হাছান মাহমুদ : সেই নৈরাজ্যের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আগের সংবাদ

ভূরাজনীতির ফাঁদে প্রত্যাবাসন! রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ৫ বছরে সংকট আরো বেড়েছে

পরের সংবাদ

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে লক্ষ্য পূরণ হয়নি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** নেট মিটারিং নির্দেশিকা জনপ্রিয় হয়নি ** ভূমি সমস্যা ও সরঞ্জাম কেনার মূলধনের অভাব **
দেব দুলাল মিত্র : বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎপাদনে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। ১০ শতাংশ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়ে গত ৬ বছরে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। একদিকে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎপাদন ও ব্যবহার জনপ্রিয় করতে না পারা, অন্যদিকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই নবায়নযোগ্য জ¦ালানির উৎপাদনের লক্ষ্য পূরণ হয়নি।
জ¦ালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা যেমন রয়েছে তেমনি দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে দেশের প্রথম পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের অক্টোবর মাসে এই কেন্দ্রে ৫০ মেগাওয়াট কাপলান টাইপের টার্বাইন সংবলিত চতুর্থ এবং পঞ্চম ইউনিট স্থাপন করে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৩০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বেসরকারি উদ্যোগে সিলেটে প্রথম সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন উদ্যোগ শুরু হয়। এরপর ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) ১৯৯৬ সালে সোলার হোম সিস্টেম (এসএইচএস) কর্মসূচি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করে। যা বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্মসূচি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইডকলের মাধ্যমে সরকারের সমন্বিত কর্মসূচীর কারণে প্রসার বেড়েই চলছে। এ খাতে ২৬টি প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়। কিন্তু পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ৫০ মেগাওয়াট, কাপ্তাইয়ে ৭ দশমিক ৫ মেগাওয়াট, পঞ্চগড়ে ৮ মেগাওয়াট, টেকনাফে ২০ মেগাওয়াট এবং জামালপুরের সরিষাবাড়িতে ৩ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর পার্ক উৎপাদনে এসেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের মধ্যে সৌরশক্তি সবচেয়ে সম্ভাবনাময় এবং বায়োগ্যাস ও বায়োমাসের সীমিত ব্যবহার হচ্ছে।
মহাপরিকল্পনা কাজে আসছে না : গত কয়েক বছরে জীবাশ্ম জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার ধরন এবং ক্রমবর্ধমান খরচ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারকে তীব্রতর করেছে- যা জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাস করার অন্যতম উপায়। এসব কারণেই সরকার নবায়নযোগ্য জ¦ালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে

মাস্টারপ্ল্যান ঘোষণা করে। ২০১৬ সালে নেয়া এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০২১ সালের মধ্যে মোট উৎপাদন ক্ষমতার ১০ শতাংশ অর্থাৎ ২ হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে যুক্ত করতে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গত ৬ বছরেও এই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ শতাংশ অর্জিত হয়েছে বলে জানা গেছে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (¯্রডো) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন যে পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার ৩ শতাংশ আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। অর্থাৎ সৌরশক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৭১৬ দশমিক ৭৩ মেগাওয়াট। এরমধ্যে পিভি সোলার উৎপাদন করে ৪৬৬ দশমিক ৬৮ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ থেকে আসে ২৩০ মেগাওয়াট, ২ দশমিক ৯ মেগাওয়াট আসে বায়ু থেকে, জৈব গ্যাস থেকে শূন্য দশমিক ৬৩ মেগাওয়াট এবং শূণ্য দশমিক ৪ মেগাওয়াট আসে বায়োগ্যাস থেকে। অথচ সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ থাকার কথা ছিল। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ৪০ শতাংশ করার কথাও রয়েছে। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা এবং বাস্তবতার মধ্যে অনেক ব্যবধান রয়েছে।
সমস্যা কোথায় : জ¦ালানি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভূমি সমস্যা প্রকট। সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বড় আকারের জমির প্রয়োজন। এছাড়া প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য মূলধনেরও প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের উদ্যোগ থাকলেও পর্যাপ্ত জমির ব্যবস্থা না করতে পারায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। যেসব জায়গায় জমি পাওয়া গেছে, সেখানে কিছু কিছু প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় দেশের অনেক দুর্গম, পাহাড়ি এলাকা ও চরাঞ্চলে বসবাসরত নাগরিকদের জন্য সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে, গ্রিন এনার্জি প্রকল্পে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থায়নের কথা বললেও নানান কারণে বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি।
এদিকে রুপটপ সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদন বাড়াতে সরকার ২০১৮ সালে নেট মিটারিং নির্দেশিকা (সোলার প্যানেল বসিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ এনার্জি ব্যাংকে জমা রাখা) শুরু করে। কিন্তু গ্রিডের বিদ্যুৎ সহজলভ্য হওয়া, জনসচেতনতা না বাড়ানো এবং সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবে গ্রাহকরা আগ্রহী হয়নি।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার জনপ্রিয় না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। তাছাড়া নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রতিশ্রæতিরও অভাব রয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, বর্তমান বিশ্বব্যাপী জ¦ালানি সংকটের আঁচ বাংলাদেশেও পড়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহারের ওপর সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। এটা আরো আগে করা উচিত ছিল। ২০১৫ সালে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হলেও বাস্তবায়নে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি বলেই সফলতা আসেনি। এখন যে অবস্থা তাতে আমার মনে হয় ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। সব স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। জমির স্বল্পতা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে না পারলে পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে, সুফল মিলবে না। অথচ অন্যদেশগুলো অনেক এগিয়ে গেছে।
স্রেডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, দিন দিন নবায়নযোগ্য জ¦ালানির প্রসার ঘটছে। ¯্রডো নবায়নযোগ্য জ¦ালানি স্থাপনে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বয়ের দিকে জোর দেয়া হচ্ছে। এই সেক্টরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতেই কাজ করছি।
বায়ু বিদ্যুৎ : সরকাার-বেসরকাার পর্যায়ে সৌর বিদ্যুৎ প্রসার লাভ করলেও সেই হারে বায়ু বিদ্যুতের প্রসার হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএইড ও দেশটির নবায়নযোগ্য জ্বালানি দক্ষতা ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ন্যাশনাল রিনিউঅ্যাবল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) ১০ থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বায়ু থেকে উৎপাদন করা সম্ভব বলে সাড়ে তিন বছর গবেষণার পর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা এখনো গবেষণা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। এখন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ১৩টি স্থান থেকে বাতাসের উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইউএনডিপির অর্থায়নে স্রেপজেন প্রকল্প থেকে বায়োমাস রিসোর্স ম্যাপিং সমীক্ষা নেয়া হয়েছে। এই সমীক্ষার চূড়ান্ত হওয়ার পর দেশে বায়োমাসের সম্ভাবনার ওপর একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। তবে সরকার ২০২১ সাল পর্যন্ত নেয়া এক পরিকল্পনায় বায়ু বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ১ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল যা বাস্তবায়ন হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়