সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে ১৪ দল

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

পরের সংবাদ

তুমব্রু সীমান্তে আতঙ্কে এলাকাবাসী : যুদ্ধবিমান থেকে পাহাড়ে গোলা ছুড়ছে মিয়ানমার বাহিনী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) থেকে : আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে। গতকালও মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে সীমান্তের পাহাড়ে দিকে গোলা ছুড়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী। এতে ফের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকার বাজার

পাড়ার লোকজন যুদ্ধবিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ দেখতে পায়। এছাড়া গতকাল শনিবার সকালেও থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান তুমব্রুর বাসিন্দারা।
তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি সীমান্ত পয়েন্টের বিপরীতে মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান গোলা ছুড়ে সে দেশের বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে। শুক্রবার রাত পৌনে ১১টায় এ গোলা বর্ষণ করে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। স্থানীয় লোকজনের দাবি রাত নামলেই শুরু হয় মায়ানমার বাহিনীর তাণ্ডব। সেই শেলের শব্দে তুমব্রু উত্তর পাড়ার নুর আহমেদের বাড়িসহ কয়েকটি বাড়ি ফাটল ধরে যায়।
তুমব্রু বাজারের ব্যবসায়ী বদিউল আলম ও আবদুল কাদের বলেন, প্রতিদিন নতুন নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে পরিবেশ জটিল করছে। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাত পৌনে ১১টায় রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলার উত্তরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পিলার ৩৭, ৩৮, ৩৯ এলাকায় মিয়ানমার বিমান বাহিনীর দুটি যুদ্ধবিমান থেকে ভারি অস্ত্রের গোলা বর্ষণ করা হয় সে দেশে। এর একটি বিমান মিয়ানমার থেকে এসে তুমব্রু পয়েন্টের জিরো লাইনের সোজা উপর দিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়। আর মর্টার শেলের গোলা বর্ষণ করে। এতে তুমব্রু বাজার, কোনার পাড়া, মধ্যম পাড়া ও উত্তর পাড়ার বসতিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এ ঘটনায় মিয়ানমারের ভেতরে হতাহতের কোনো খবর জানা যায়নি।
এছাড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে টহলরত মাঠ পর্যায়ের একজন বিজিবি কর্মকর্তা জানান, গতকাল শনিবার সকাল ৭টার দিকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৪০/৪১ সীমান্ত পিলার এলাকায় টহল দেয় এবং গোলা নিক্ষেপ করে। তুমব্রু বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির কমিটির সভাপতি রুপলা ধর জানান, মিয়ানমার সীমান্ত ঘেষা তুমব্রুর ওপারের ক্যাম্প থেকে গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় সে দেশের অভ্যন্তরে একটি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। এ বিষয়ে বিজিবির বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, যুদ্ধবিমান জিরো পয়েন্ট দিয়ে রাতের বেলা কয়েকটি গোলা নিক্ষেপ করে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। তবে এতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর তিনি পাননি।
তবে চাকমা ও তঞ্চঙ্গা নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন আতঙ্কে আছেন। বাইশফাঁড়ি ও উত্তরপাড়া থেকে পরীক্ষার কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়া অংপ্রæ তংচঙ্গা, আয়সা বেগম ও শারমিন আক্তার বলেন, তারা ভয়ে ভয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। কেননা রাতে পড়ার সময় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে গোলার শব্দ তাদের আতংকিত করলেও কিছুটা সহনীয় ছিল। কেননা বাড়ির সবাই পাশে ছিল। কিন্তু সকালে গোলাগুলির আওয়াজ ভেদ করে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় অনেক ভয় তাদের তাড়া করে।
তুমব্রু কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মৌলানা নুরুল আজিম বলেন, শুক্রবার সকালে গোলার আওয়াজে তার এবং মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তার মসজিদটি তুমব্রু সীমান্তের খুবই কাছে। এদিকে, নোম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, আজকেও (শনিবার ) বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুলির শব্দ পাওয়া যায়। আসলে এ ‘গুলিখেলার’ শেষ কবে হবে, তার কোনো হিসাব নেই। আমাদের শিবিরের শিশু ও নারীরা ভয়ে থাকে। আর আমরা গোলাগুলির শব্দ শুনতে শুনতে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।
নোম্যানস ল্যান্ডে দায়িত্বে থাকা বিজিবির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করে জানান, সীমান্তের অবস্থা খারাপ। এখানে লোকজনের চলাচলে সতর্ক করা হয়েছে। জরুরি কাজ না থাকলে এখানকার লোকজনকে ঘোরাফেরা না করতে বলা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়