হাছান মাহমুদ : সেই নৈরাজ্যের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আগের সংবাদ

ভূরাজনীতির ফাঁদে প্রত্যাবাসন! রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ৫ বছরে সংকট আরো বেড়েছে

পরের সংবাদ

আখাউড়া-আগরতলা রুট : ১০ কিমি রেল প্রকল্প শেষ হয়নি সাড়ে ৬ বছরেও

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : ধীরগতিতে চলছে আখাউড়া-আগরতলা রেল প্রকল্পের কাজ। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে শুরু হলেও প্রকল্পটির বাংলাদেশ অংশে মাত্র ১০ দশমিক ১ কিলোমিটার গত সাড়ে ৬ বছরেও শেষ হয়নি। মোট ১৫ কিলোমিটারের এ প্রকল্পটি ভারতীয় অংশের ৫ কিলোমিটার এরইমধ্যে তারা শেষ করে ফেলেছে। প্রকল্পটির মেয়াদ পর্যায়ক্রমে ৪ বার বাড়ানো হলেও অর্থ বরাদ্দ একই রাখা হয়েছে একনেকে।
দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। যদিও ২০১৬ সালে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। প্রকল্পে ভারত সরকার অনুদান দেবে ৪২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার জোগান দিচ্ছে। তবে গত ৬ বছরে অর্থাৎ গত আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রকল্পটির অগ্রগতি সাড়ে ৬১ শতাংশ, আর আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ।
২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর প্রথম দফায় ব্যয় বাড়ানো ছাড়াই মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আবারো এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় দফায় ১ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়েও বাস্তবায়ন না হওয়ায় চতুর্থ দফায় ফের ১ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেকে) সভায় পাস হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত ছিলেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে আছে বাংলাদেশ অংশে ১০ দশমিক ১ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন এবং ২৫ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ লুপ লাইন নির্মাণ। ৫৬ দশমিক ১ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ২০টি মাইনর ব্রিজ এবং ৩টি মেজর ব্রিজ নির্মাণ। ৩টি স্টেশনে কম্পিউটারাইজড ইলেকট্রনিক সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করা।
প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থবারে আরো এক বছর বৃদ্ধির কারণ সম্পকে
র্
প্রকল্প পরিচালক ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সিই (পূর্ব) মো. আবু জাফর মিঞা জানান, কোভিডের কারণেই এ প্রকল্পের কাজ দফায় দফায় বাধাগ্রস্ত হয়। কোভিড-১৯ এর জন্য ২০২০ সালের মার্চ হতে বাংলাদেশ ও ভারতের লকডাউন জারি করায় প্রকল্পের সাইডের কাজ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল।

পরে ২০২০ সালের জুলাই হতে স্বল্প পরিসরে কাজ চালু হলেও গত বছরের এপ্রিলে পুনরায় লকডাউন চালু হওয়ায় মাঠপর্যায়ের কাজ বন্ধ ছিল। এখন পরিস্থিতি দুদেশেই স্বাভাবিক। আমরা আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
তবে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন সম্প্রতি বলেন, প্রকল্পটি মাত্র ১৫ কিলোমিটার। যার মধ্যে বাংলাদেশ অংশে পড়েছে ১০ দশমিক ১ কিলোমিটার আর ভারতীয়রা করছে ৫ কিলোমিটারের মতো। তারা কাজ শেষ করেছে আগেই। কিন্তু আমরা কাজটা করতে পারছি না। বার বার প্রকল্পটির কাজে বিলম্ব হওয়ায় মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।
রেলমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আবেদনের ভিত্তিতে একনেকে প্রকল্প ব্যয় না বাড়িয়ে সময় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি এ সময়ের মধ্যে আমরা আখাউড়া-আগরতলা রেল পথটি চালু করতে পারব। তা না হলে ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিৎ কর্মকার জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বাস্তবায়নের ফলে দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে রেল সংযোগ স্থাপন এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র স¤প্রসারণ হলে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে।
তবে চতুর্থ দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। শর্তগুলো হলো- নির্মাণ কাজের ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আর বাড়ানো যাবে না। এছাড়া প্রকল্পের কাজ নিবিড়ভাবে পরিবীক্ষণ করে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত মেয়াদে ঠিকাদার নির্মাণকাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে চুক্তির সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ এবং পিপিআর অনুযায়ী ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) সংস্থান অনুযায়ী কাজের পরিমাণ ও গুণগতমান নিশ্চিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং সব টেস্ট রিপোর্টেও কপি আইএমইডিতে পাঠাতে হবে। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের সব অঙ্গের কাজ শেষ করতে হবে। বর্ধিত মেয়াদের সংশোধিত কর্ম পরিকল্পনা এবং ক্রয় পরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৩ মাস পরপর পরিকল্পনা কমিশন ও আইএমইডিতে পাঠাতে হবে। ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়