হাছান মাহমুদ : সেই নৈরাজ্যের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আগের সংবাদ

ভূরাজনীতির ফাঁদে প্রত্যাবাসন! রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ৫ বছরে সংকট আরো বেড়েছে

পরের সংবাদ

বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি : রেণু উৎপাদনে শ্রেষ্ঠ হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রোকনুজ্জামান মিলন, ঝিনাইদহ থেকে : প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব ও জরাজীর্ণ অবকাঠামোসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি। এর মধ্যেও বিদেশি মাছের রেণু উৎপাদনে সমৃদ্ধ ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে। চলতি বছর থেকে এ হ্যাচারিতে ভিয়েতনাম ও চীন থেকে উন্নত জাতের মাছের আমদানিকৃত রেণু নিয়ে মাছের রেণু উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রথম বছরেই মাঠ পর্যায়ের মাছ চাষিরা নতুন জাতের মাছের রেণু নিয়ে সাফল্য পাওয়ায় বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির রেণুর কদর বেড়েছে। বর্তমানে এই হ্যাচারিতে চীন থেকে আমদানিকৃত সিলভার, বিগহেড ও গ্রাসকার্পের রেণু ও ভিয়েতনামের পাঙ্গাস, কালিবাউস এবং সুবর্ণ রুই মাছ পালন করা হচ্ছে। যে কারণে ৩৮ বছর পর বলুহর হ্যাচারি পেয়েছে রেণু উৎপাদনে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার। হ্যাচারি কর্মকর্তারা আশা করছেন, পুরানো ব্রুড মাছের সঙ্গে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মাছ সংযোজন হলে বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারিতে রেণুর ব্রুড ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। হ্যাচারি কমপ্লেক্সের সংরক্ষিত তথ্য থেকে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে মাছ চাষি, মৎস্যজীবী, হ্যাচারি, মৎস্য নার্সারি মালিক ও সাধারণ মানুষকে উন্নত জাতের কার্প জাতীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করে আমিষের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামে দেশের সর্ববৃহৎ এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১০৩ একর আয়তন বিশিষ্ট এই হ্যাচারিতে রয়েছে ৩০টি দৃষ্টিনন্দন পুকুর। ঝিনাইদহ ছাড়াও এই হ্যচারির উৎপাদিত রেণু যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, রাজবাড়ী, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী ও হ্যাচারির কর্মচারিরা জানান, হ্যাচারি ম্যানেজার হিসেবে মো. আশরাফ-উল-ইসলাম যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে পরিবর্তন এসেছে। করোনাকালীন সময়সহ অন্যান্য দুর্যোগের মধ্যেও হ্যাচারির শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকা হলেও অর্জিত হয়েছে ৪৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। মহেশপুর এলাকার হাসান আলী নামে এক মৎস্য চাষি জানান, ব্রুড উন্নয়নের পাশাপাশি ১৫ বছর বন্ধ থাকা প্রশাসনিক ভবন চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, হ্যাচারির মধ্যে আবর্জনা স্তূপে ভরা ছিল। সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফুল বাগান তৈরির মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে মজবুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। হাটগোপালপুর এলাকার চাষি তুষার আহম্মেদ বলেন, আমার মতো দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার মৎস্য চাষিরা বলুহর হ্যাচারির রেণু নিয়ে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। অনেক বেকার যুবক পুনবার্সিত হয়েছে।
হ্যাচারিতে রয়েছে প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব। মোট ২৭টি পদের মধ্যে ১৯টি পদ শূন্য রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জনবল নিয়োগ করা হলে এই হ্যাচারি রেণু উৎপাদনে আরো সফলতা পেতো। এছাড়া হ্যাচারির অতিপ্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন থেমে আছে। অনেক ভবন এখনো জরাজীর্ণ। প্রধান গেট থেকে বাওড় পর্যন্ত প্রাচীর ও রাস্তা সংস্কার জরুরি হলেও বছরের পর বছর পড়ে আছে। পোনা বহনের জন্য পিকআপ ও মিনি ট্যক্টর প্রয়োজন হলেও পাওয়া যাচ্ছে না। হ্যাচারির রেণু উৎপাদন কাজের জন্য ৯ ইঞ্চি ডিপ সাবমারসিবল পাম্প ও বোরিং স্থাপন করা দরকার।
হ্যাচারি ম্যানেজার মো. আশরাফ-উল-ইসলাম জানান, বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানসম্পন্ন রেণু উৎপাদন করে মৎস্য চাষিদের কাছে সুলভমূল্যে বিক্রি করে থাকে। এছাড়া আধুনিক কলাকৌশল ও সর্বশেষ লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষিদের জীবন মান উন্নত করে থাকে। ফলে এলাকায় বেকারত্ব হ্রাসের পাশাপাশি ব্যাপকহারে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার মাছ চাষি, মৎস্যজীবী, হ্যাচারি, নার্সারি মালিক ও সাধারণ মানুষের পুকুরে ৬০ ভাগ রেণু বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারি থেকে যায়। তিনি বলেন, শূন্যপদে জনবল নিয়োগ ও হ্যাচারির মধ্যে অতিপ্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করা হলে বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারির মান আরও বৃদ্ধি হতো। এটা ঝিনাইদহ তথা দেশের একটি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানমুখী প্রকল্প। এটা নিয়েও একটি কুচক্রি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়