হাছান মাহমুদ : সেই নৈরাজ্যের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আগের সংবাদ

ভূরাজনীতির ফাঁদে প্রত্যাবাসন! রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ৫ বছরে সংকট আরো বেড়েছে

পরের সংবাদ

সিলেটে বেপরোয়া পরিবহন শ্রমিকরা, জিম্মি প্রশাসন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন। কথায় কথায় কর্মবিরতি, ধর্মঘট আর অবরোধে নাগরিক ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। এর থেকে প্রতিকার খুঁজছেন সাধারণ নগরবাসী। আর প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান সুশীল সমাজের।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ নগরীর সবকটি পয়েন্ট অচল করে দেন পরিবহন শ্রমিকরা। মাঝ রাস্তায় আড়াআড়ি গাড়ি রেখে পিকেটিং-এ নামেন তারা। নগরীর প্রবেশ মুখগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় পণ্যবাহী ট্রাক রেখে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এক রকম স্থবির হয়ে পড়েছিল পুরো নগরী। কোনো যানবাহনই চলতে দেয়া হয়নি। ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, মোটরসাইকেল পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেলে অচলাবস্থার সমাপ্তি হয়।
জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি ছিনতাই মামলা করেন লেগুনা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মো. শাহাব উদ্দিন। আর এতে আসামি করা হয় সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম, সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ, হিউম্যান হলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল মিয়াসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে। মামলা দায়েরের আট দিন পর বিষয়টি জানতে পারেন শ্রমিক নেতারা। তাদের সঙ্গে আলাপ না করে মামলা নেয়ার কারণ জানতে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার নিশারুল আরিফের সঙ্গে দেখা করতে যান শ্রমিক নেতারা। এ সময় নিজেদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলায় পুলিশের কিছু করার নেই বলে জানালেই ক্ষিপ্ত পরিবহন নেতারা চলে যান এবং পরিবহন চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন। বন্ধ করে দেন সিলেটের সব রাস্তা। এ সময় ফেসবুক লাইভে বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা সিলেটের কর্ণধার। আমাদের কথায় সিলেট চলে। কমিশনার এত বড় সাহস কোথায় পায় যে আমাদের নামে মামলা নেয়, ওনার কি একটু দ্বিধাবোধ হলো না? উনি কি একটু ভয় পেলেন না? এই পুলিশ কমিশনার যদি সিলেটে থাকেন তবে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে।’
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নামে মামলা হয়েছে জেনে কিছু শ্রমিক নেতা এসএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তিনি তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন, যা আমাদের শ্রমিকরা মেনে নেয়নি। তারা বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। মামলা প্রত্যাহার ও এসএমপি কমিশনারের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যিনি আমাদের নামে মামলা করেছেন তাকে আগেই শ্রমিক সমিতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ কারণে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের নামে চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের অভিযোগে মিথ্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত ছাড়াই গ্রহণ করা হয়েছে। মামলা প্রত্যাহার এবং সিলেটের পুলিশ কমিশনারের অপসারণ ছাড়া আমরা আন্দোলন থেকে সরবো না।’
তবে পরিবহন শ্রমিকদের এমন নৈরাজ্যে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। বেশিরভাগ নগরবাসী মনে করেন আইনের সঠিক প্রয়োগ ছাড়া এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সহসাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবুল ফজল রাসেল বলেন, ‘এটা কি ধরনের আন্দোলন? মামলা করেছেন যিনি তিনিও পরিবহন শ্রমিক, যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারাও পরিবহন শ্রমিক। নিজেদের মধ্যে ঝামেলা না মিটিয়ে জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায় করা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রশাসনকে এসব ব্যাপার আরো দায়িত্ব নিয়ে দেখা উচিত।’
সম্মিলিত নাট্যপরিষদ সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু বলেন, ‘প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়া উচিত। এভাবে দুদিন পরপর ধর্মঘট-অবরোধের নামে সাধারণ মানুষকে কেন দুর্ভোগে পড়তে হবে? আমরা তো পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে পারি না।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার সুদ্বীপ দাস ভোরের কাগজকে জানান, শ্রমিক নেতাদের নিজেদের বিরোধে মামলা হয়েছে, এখানে পুলিশ কোনো পক্ষ নয়। মামলা প্রত্যাহারের কোনো এখতিয়ারও পুলিশের নেই। একেবারেই বেআইনিভাবে তারা সড়ক অবরোধ করেছেন।
জনদুর্ভোগ এড়াতে পুলিশ কেন তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিলো না এমন প্রশ্নের জবাবে এডিসি সুদ্বীপ বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা চলছে, সামনে দুর্গাপূজা, তাছাড়া সিলেটে নারী এশিয়া কাপের ম্যাচ রয়েছে। তাই আমরা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কিছুটা নমনীয়। তবে এভাবে চলতে থাকলে কঠোর হওয়া ছাড়া পুলিশের উপায় থাকবে না।’
প্রসঙ্গত, এর আগে চলতি মাসের ১৩ তারিখ ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃক জরিমানা, এসএমপির কমিশনার, উপকমিশনারের অপসারণসহ ছয় দফা দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট পালন করেন শ্রমিকরা। তখন দাবি আদায়ে প্রশাসনের আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিত করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়