সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে ১৪ দল

আগের সংবাদ

পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহত ২৫, নিখোঁজ অর্ধশতাধিক : করতোয়া তীরে শোকের মাতম

পরের সংবাদ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি : কোটচাঁদপুরে বিচার-সালিশ নিয়ে ব্যস্ত পুলিশ!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কামাল হাওলাদার, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) থেকে : কোটচাঁদপুরে দিনে দুপুরে চুরি-ছিনতাইসহ প্রতারক চক্রের প্রতারণার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এসব ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দেয়া হলেও ভুক্তভোগীরা পাচ্ছেন না কোনো প্রতিকার। অন্যদিকে থানা পুলিশ পাওনা টাকা, বিদেশে লোক পাঠানোর অর্থ আদায়, জমি-জমা নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক কলহ, মারামারিসহ ছোটখাটো অভিযোগের সালিশ বিচার নিয়েই পার করছে সময়। এসব সালিশ বিচার করার নামেও পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ।
দুবাই ফেরত ফারুক, সুজন, মোশারফ ও সাইফুলের দেয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে প্রবাসী সাইদুর রহমানের শ্বশুর ইসমাইল হোসেনের নামে সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ২২ সেপ্টেম্বর বিদেশ ফেরত ফারুককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ইসমাইল হোসেন এক লাখ টাকা দেবেন। শেষ পর্যন্ত ইসমাইল হোসেন টাকার ব্যবস্থা করতে না পেরে গা-ঢাকা দেন। ইসমাইল হোসেনের দাবি জামাতা সাইদুর রহমান শ্বশুরবাড়ি এলাকা থেকে ৪ যুবককে দুবাই নিতে তাদের নামে কোম্পানির বৈধ ভিসা পাঠান। তাদের দুবাই নেয়ার পর কাজ না করে তারা বাড়ি চলে আসেন। এ অপরাধে জামাতার অবর্তমানে শ্বশুরের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। ইসমাইল হোসেনের অভিযোগ এ ৪ জনসহ আরো অনেককেই জামাতা সাইদুর দুবাই নিয়ে গেছেন। অন্যরা কাজ করলেও এ ৪ জন চলে আসেন। এ অপরাধে শ্বশুরকে গুনতে হবে এক লাখ টাকা। অভিযোগ তদন্ত কর্মকর্তা এস আই সাইফুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমি কিছুই বলতে পারব না। বিষয়টি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তদারকি করছেন।
এদিকে শহরের বিভিন্ন স্থানে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা হলেও তা প্রতিকারে নেয়া হচ্ছে না কোন ব্যবস্থা। সাম্প্রতিককালে এ থানায় মাদক উদ্ধারের কোনো খবরও নেই। এরপরও প্রায়ই চুরি ছিনতাইয়ের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে চললেও তা বন্ধে নেই থানা পুলিশের কোনো ভূমিকা। আইনশৃঙ্খলা অবনতির ব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মঈন উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে ইদানিং চুরি-ছিনতাই কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর ছোটখাটো ঘটনায় অনেকেই অভিযোগ করেন না। ইতোমধ্যেই কিছু চোর ধরা হয়েছে। চুরি যাওয়া মালও উদ্ধার হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ জুলাই রাতে হোটেল ব্যবসায়ী ফিরোজ আহাম্মেদ বাড়ি ফেরার পথে চাঁদপাড়া গ্রামে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে তার কাছে থাকা ১৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ৭ আগস্ট বিকালে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মোমিনের কাছ থেকে ব্রিজঘাট এলাকা থেকে ছিনতাইকারীরা ২৭শ টাকা ছিনিয়ে নেয়। ৮ আগস্ট দুপুরে কলেজ বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রয়াত শিক্ষকের বাড়ি বাপ্পী কটেজের তালা ভেঙে চোরেরা নগদ ১০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দায়িত্ব শেষ করেন। ১০ আগস্ট কলেজ বাসস্ট্যান্ড