এসপি হলেন পুলিশের ৪৭ কর্মকর্তা

আগের সংবাদ

সাশ্রয়ের নামে নিম্নমানের বই! : ছাপানো শুরু হয়নি, বছরের প্রথমদিন সব শিক্ষার্থীর বই পাওয়া অনিশ্চিত

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু : ৩ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে উদ্বেগজনকহারে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। একদিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিন নারী রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চলতি মাসে চট্টগ্রামে আস্বাভাবিকহারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৭৬ জন। আর চলতি মাসের গত ২১ দিনে চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৬ জন। এর মধ্যে ২০০ জনই বন্দরনগরীর বাসিন্দা। এ হিসাবে গত ২১ দিনে আগস্ট মাসের তুলনায় চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। এ নিয়ে নগর ও জেলা মিলে চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪০৫ জন।
চলতি বছরের মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে চলতি মাসে। হঠাৎ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ার কারণ অনুসন্ধানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ শুরু করেছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও এখনো শঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তবে সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
গত বুধবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই নারীর মৃত্যুর পরের দিন গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে আরো এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তারা তিনজনই চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দা। চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম বারের মতো দুই দিনে তিন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। তারা তিনজনই নারী। তাদের মধ্যে একজন ৭০ বছর বয়সী, অন্যজন ৪০ বছর বয়সী ও গতকাল বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া নারীর বয়স ৫০ বছর। গতকাল সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া দিলআরা বেগম নগরের মোগলটুলির বাসিন্দা। তার আগে বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান খুরশিদা বেগম (৭০) ও শিউলি রাণী (৪০)। তারা দুজনই নগরের পাহাড়তলীর বাসিন্দা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় মাত্র ৫ জন। ফেব্রুয়ারিতে একজন আক্রান্ত হলেও মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে পাওয়া যায়নি কোনো রোগী। তবে জুন মাস থেকে আবারো বাড়তে শুরু করে আক্রান্তের সংখ্যা। ওই মাসে আক্রান্ত হয় ১৭ জন। এছাড়া জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত বেড়ে ৫০ জন, আগস্ট মাসে ৭৬ জন এবং চলতি মাসে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৫৬ জন আক্রান্ত হয়ে নগর ও জেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের মধ্যে পুরুষ ১৮৪, নারী ১১৩ এবং শিশু ১০৮ জন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে আশঙ্কাজনক হারে রোগী বাড়ছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মূলত উপজেলা পর্যায়েও বাড়তে শুরু করে। সব বয়সের রোগী আমরা পাচ্ছি। বর্তমানে আমরা এটা সামাল দিতে পারছি। তবে ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে। প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআরের একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবার আগে সচেতনতা প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আরও যতœবান হওয়া জরুরি। যে কোনো সময় ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। আর কোনো লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়লেও জনসংখ্যা অনুপাতে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই নগন্য। তাই এখনই ভীতি ছড়ানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে অবশ্যই সচেতন থাকার পরামর্শ তাদের। এ রোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নগরের হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। এলাকায় এলাকায় মশারি সরবরাহ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) আবুল হাশেম বলেন, আমরা ডেঙ্গু সচেতনায় প্রতিটি ওয়ার্ডে আরবান ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছি। এছাড়া ছাদ বাগান, পরিত্যক্ত টায়ারসহ যেখানেই পানি জমে থাকার খোঁজ পাচ্ছি এডিস মশার লার্ভার জন্মস্থলের সন্ধান পাচ্ছি অভিযান-জরিমানা অব্যাহত রাখছি।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়–য়া বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে চলতি মাসে ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আরো মাস দুয়েক ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। এ সময় সবাইকে সচেতন থেকে ডেঙ্গু থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, বর্ষাকালে যেকোনো জ্বর হলেই ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত এই জ্বর হয়ে থাকে অতিরিক্ত মাত্রার, ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। জ্বরের সঙ্গে আরও বেশ কিছু উপসর্গ থাকতে পারে। এর মধ্যে তীব্র শরীর ব্যথা, পিঠে এবং মাংসে ব্যথা, চোখের চারপাশে এবং পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব অথবা বমি, পেটে ব্যথা, ক্ষুধামান্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্বাদের পরিবর্তন এবং গায়ে লালচে ভাব। এ সময় জ্বরে আক্রান্ত হলে কালক্ষেপণ না করে জ্বরের শুরুতেই প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট করানো প্রয়োজন। এর সঙ্গে প্রয়োজন সিবিসি, এসজিপিটি, এসজিওটি টেস্ট করা। সর্বোপরি চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়