সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে ১৪ দল

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

পরের সংবাদ

একদিনে ৪ জনের মৃত্যু : করোনার ষষ্ঠ ঢেউয়ের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : দীর্ঘ সময় নিয়ন্ত্রণে থাকার পর আগস্টের শেষ দিক থেকে করোনার সংক্রমণ আবারো বাড়ছে। এবার তা বাড়ছে দ্রুত হারে। সংক্রমণের হার কিছুদিন আগে ১ শতাংশে নেমে এলেও তা এখন ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় এই হার ছিল ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ। আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। দ্রুত সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি নতুন করে আবার ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে।
রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, দেশে এখন সংক্রমণের ষষ্ঠ ঢেউ চলছে। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর এ পর্যন্ত যতটি ঢেউ এসেছে, এক একটি ঢেউয়ের মধ্যে ব্যবধান ছিল ২ থেকে ৩ মাসেরও বেশি সময়। কিন্তু পঞ্চম ও ষষ্ঠ ঢেউ শুরুর মধ্যে এই ব্যবধান ছিল খুবই কম। এক মাসের মধ্যেই নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। রোগতত্ত্ববিদদের একটি অংশ বলছে, করোনার সংক্রমণ একেবারে শেষ হয়ে যাবে না। তবে এর উপসর্গের তীব্রতা কমে আসবে বলে আশা করা যায়। তারা ধারণা করছেন, করোনা অনেকটা মৌসুমি জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হয়ে পড়বে।
করোনার সংক্রমণ কেন বাড়ছে সম্প্রতি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর এক গবেষণা তথ্য বলছে, করোনার ওমিক্রন ধরনের নতুন দুটি উপধরনের কারণে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। এদিকে জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে চরম উদাসিনতা দেখা যাচ্ছে। সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের গণজমায়েত চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি এখন যেন উঠেই গেছে। ফলে সংক্রমণ বাড়ছে।
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে কোভিড ১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। পরামর্শগুলো হলো- সব ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য জনসাধারণকে উৎসাহিত করা, যারা করোনা টিকার প্রথম, দ্বিতীয় এবং বুস্টার ডোজ নেয়নি তাদের টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা, বন্ধ স্থানে সভা করা থেকে বিরত থাকা ও দাপ্তরিক সভা

যথাসম্ভব ভার্চুয়ালি করা, অপরিহার্য সামাজিক অনুষ্ঠান বা সভায় মাস্ক পরা এবং বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড পরীক্ষার ব্যয় কমানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়া।
এই কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা এখনো আছে এবং থেকে যাবে। কারণ একটা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস কখনোই শেষ হবে না। বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ প্রবণতা কমে যাওয়ায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তবে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর হার সেভাবে বাড়ছে না। এখন ভাইরাসটির যে ধরন দিয়ে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তা ভয়ঙ্কর নয়।
অধিক সংখ্যক মানুষ টিকার আওতায় আসায় মৃত্যু কম বলে মনে করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য। তিনি বলেন, আমাদের দেশের অনেক মানুষ করোনা প্রতিরোধী টিকার আওতায় চলে এসেছে। যারা টিকা নিয়েছেন তারা সংক্রমিত হলেও তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন না। হাসপাতালে যেতে হচ্ছে না। সংক্রমণ বাড়লেও সেই অনুপাতে মৃত্যুর হার কম। সঠিক নিয়মে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মাস্ক শুধু করোনা ভাইরাসই নয়, মাঙ্কিপক্স, অ্যাজমাসহ, শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা থেকে রক্ষা করে। তাই মাস্ক পড়া ভালো। এছাড়া নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, দেশে করোনা সংক্রমণের নতুন ঢেউ শুরু হয়েছে। তাই সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, দেশে এখন সংক্রমণের ষষ্ঠ ঢেউ চলছে। সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ হওয়া না পর্যন্ত একের পর এক ঢেউ আসতেই থাকবে। সারা পৃথিবীতে একটি কার্যকর টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে না পারি তাহলে তা কমবে না। তবে টিকার কারণে দেশে মৃত্যু হার এবং সংক্রমিত ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তির হার কমেছে।
সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরো বলেন, করোনায় আক্রান্ত হলে নমুনা পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। যারা এখনো টিকা নেননি তাদের টিকা নেয়ারও পরামর্শ দেন এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়