রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

সন্ত্রাসীচক্রের কাছে জিম্মি গুরুদাসপুরবাসী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. মাজেম আলী মলিন, গুরুদাসপুর (নাটোর) থেকে : প্রতিবেশী সফুরা হত্যা মামলায় সাক্ষী দিতে গিয়ে জীবন দিতে হয়েছে জালাল মণ্ডলকে। বাবা হত্যার সাক্ষী দিতে গিয়ে ভুম্বু, জল্লাদ ও বাঘাদের রোষানলে পড়তে হলো জালালের একমাত্র ছেলে বাবু মণ্ডলকে। মাদক বিক্রি, চুরি, ছিনতাই, সড়ক ডাকাতি, অবৈধ অস্ত্র, প্রকাশ্যে দিবালোকে খুন-জখম- এমন কোনো মামলা নেই যে তাদের নামে হয়নি। তবুও প্রকাশ্যে দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। এভাবেই কথাগুলো বললেন উপজেলার যোগেন্দ্রনগর উত্তর পাড়া গ্রামের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ জয়নাল আবেদীন।
জালাল হত্যার সাক্ষী তার ছেলে বাবু মণ্ডল জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে যাওয়ার পথে সকাল ৯টার দিকে একদল সন্ত্রাসী সাক্ষী না দিতে হত্যার হুমকি দেয়। এ সময় তাদের কথা না শুনে নাটোর কোর্টে যান বাবু। সেখানে কোর্ট চত্বরে এক চায়ের দোকানের পাশে চা খেতে বসলে নাটোরের স্থানীয়দের সহযোগিতায় তার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি শহিদুল ইসলাম ওরফে ভুম্বু (৩২), রেজাউল করিম ওরফে বাঘা (২৮), আশরাফুল মণ্ডল ওরফে জল্লাদ (৩৮), সাইদুল মণ্ডল (৩৭), মাহাবুর (২২) ও আতিক (২৫) তাকে মারধর করে। পরে ৯৯৯ এ কল করে প্রাণে রক্ষা পান তিনি। এ বিষয়ে নাটোর কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক মো. নাজমুল হকের সহযোগিতায় নাটোর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। আসামিরা সকলে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর গ্রামের সফুরা বেগম হত্যা, জালাল হত্যা, মিজান নামের এক যুবককে চাকু মারা, হরদোমা গ্রামের মোজামকে প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে পঙ্গু করা, ট্রাক ছিনতাই ও মাদক চোরাকারবারি মামলার অন্যতম আসামি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৩ মে সফুরা বেগমকে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। সেই মামলার সাক্ষি দিতেই ২০১৯ সালের ১৩ জুন বাড়ি থেকে নাটোর আদালতে যাওয়ার পথে দিবালোকে যোগেন্দ্রনগর গ্রামের আকন্দ মেম্বারের ছেলে জালালকে কুপিয়ে দুই হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়। জালালের

চাচাতো ভাই মিজান জানান, একই বছর ১১ ডিসেম্বর রাবারড্যাম এলাকার স্থানীয় চা দোকানদার মঞ্জুর স্টলে তাকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। মিজান তাদের বিরুদ্ধে গুরুদাসপুর থানায় মামলা করেছেন বলে জানান।
হরদোমা গ্রামের মৃত কোবাদ হাজীর ছেলে মোজাম্মেল হক মোজাম বলেন, ২০২০ সালে সাব গাড়ী হাটের পিছনে বেলা ১১টার দিকে কুপিয়ে হাত-পা কেটে পঙ্গু করে রেখেছে আমাকে। এ ব্যাপারে আমি ওই সময় গুরুদাসপুর থানায় মামলা করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিচার পাইনি। চলতি বছরের ৩১ জুলাই বিলহরি বাড়ি গ্রামের আয়েজ উদ্দিনের ছেলে পলাশ ও একই গ্রামের আসকানের ছেলে হাসানের সঙ্গে মাদক নিয়ে বিরোধে বাইক থেকে নামিয়ে কুপিয়ে জখম করে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। এ ঘটনা ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে ট্রাক ছিনতাই, মাদক চোরাকারবারিসহ ১২টির বেশি মামলা রয়েছে গুরুদাসপুর থানাসহ নাটোর কোর্টে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, বিগত জামায়াত- বিএনপির শাসন আমলেও এরা দিবালোকে যোগেন্দ্রনগরের বলাই প্রামানিকের দু চোখ তুলে ফেলে। ওই চক্রটিই বর্তমানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।
এবিষয়ে আসামী সাইদুর রহমান ও মাহাবুর রহমান বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জালাল ও বাবু মন্ডলসহ আমার ভাই মমিন মন্ডলকে হত্যা করেছিল। এখন আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা হত্যা, মাদকের সাথে জরিত নই। এসব বিষয়ে নিউজ না করার জন্য অনুরোধও করেন তারা।
বিয়াঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, তারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এলাকার লোকজন তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে। এলাকার সচেতন সমাজ আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিন বলেন, এসব ব্যাক্তির বিষয়ে অবগত আছি। কিন্তু অধিকাংশ আসামী জামিনে রয়েছে যার কারনে তাদেরকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়