এলাকার মর্জিনা খাতুন কোটচাঁদপুর হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে এসে ৪ হাজার টাকার চুরি হয়। এ ব্যাপারে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ১৫ আগস্ট বিকাল ৫টার দিকে উপজেলা রামচন্দ্রপুর মাঠপাড়ার নুরুল ইসলামের বাড়ির দরজার তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে ৭০ হাজার টাকা, স্বর্ণের দুল ও চেইন নিয়ে যায়। এ সময় নুরুল ইসলামের বাড়িতে কোনো লোক ছিল না। সন্ধ্যার আগে একই পাড়ার সুলতানের বাড়িতে চোরেরা হানা দেয়। সুলতানের স্ত্রী বুলবুলি আক্তার চোর দেখে চিৎকার শুরু করলে চোর পালিয়ে যায়। পালানোর সময় চোরেরা তাদের একটি মোবাইল ফোন ফেলে যায়। নুরুল ইসলাম থানায় চুরির ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করেন ও ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোন থানায় জমা দেন। ওই রাতেই পুলিশ মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার নারিকেলবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাকা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে জনির (২৫) বাড়িতে যায়। জনিকে না পেয়ে পুলিশ বাড়ির লোকজনের মাধ্যমে থানায় দেখা করার জন্য বলেন। পরদিন ১৬ আগস্ট জনি কোটচাঁদপুর থানায় এলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়। আদালত জনির একদিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করে। রিমান্ডে নেয়ার পর সুলতানের স্ত্রী জনিকে চোর শনাক্ত করে। তবে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফরিদ নুরুল ইসলামকে জানান, এ চুরির সঙ্গে জনির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ১৭ আগস্ট এসআই ফরিদ নুরুল ইসলামের বাড়িতে তদন্তে যান। নুরুল ইসলামের অভিযোগ তদন্তের নামে এসআই ফরিদ তার কাছে টাকা দাবি করেন। তবে তিনি তাকে কোনো টাকা দেননি বলে জানিয়েছেন। ৭ জুলাই লক্ষীকুণ্ডু গ্রামের নজরুল ইসলামের একটি সিটি-১০০, একই গ্রামের মন্ডল পাড়ার আলম মন্ডলের ডিসকভার-১০০ মোটরসাইকেল চুরি হয়। ১ আগস্ট বিকালে রাঙ্গীয়ারপোতায় রাসেল নামে এক ব্যবসায়ীর হিরো হাংক ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল, ৭ আগস্ট শ্রীরামপুর গ্রামের হামিদুর রহমানের পালসার মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। ৮ আগস্ট মামুনসিয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ডিসকভার-১২৫ সিসি মোটরসাইকেল, ১৩ আগস্ট দুপুরে হরিন্দীয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা মন্টুর ডিসকভার-১২৫ সিসি চুরি হয়। ১৭ আগস্ট কোটচাঁদপুর ফিলিং স্টেশন নামে একটি পেট্রলপাম্প থেকে ঝিনাইদহ-ট-১১-১০২১ একটি ট্রাক চুরি হয়।

এরপর ৫ দিন পর চুরি হওয়া ট্রাকটি কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা একটি রাস্তার পাশ থেকে গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। চোরেরা ৪টি টায়ারসহ খুচরা যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যায়। একই দিনে শহরের সিনেমা হল পাড়ার শিক্ষক আবির হোসেন ডিসকভার-১২৫ সিসি চুরি হয়, ২৯ আগস্ট শহরের ব্রিজঘাট এলাকা থেকে যাত্রী সেজে প্রতারক চক্র একটি ইজিবাইক নিয়ে যায়। ৩১ আগস্ট তালসার আশ্রম থেকে আতিয়ারের ব্যাটারিচালিত ভ্যান যাত্রীবেশে ভাড়া করে পথিমধ্যে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ১ সেপ্টেম্বর তালসারের ঘাগা গ্রামের আবু বকরের ব্যাটারিচালিত ভ্যান সন্ধ্যার দিকে আশ্রম এলাকা থেকে ছিনতাই হয়। এছাড়া মাছ বাজার, হাসপাতাল বিভিন্ন মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টারসহ শহরের বিভিন্ন জনসমাগম স্থল থেকে সাইকেলের পাশাপাশি ভ্যানও চুরির ঘটনা ঘটছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়