হাছান মাহমুদ : সেই নৈরাজ্যের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আগের সংবাদ

ভূরাজনীতির ফাঁদে প্রত্যাবাসন! রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ৫ বছরে সংকট আরো বেড়েছে

পরের সংবাদ

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজন : গানের সুরে নাচের ছন্দে শরৎ বন্দনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ইটপাথরের নগরীতে নেই শুভ্র কাশবন। বহুতল দালানে ঢাকা আকাশ। তবুও নাগরিক জীবনে সাদা মেঘ আর কাশফুলের কথা মনে করিয়ে দিতে আয়োজন হলো শরৎ উৎসব। গতকাল শুক্রবার রোদঝলমলে প্রভাতে গানের সুর, নাচের ছন্দে উৎসব হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়।
সকাল সাড়ে সাতটায় স্বপন সরকারের বাংলাঢোলের বোলে সূচনা হয় উৎসবের। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর উদ্যোগে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই বর্ণিল আয়োজন করা হয়েছে। এবার নিয়ে ১৭ বছর হলো শরৎ উৎসবের। প্রধান অতিথি থেকে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি ড. নিগার চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। কে এম খালিদ বলেন, বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে বাংলার ছয় ঋতুকে সাজিয়েছেন। মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা এখানে সর্বোত্তম। সব ঋতুকে নিয়েই তিনি সৃষ্টির আনন্দে মেতেছেন। আমাদের দেশে ঋতুর আবির্ভাবের অনুষ্ঠান শুরু করেছে ছায়ানট। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের মধ্যদিয়ে তারা ঋতুকে আমন্ত্রণ জানানোর অনুষ্ঠান শুরু করেছিল। এখন সারাদেশে প্রত্যেক ঘরে ঘরে ধর্ম-বর্ণ-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করছে।
তিনি বলেন, কাশফুল দেখলেই শরতের কথা মনে পড়ে। প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে আমাদের থাকতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করতে হলে প্রকৃতিকে তার নিজের মতো করে রাখতে হবে। ঋতুভিত্তিক এই উৎসবগুলো আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চাকে বিকশিত করার পাশাপাশি প্রকৃতির প্রতিও সচেতন করে তোলে। সে কারণে এ ধরনের উৎসব অত্যন্ত তাৎপর্যমণ্ডিত।
মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শরৎকালের কতগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কবিদের লেখনি, ছোটগল্প, কবিতা এবং সংগীতে শরৎ ঋতু

নানাভাবে এসেছে। এর প্রধান উপজীব্য হিসেবে কখনো আকাশ, কখনো প্রকৃতি, কখনো শিউলি, কখনো কাশফুলের বর্ণনায় শরৎ উদ্ভাসিত হয়েছে। এ ঋতুতে আসলেই সবাই একটি ভিন্ন ধরনের আমেজ উপভোগ করে।
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই এমন সাংস্কৃতিক, ঋতুভিত্তিক অনুষ্ঠান আরো বেশি পালন করতে হবে। কারণ এগুলো অসাম্প্রদায়িক বাঙালির উৎসব। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আরেকটি বড় লক্ষ্য এ ধরনের অনুষ্ঠান। এসময় তিনি শরৎ উৎসব আয়োজনের জন্য সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীকে অভিনন্দন জানান এবং সবাই বাঙালির এমন অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করে ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে তার বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, কার্বন নিঃসরণের কারণে প্রকৃতির রঙ হারাতে বসেছে। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে হবে। তাই বৃক্ষ নিধন নয়, বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। শরৎ উৎসব, বসন্ত উৎসব, নবান্ন বা বৈশাখী উৎসবের মতো ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো সব শ্রেণির মানুষকে একতাবদ্ধ করে তোলে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সব মানুষের এই ঐক্যবদ্ধতা খুবই জরুরি।
নিগার চৌধুরী বলেন, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী এই উৎসব করে নগর জীবনে মানুষ যখন প্রকৃতির দিকে তাকাবার সুযোগ পায় না তখন তাদের জানান দেয় যে শরৎ ঋতু এসেছে।
শরৎ বন্দনা করে একক ও দলীয় গান, নৃত্য ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে অনুষ্ঠান। শুরুতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেখ শুকতারা আঁখি মেলে চায়’ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘নমো নমো বাংলাদেশ মম’ গান দুটি সম্মিলিত কণ্ঠে পরিবেশন করেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। ‘শিউলী তলায় ভোরবেলায়’ সম্মেলক গান গেয়ে শোনায় সুরবিহার এর শিল্পীরা। বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ভোরের আগমনী’, সুরনন্দনের শিল্পীরা গেয়ে শোনায় ‘এসো শরদ প্রাতের প্রতীক’,
আগমনী নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। এরপর নৃত্যাক্ষ পরিবেশন করে ‘আজ শরতে আলোর বাঁশি বাজায়’ শীর্ষক দলীয় নৃত্য। সুরবিহার পরিবেশন করে ‘নীল অঞ্জন ঘন কুঞ্জ ছায়ায়’ ভাবনা নৃত্যদল পরিবেশন করে ‘ওলো শেফালি ওলো শেফালি আমার’, ‘শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলী’ গানের সঙ্গে ছিল নৃত্যজনের শিল্পীদের সমবেত নৃত্য, বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিল্পীরা ‘এসো শারদ প্রাতের প্রতীক’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন।
‘এবার অবগুণ্ঠণ খোল’ একক গান গেয়ে শোনান ফাহিম হোসেন চৌধুরী, অনিমা রায় গেয়েছেন ‘শরৎ আলোর কোমল বনে, বিমান চন্দ্র মিস্ত্রি গেয়েছেন ‘শিউলী ফুলের মালা দোলে’, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস গেয়েছেন, ‘হিংসা নিন্দা ছাড়ো মনটা করো পরিষ্কার’, শ্রাবণী গুহ রায় গেয়ে শোনান ‘শরৎ বাবু খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে’, সঞ্জয় কবিরাজ গেয়ে শোনান ‘দূর প্রবাসে মন কাঁদে’, আরিফ রহমান গেয়েছেন ‘চাতুরি করিয়া মোরে বান্ধিয়া পিরিতের ডোরে’, ফেরদৌসী কাকলী গেয়েছেন ‘হৃদয়ে ছিলে জেগে দেখি আজ শরৎ মেঘে’, রতœ সরকার গেয়েছেন ‘এখন আমার চোখে নীল আকাশ’, এস এম মেজবাহ গেয়েছেন ‘আরে ও জীবন ছাড়িয়ে’, নবনীতা জাহিদ চৌধুরী গেয়েছেন ‘ভাসে আকাশে শুকতারা হাসে’, তাপসী ঘোষ গেয়েছেন ‘সখী লোকে বলে কালো’, মারুফ হোসেন গেয়ে শোনান ‘মনে নাইগো আমার বন্ধুয়ার মনে নাই’, ‘ঐ মহাসিন্ধুর ওপার হতে গেয়েছেন’ মামুন জাহিদ খান।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাসুদুজ্জামান, নায়লা তারান্নুম, আহসান উল্লাহ তমাল, সেবতী প্রভা, শিল্পবৃত্ত। যন্ত্রানুসঙ্গে ছিলেন ইফতেখার সোহেল, স্যামসন সরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাহফুজা মিরা, নুসরাহ ইয়াসমিন রুম্পা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়