হাছান মাহমুদ : সেই নৈরাজ্যের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আগের সংবাদ

ভূরাজনীতির ফাঁদে প্রত্যাবাসন! রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ৫ বছরে সংকট আরো বেড়েছে

পরের সংবাদ

ইউএনওকে শোকজ : অবহেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস কুড়িগ্রামে!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চলতি এসএসসি ও এসএসসি (ভোকেশনাল) এবং দাখিল ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এসব বিভাগের শত শত শিক্ষার্থীর জন্য বোর্ড কর্তৃক পাঠানো কয়েক হাজার প্রশ্নপত্র সেটের প্যাকেট পাঠিয়ে দেয়। এসব প্যাকেট থেকে প্রশ্ন যাচাই-বাছাই করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার প্রতিনিধি হিসেবে একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মাকে শোকজ করেছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক। গত বুধবার তিন কর্মদিবসের সময় দিয়ে শোকজের জবাব দিতে বলা হয় ওই শোকজ চিঠিতে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, কোনো গাফিলতি আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইউএনওকে শোকজ করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজের জবাব পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া যাবে। জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলেন, বরখাস্ত হওয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান গত বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে ভূরুঙ্গামারী হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার শরীরে উচ্চ রক্তচাপসহ নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো জানান, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের তিন সদস্যের তদন্ত টিম তদন্ত শেষে আজ (গতকাল) কুড়িগ্রাম ত্যাগ করেছেন। এছাড়া প্রশ্নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বলেন, এক বা দুদিনে একজন মানুষের পক্ষে কয়েক হাজার প্রশ্নের প্যাকেট যাচাই-বাছাই করা অসম্ভব। এজন্য ভূরুঙ্গামারীর ৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রের জন্য কমপক্ষে ৬ জনকে কয়েকদিন সময় দিয়ে প্রশ্ন যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব দিলে নির্ভুল এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারত। প্রশ্নফাঁসের এ দায় থেকে সংশ্লিষ্ট কেউ এড়াতে পারে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা গত ১১ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত ০৫.৪৭. ৪৯০৬. ০০০.১৩.০২৩.২২.৮৫৯ নং স্মারকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য গোপনীয় কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমানকে দায়িত্ব দেন। চিঠিতে বলা হয় ভূরুঙ্গামারী থানায় প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য গোপনীয় কাগজপত্রাদি সংরক্ষিত রয়েছে। ওই সিলগালাকৃত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও অন্যান্য গোপনীয় কাগজপত্রাদি বিবরণী মোতাবেক সঠিক আছে কিনা তা যাচাই-বাছাই করে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য অনুরোধ করেন। এই চিঠির অনুলিপি দেয়া হয় ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জসহ উপজেলার ৬টি পরীক্ষা কেন্দ্রের সব সচিবকে। চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, পরীক্ষার সময়সূচি অবশ্যই খামের উপরে লিখতে হবে।
এছাড়া একই তারিখে ইউএনওর স্বাক্ষরিত ০৫.৪৭. ৪৯০৬. ০০০.১৩.০২৩.২২ নং স্মারকে এক অফিস আদেশে ভূরুঙ্গামারী পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে কৃষি অফিসার আপেল মাহমুদ, সমবায় অফিসার নুর কুতুবুল আলম। নেহাল বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে মৎস্য কর্মকর্তা আদম মালিক চৌধুরী, পল্লী উন্নয়ন অফিসার রায়হান হক। সোনাহাট দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সহকারী শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ, প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ। সোনাহাট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর আতিকুর রহমান, সহকারী পল্লী উন্নয়ন অফিসার রেজাউল করিম। ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা কেন্দ্রে সহকারী শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন, জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। দিয়াডাঙ্গা আইডিয়াল টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে সহকারী প্রোগ্রামার রুবেল সরকার এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মুখলেছুর রহমানকে ট্যাগ অফিসার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন। তারা পরীক্ষার দিনগুলোতে থানা হতে নির্ধারিত প্রশ্নপত্র উত্তোলন নিশ্চিত এবং পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সার্বক্ষণিক কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
শিক্ষা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা শুরুর এক সপ্তাহ আগে কেন্দ্র সচিব বা তার প্রতিনিধি এবং ট্যাগ অফিসারের মাধ্যমে ট্রাংকে রক্ষিত প্রশ্নপত্রের প্যাকেটের সঙ্গে ‘প্রশ্নপত্রের চাহিদা’ সঠিক আছে কিনা তা যাচাই করবে। কোনো গড়মিল থাকলে সঙ্গে সঙ্গে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে লিখিতভাবে জানাতে হবে। কিন্তু এখানে ইউএনও সেই কাজ না করে এক-দুদিনের মধ্যে একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে প্রশ্নপত্র যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। যেখানে বোর্ডের নিয়ম পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়। আর এই সুযোগে অসাধু কিছু শিক্ষক প্রশ্নপত্র কৌশলে বের করেছেন। ইউএনও যদি শুরুতেই তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতো তাহলে প্রশ্নফাঁস হওয়ার আশঙ্কা থাকত না। এসএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষাকে গুরুত্ব না দেয়ায় প্রশ্নফাঁসের দায় ইউএনও এড়াতে পারেন না।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মাকে একাধিবার ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়