এসপি হলেন পুলিশের ৪৭ কর্মকর্তা

আগের সংবাদ

সাশ্রয়ের নামে নিম্নমানের বই! : ছাপানো শুরু হয়নি, বছরের প্রথমদিন সব শিক্ষার্থীর বই পাওয়া অনিশ্চিত

পরের সংবাদ

অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর অভিযোগ : ইউনিলিভারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কয়েক মাস ধরে দেশে চাল, তেল, আটা, ডিম, মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্ট ও টুথপেস্টের বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার তদারকির পাশাপাশি এসব পণ্যের উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করেছে, যেখানে অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান এবং একাধিক সভার পর্যবেক্ষণের আলোকে সরকারের কাছে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে স¤প্রতি এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, যারা বাজারে অস্থিরতা তৈরির জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, ডিম, ভোজ্যতেলের বিষয়ে আমরা যেসব অভিযোগ পেয়েছি, তা সরকারের কাছে পাঠিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা অভিযান পরিচালনা করতে পারি এবং বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে জরিমানা করতে পারি। কিন্তু মামলা করতে পারি না। তিনি আরো বলেন, আমরা ডিমের আড়তদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিআইডিকেও ইতোমধ্যে জানিয়েছি। আমাদের পাশাপাশি প্রতিযোগিতা কমিশনও এখন নড়ে চড়ে বসেছে। আমরা রিপোর্ট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা একশনে যাচ্ছে।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা ভোরের কাগজকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনো চিঠি পাইনি। তবে জানতে পেরেছি। এখন আমরাও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদেরকে জবাব দিব।
ইউনিলিভার গ্রুপের হেড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স শামীমা আক্তার ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অফিসিয়াল কোন চিঠি আসেনি বা যোগাযোগ হয়নি। আমরা বিভিন্ন সংবাদের মাধ্যমে তথ্যটি জেনেছি। সুতরাং এ সম্পর্কে কোনো মতামত দেয়া আমার সম্ভব নয়। তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আমরা সম্পূর্ণ কমপ্লায়েন্সের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছি। তবে অবশ্যই সরকার যদি কোন বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে জানতে চান, আমরা অবশ্যই সহযোগিতা করব।
জানা গেছে, বাজারে চাল, আটা ময়দা, ডিম, মুরগির মাংস ও টয়লেট্রিজ পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগে ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মোট ৪৪ টি মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চালে ১৯ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া আটা-ময়দায় ৮টি, ডিমে ৬টি, ব্রয়লার মুরগিতে ৬টি, সুগন্ধি ও গুড়া সাবানে ৫টি মামলা। আইনের ১৫ ধারায় এটা কমিশনের স্বপ্রণোদিত মামলা। আগামী ২৬ তারিখ থেকে ইউনিলিভার, সিটিগ্রুপসহ ১১টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শুনানি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যদের শুনানিও অনুষ্ঠীত হবে।
সূত্র মতে, চালের জন্য রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস, বেলকন গ্রুপ, সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড; আটা-ময়দার জন্য সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ; ডিমের জন্য প্যারাগন পোলট্রি, ডিম ব্যবসায়ী-আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানউল্লাহ্, কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলাম; মুরগির জন্য কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলাম, প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড; টয়লেট্রিজ পণ্যের জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যদিও একই প্রতিষ্ঠানের নাম এ তালিকায় একাধিকবার এসেছে।
চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে কোম্পানিগুলোকে ধারাবাহিকভাবে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এ মামলা হয়েছে। ধারা ১৫তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে একপক্ষীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। আর ধারা ১৬–তে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে শীর্ষে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে সেই অপরাধও শাস্তিযোগ্য।
জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম বলেন, আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজারের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার নিয়ম ভেঙে চাল, আটা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্টসহ অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য মামলা করা হয়েছে। আগামী সোমবার থেকে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হবে।
প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এ মামলা হয়েছে। ধারা ১৫-তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে একপক্ষীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। ধারা ১৬-তে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে শীর্ষে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে সেই অপরাধও শাস্তিযোগ্য। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সূত্র জানায়, টয়লেট্রিজ বা সাবান, সুগন্ধি সাবান ও গুঁড়া সাবানের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করার অভিযোগে ঢাকার ১৮৮/বি, বীর উত্তম মীর শাখাওয়াত সড়কের ১৮৭ শান্তা ফোরামের ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ৫২/২০২২ মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া, চালের দাম বৃদ্ধির জন্য ২৪/২০২২ ও আট-ময়দার দাম বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে ৩৮/২০২২ নং মামলা করা হয়েছে সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে। আর আহমেদ কাজী টাওয়ার হাউজ নং ৩৫, রোড নং ২ ধানমন্ডি, ঢাকা এর কাজী ফার্মস গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী জাহেদুল হাসানের বিরুদ্ধে ডিমের দাম বেশি রাখার অভিযোগে ৪১/২০২২ এবং মুরগির দাম বেশি রাখার জন্য ৪৫/২০২২ নং মামলা করা হয়েছে।
অপরদিকে, বাজারে চালের দাম বেশি রাখায় রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রডাক্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে ১৩/২০২২ নং মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া, চালের দাম বেশি রাখায় নওগাঁর বেলকন গ্রুপ প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে ১৪/২০২২ নং মামলা করা হয়েছে। একই অভিযোগে ল্যান্ডভিউ কমার্সিয়াল সেন্টার, গুলশান-২ এর বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধেও ২৫/২০২২ নং মামলা করা হয়েছে।
ডিমের দাম বেশি রাখার অভিযোগে ৪৩/২০২২ এবং মুরগির দাম বেশি রাখার অভিযোগে প্যারাগন পোল্ট্রি লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৪৯/২০২২ নং মামলা করেছে প্রতিযোগিতা কমিশন। আর তেজগাঁওয়ের ২৭ স্টেশন রোডের ডিম ব্যবসায়ী আড়ৎদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আমানত উল্লাহর বিরুদ্ধেও বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগে ৪৩/২০২২ নং মামলা করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়