রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

সাফে সেরা গোলকিপার : রুপনাকে ঘর তৈরি করে দেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নন্দন দেবনাথ, রাঙ্গামাটি থেকে : নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়লাভ করে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। আর রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকা কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়িতে রয়েছে এই দলেরই ঋতুপর্ণার বাড়ি ও নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভুয়ো আদামে নারী দলের গোলরক্ষক রুপ্না চাকমার বাড়ি।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী সেরা গোলকিপার রুপনা চাকমার ঘর তৈরি করে দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার দুপুরে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী সেরা গোলকিপার রুপনা চাকমার ঘর তৈরি করে দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা পেয়েই আমরা কাজ শুরু করেছি। নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলুর রহমান বলেন, দুপুরে জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে জানিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী এলজিইডি প্রকৌশলীকে নিয়ে রওনা হয়েছি। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছাব। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারব। আগামী এক মাসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইউএনও।
শিরোপা জয়ের আনন্দের বাড়তি ঢেউ লেগেছে রাঙ্গামাটির দুই পাহাড়ি গ্রামের মানুষদের মাঝে। এমন দুর্দান্ত জয়ে গোটা দেশে আনন্দ উল্লাস। অতিদরিদ্র পরিবারের নারী হয়েও তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে এ সাফল্যে তার মা-সহ গ্রামের লোকজন গর্বিত। রাঙ্গামাটির দুর্গম পাহাড়ে বেড়ে ওঠা নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ও ফুটবলার ঋতুর্পণা চাকমা। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক হওয়ায় রুপ্না চাকমা আর সেরা ফুটবলার ঋতুর্পণা চাকমা দুইজনই বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আর তাই এই দুই দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে চলছে আনন্দ-উৎসব। রুপনা চাকমার মা ও বোন যেন আনন্দে আত্মহারা।
রুপনা চাকমার উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট। কিন্তু এই উচ্চতা দিয়েই দুর্দান্তভাবে গোলপোস্ট সামলে যাচ্ছেন রুপনা। এবারের সাফে তার হাত ফাঁকি দিয়েছে মাত্র একবার। দারুণ এই কীতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে টুর্নামেন্ট সেরা পুরস্কার জিতেছেন রাঙ্গামাটি থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার। রুপনার গায়ে এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষকের ট্যাগ।
তবে তার বাড়ির চিত্র দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, সেটি দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোল রক্ষকের বাড়ি। বাঁশ, চাটাই আর টিনের তৈরি বাড়িটি কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। একটিমাত্র কক্ষে চলে সব কাজ। নিজের বাড়ির এমনি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন রুপনা চাকমা। তবে শিরোপা জয়ের পর বাড়ির ব্যবস্থাও হচ্ছে তার। পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার পর রুপনা চাকমার বাবা মারা যান। তাদের মা অতি দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে তাদের কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় করে তোলেন।
এদিকে ঠিক জন্মের পরে না হলেও শিশু বয়সেই বাবাকে হারান ঋতুপর্ণাও। গত জুনে ভাই পার্বণ চাকমাকেও হারান ঋতুপর্ণা। রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার মোগাছড়ি গ্রামে কলেজ থেকে ফিরে গোসল করতে গিয়েছিলেন ঋতুপর্ণার ভাই পার্বণ চাকমা। সেখানেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় ১৬ বছর বয়সি পার্বণ।
তবে রুপনা ও ঋতুর ছোট বেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল প্র
প্রচণ্ড ঝোঁক। ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাদের অদম্য শক্তি ও পরিশ্রমে আন্তর্জাতিক অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলে ডাক পান রূপনা ও ঋতুপর্ণা। এরপরই তাদের নামটি ইতিহাস হয়ে গেল বলে মন্তব্য করেন তাদের প্রথম কোচ শান্তিমনি চাকমা। রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়মিত মেয়েদের ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অনূর্ধ্ব –১৯ নারী সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ী বাংলাদেশ দলের পাঁচজনই এই বিদ্যালয় থেকে এসেছেন।
রাঙ্গামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শফিউল আজম বলেন, বাংলাদেশের এ জয়ে সারাদেশের মানুষের মতো আমরাও গর্বিত। আমরা চাই রাঙ্গামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে পার্বত্য এলাকায় আরো বেশি খেলোয়াড় গড়ে উঠুক। তাই আমরাও চাই পার্বত্য এলাকায় খেলোয়াড় সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসুক।
গত মঙ্গলবার রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এ দুই কৃতী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা ও রূপনা চাকমার গ্রামের বাড়ি যান। এসময় দুই ফুটবলার পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে ৩ লাখ টাকা উপহার তুলে দিয়ে বলেন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রূপনা ও ঋতুপর্ণা অসাধারণ খেলার নৈপুণ্য দেখিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম কুড়িয়েছে। রূপনা ও ঋতুপর্ণা আজ পুরো জাতির গর্ব। আমরা তাদের নিয়ে গর্বিত। তাদের পরিবারের পাশে আমরা আছি, থাকব।
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে খেলা রাঙ্গামাটির দুই ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা ও রূপনা চাকমার বাড়িতে গিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এসময় তিনি উভয় পরিবারকে দেড় লাখ করে মোট তিন লাখ টাকা পুরস্কার দেন।
পার্বত্য এলাকায় সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রূপনা ও ঋতুপর্ণার মতো আরো বেশি খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে এবং জাতীয় পর্যায়ে দেশের সুনাম বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা ক্রীড়াপ্রেমীদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়