক্ষে প্রয়াত আত্মারা স্বর্গ থেকে মর্ত্যলোকে আসেন। মৃত আত্মীয়-পরিজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন অনেকে। পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশে জল-তিল-অন্ন উৎসর্গ করে তর্পণ করা হয়। পুরাণে আছে; অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। চারদিকে অশুভের প্রতাপ। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হলেন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। পুরাণমতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি এই পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজাও বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার আগে শ্রী রামচন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। তাই শরৎকালের এই পূজাকে হিন্দুমতে অকালবোধনও বলা হয়। ধর্মমতে, এই দিনে দেব-দেবীরা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। মহালয়ার দিন ভোরে মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন জানানো হয়।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, ১ অক্টোবর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ২ অক্টোবর সপ্তমী, ৩ অক্টোবর অষ্টমী, ৪ অক্টোবর নবমী এবং ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী।
দেবী ভাগবত পুরাণ অনুসারে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আসা এবং কৈলাশে ফিরে যাওয়ার জন্য যে বাহনের ব্যবহার করেন তার বিচার করেই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কেমন হতে চলেছে তা বোঝা যায়। এক্ষত্রে ৪টি বাহনে দেবী দুর্গা পৃথিবীতে আসেন এবং যান। বাহনগুলো হলো- গজ (হাতি), ঘোটক (ঘোড়া), দোলা (পালকি) ও নৌকা। গজের পিঠে আসা ও ফেরা সবসময়ই শুভ বলে বিবেচনা করা হয়। মনে করা হয় আগামী দিনে পৃথিবী হয়ে উঠবে শস্যশ্যামল। দোলায় হলে তা অশুভ ইঙ্গিত দেয়। দোলা বহন করেন ৪ জন মানুষ। এর অর্থ হলো মানুষ একজোট না থাকলে খারাপ সময় পেরনো অসম্ভব হবে। এর অর্থ খরা, মহামারি অপেক্ষা করে আছে আগামী দিনে। ঘোটকে আসা খুব একটা শুভ নয়। এর অর্থ হল বিপদ ও ধ্বংস বাড়বে। এই ঘোড়া রাজায় রাজায় যুদ্ধ হওয়ার প্রতীক। অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেয় ঘোড়া। রাজনৈতিক ক্ষেত্র ও সামাজিক ক্ষেত্রে অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়। আর নৌকায় হলে তা ইচ্ছা পূরণের ইঙ্গিত দেয়। এর অর্থ হলো পৃথিবীতে শস্যের কোনো অভাব হবে না। একইসঙ্গে বন্যা হওয়ারও ইশারা করে এই বাহন।
সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসবেন গজে চড়ে। আর দেবী সপরিবারে স্বর্গালোকে বিদায় নেবেন নৌকায় চড়ে।
মহালয়া উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দির ও পূজা কমিটি নানা কর্মসূচি পালন করবে। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে, ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দির, হবিগঞ্জের বাহুবলের জয়পুর শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর মামার বাড়ি শ্রী শ্রী শচী অঙ্গন ধামসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভোর থেকেই শুরু হবে চণ্ডীপাঠ, চণ্ডীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়