এসপি হলেন পুলিশের ৪৭ কর্মকর্তা

আগের সংবাদ

সাশ্রয়ের নামে নিম্নমানের বই! : ছাপানো শুরু হয়নি, বছরের প্রথমদিন সব শিক্ষার্থীর বই পাওয়া অনিশ্চিত

পরের সংবাদ

জাতিসংঘে আজ ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী : টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের আহ্বান

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের মনোযোগ ধীরে ধীরে মিয়ানমারের নতুন বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংঘাতের দিকে সরে যাওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং জাতিসংঘ ও বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার নিউইয়র্কের আবাসস্থলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি উচ্চপর্যায়ের পার্শ্ব ইভেন্টে ভাষণ দেয়ার সময় বলেন, রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে বাস্তব পদক্ষেপ এবং প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ এবং মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আইসিজেতে গাম্বিয়াকে সমর্থন করাসহ আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকার্যের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সমর্থন করার জন্য বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং মিয়ানমারকে আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐকমত্যের অধীনে তার অঙ্গীকার মেনে চলার জন্য জোর দিয়ে মিয়ানমার যাতে বাধাহীন মানবিক অ্যাক্সেস দিতে সম্মত হয় সে জন্য প্রচেষ্টা চালানোর অনুরোধ করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে আসিয়ান এবং পৃথক সদস্য রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের গভীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক ও লিভারেজ নিয়ে এমন সার্বিক সম্পৃক্ততায় প্রধান ভূমিকা নিতে পারে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিকত্বের পথ সুগম করাসহ রাখাইন রাজ্যবিষয়ক কফি আনান উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে তাদের

ব্যাপক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত। কেননা, বেসামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে তাদের অর্থবহ উপস্থিতি রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের আস্থা বাড়াবে।
আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়, জাতিসংঘ ও আসিয়ানের বর্তমান ফোকাস মিয়ানমারে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে এবং মিয়ানমারের জনগণের জন্য শান্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বাংলাদেশ তাদের শক্তিশালী ভূমিকার জন্য অপেক্ষা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন বিশ্বজুড়ে উদ্ভূত নতুন নতুন সংঘাত প্রত্যক্ষ করছে এবং দুর্ভাগ্যবশত রোহিঙ্গা সংকটের রাজনৈতিক সমাধান ও এর ক্রমবর্ধমান মানবিক চাহিদা মেটানো দুটো থেকেই বিশ্বের মনোযোগ ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত জেপিআর ২০২২-এর অধীনে আপিলকৃত ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাত্র ৪৮% অর্থায়ন করা হয়েছে। একই সময়ে মিয়ানমারে সা¤প্রতিক অভ্যন্তরীণ সংঘাতের বিরূপ প্রভাব আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে, কারণ এটি তাদের প্রত্যাবাসন শুরুর করার সম্ভাবনার পথে আরো বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
শেখ হাসিনা বৈশ্বিক স¤প্রদায়কে অভিহিত করেন যে, একজন রোহিঙ্গাকেও ঘরে ফিরতে না দেখা অবস্থায় বাংলাদেশ এ প্রলম্বিত সংকটের ষষ্ঠ বছরে পা দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সেখানেই রয়েছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে মিয়ানমারের ধারাবাহিক সরকারগুলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগতভাবে বর্জন ও নির্বিচার নিপীড়ন অব্যাহত রাখায় বাংলাদেশে তাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (এফডিএমএন) মোট সংখ্যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন। তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান আমাদের উন্নয়ন আকাক্সক্ষার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
এএমআর ঠেকাতে বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : ‘এন্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ ভবিষ্যতে যাতে লাখ লাখ প্রাণহানি ঘটাতে না পারে সেজন্য ধারাবাহিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের লেক্সিংটন হোটেলে এন্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বিষয়ক এক সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
এন্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স বা অণুজীববিরোধী প্রতিরোধ্যতা (এএমআর) হচ্ছে শরীরে কোনো অণুজীব (সাধারণত ব্যাকটেরিয়া) নির্মূলে প্রয়োগ করা নির্দিষ্ট ওষুধের বিপক্ষে লড়াই করে ওই অণুুজীবের টিকে থাকা বা প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করা, যদিও আগে নির্দিষ্ট ওই ওষুধের মাধ্যমেই সেই অণুজীবটিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে। প্রচলিত অর্থে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা এআর নামেও এটি পরিচিত। এএমআর বা এআরের কারণে অনেক ওষুধ অনেক অণুজীবের বিরুদ্ধে আর কার্যকর থাকে না, ফলে সেগুলোর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়াও কঠিন হয়ে যায়, অনেক সময় বিকল্প চিকিৎসাও থাকে না। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এন্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স- এএমআর এমন একটি সমস্যা- যা একটি সংকটে পরিণত হতে পারে। এটি বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ প্রাণহানি ঘটাতে পারে। এই পরিস্থিতি প্রতিরোধে আমাদের ধারাবাহিক রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। এই বৈশ্বিক নেতৃত্বদানকারীগোষ্ঠী থেকে, বিষয়টিকে সামনে আনার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এটা স্পষ্ট যে, আরো বেশি কিছু করা দরকার। এ বিষয়ে কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলো ভালোভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। (এখন) আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়। ‘এক স্বাস্থ্য’ নীতিতে এগুলোকে বিবেচনায় নেয়া দরকার।
প্রায় ১৫০টি দেশ এএমআর নিয়ে এর মধ্যে তাদের জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য অর্থপূর্ণ সহায়তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় এএমআরকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। (এক্ষেত্রে) ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মাল্টি পার্টনার ট্রাস্ট ফান্ড একটি গ্রহণযোগ্য উপকরণ হতে পারে। আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায় এএমআরের জন্য একটি শক্তিশালী বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার বলেও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, এএমআর-এর বোঝা কতখানি তা বুঝতে এবং এর ধাক্কা সামলাতে ‘নজরদারি’ই মূল চাবিকাঠি। আমরা ২০১৯ সাল থেকে জিএলএএসএস প্ল্যাটফর্মে রিপোর্ট করছি। (এ বিষয়ে) সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, এএমআর সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। নভেম্বর মাসে বার্ষিক বিশ্ব সচেতনতা সপ্তাহ এ জন্য একটি উপযুক্ত উপলক্ষ। (এরই মধ্যে) এসডিজির জন্য এএমআর সূচক তৈরি করা হয়েছে। এই সূচকগুলোর ওপর নজর দেয়া হলে তা মানুষের স্বাস্থ্য, পশু স্বাস্থ্য, খাদ্য ব্যবস্থা এবং পরিবেশের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী এএমআর নীতিমালা প্রণয়নে সহায়ক হতে পারে। এ বিষয়ে ডব্লিউএইচও, এফএও, ওআইই এবং ইউএনইপিকে তাদের সম্মিলিত কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এএমআর প্রতিরোধে আরো রাজনৈতিক সদিচ্ছা তৈরি করতেই আজ সকালের এই বৈঠক। আমরা আপনাদের চিন্তাভাবনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি জানতে এবং উপকৃত হতে চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়