সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে ১৪ দল

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

পরের সংবাদ

পূজা উদযাপন পরিষদ নেতারা : পূজা বাড়লেও শঙ্কামুক্ত নয় এবারের দুর্গোৎসব

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : এবারো নিরাপদে দুর্গাপূজা করা যাবে বলে মনে করে না বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও দেশজুড়ে ৫০টি পূজামণ্ডপ বেড়ে মোট পূজারমণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টিতে। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। প্রসঙ্গত, আগামী ১ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে ৫ অক্টোবর দশমী তিথিতে প্রতিমা নিরঞ্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গাপূজা।
মতবিনিময় সভায় স্বাধীনভাবে ধর্মাচরণ করতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক বলেন, এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা শঙ্কামুক্ত নয়। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে আমরা সচেতন। সর্বোচ্চ সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গ্রামে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে অস্থায়ী মন্দিরগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। স্থায়ী জায়গায় না হয়ে মাঠে, ময়দানে বা বিভিন্ন রাস্তাঘাটে যেসব মণ্ডপ স্থাপন করা হয়, সেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে আমাদের বেশি বেশি পাহারা দিতে হবে এবং সারারাত বসে থাকতে হবে। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক বেশি সক্রিয়। আমাদের সঙ্গে

সভা, এমনকি অন্যান্য বছর যারা সাবধানতা অবলম্বন করেননি, তারাও আমাদের সঙ্গে সভা করছেন। তবে এ ব্যবস্থাপনায় এত মন্দির সুরক্ষা দেয়া কঠিন জানিয়ে জে এল ভৌমিক আরো বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন দুই লাখের বেশি আনসার সদস্য লাগবে। এর জন্য বরাদ্দও সরকারকে দিতে হয়। আইন প্রয়োগকারী সদস্যের সংখ্যা বাড়ানো কঠিন হবে এবং এভাবে রক্ষা করা যাবে না। আমরা প্রতিটি মন্দিরে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছি; অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
জে এল ভৌমিক আগামী নির্বাচনের আগেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই বার বার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের কথা বলা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই এটা করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, এমন একটি আইন করতে হবে, যেমন এসিড নিক্ষেপ হতো বাংলাদেশে, সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করে স্পেশাল আইন করার ফলে কিন্তু এটা একেবারেই কমে গেছে। আমাদের জন্যও এমন একটি আইন করতে হবে, যারা অপরাধী তাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে এবং স্পেশাল আদালতে কম সময়ের মধ্যে বিচার করতে হবে।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার জানান, গত বছর সারাদেশে দুর্গাপূজার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি। এবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ১৬৮টি। ঢাকা মহানগরে পূজার সংখ্যা ২৪১টি, যা গত বছরের থেকে ৬টি বেশি। এখন পর্যন্ত দেশের কয়েকটি স্থানে ১২ থেকে ১৩টি মন্দিরে ভাঙচুর ও হামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আসার পর প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে পূজার সংখ্যা বাড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শুভানুধ্যায়ীদের অনুদান নিঃসন্দেহে পূজার সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। পূজার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিশ্চয়ই আনন্দদায়ক। তবে আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে ঈদ-পূজা-বড়দিন-বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও সার্বজনীন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘেœ, অসা¤প্রদায়িক পরিবেশে, কোনো ধরনের ভয়ভীতি এবং পুলিশি পাহারা ব্যতিরেকে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো বলেন, ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি। দুর্গাপূজা চলাকালীন সময়ে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেয়া, দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় স্কুল, কলেজ, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা না নেয়া এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া। পরিষদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে দুর্গাপূজায় ২ দিনের ছুটি ঘোষণা, অন্যান্য জাতীয় উৎসবের মতো দুর্গাপূজাও জাতীয় মর্যাদায় পালনের উদ্যোগ নেয়া, কারাগার, হাসপাতাল, অনাথ আশ্রমে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়নে সা¤প্রতিক সময়ে সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগের দ্রুত বাস্তবায়ন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি ফেরত প্রদানে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন এবং সা¤প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া এবং দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রæতি সরকারের এই মেয়াদে বাস্তবায়ন করা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পরিবর্তে হিন্দু ফাউন্ডেশন গঠন করা, প্রতিটি জেলায় একটি করে মডেল মন্দির কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা, টোল সংস্কার ও টোল শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ধার্য করা এবং ২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময়ে সংগঠিত সহিংসতাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে দেশব্যাপী হিন্দু স¤প্রদায়ের বাড়ি-ঘর, মন্দিরে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার তদন্ত ও দ্রুত বিচার করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়