রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

সন্তান ফিরে পেতে ৪ বছর ধরে আদালতে ঘুরছেন তসলিমা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : গর্ভের সন্তানকে ফিরে ৪ বছর ধরে আদালত, পুলিশ, পিবিআই ও সিআইডির দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের তসলিমা খাতুন (৩০)। তিনি সন্তান জন্ম দিয়েও আজ পর্যন্ত একটি বারও তাকে দেখতে পাননি। তসলিমার দাবি, সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরেই ক্লিনিক মালিক প্রথমে মৃত সন্তান হয়েছে বলে জানালেও পরে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সুজন নামের এক পুলিশ সদস্যের কাছে সন্তানকে বিক্রি করা হয়েছে। তারপর থেকে চার বছর হতে চললো আজ পর্যন্ত নিজের সন্তানকে চোখেই দেখতে পাননি তসলিমা।
ঘটনাটি ২০১৮ সালের ২২ জুলাইয়ের। ওইদিন গভীর রাতেই প্রসব বেদনা শুরু হয় তসলিমার। ভোর থেকেই ছিল অঝোর ধারায় বৃষ্টি। বৃষ্টি মাড়িয়ে তসলিমাকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তসলিমাকে জানায়, সন্তানটি মৃত ছিল। এরপর টানা দুই দিন জ্ঞান ফেরেনি তার। জ্ঞান ফেরার পর তসলিমা জানতে পারেন, ক্লিনিকমালিক ও স্বজনেরা মিলে তার সন্তানটি এক দম্পতির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেই সন্তানকে একনজর দেখতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তসলিমা। সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে তালাক হয়ে যায় তসলিমার। এ অবস্থায় স্বামীর পরিবারের কাউকেই পাশে পাননি তিনি। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মেহেরপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চুয়াডাঙ্গা ইউনাইটেড ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন তসলিমা। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলার তদন্তের নির্দেশ দিলে তারা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে চুয়াডাঙ্গা সদর ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য সুজন ইসলাম এবং তার আত্মীয় সরোয়ার হোসেন ওরফে পলাশ ও হীরা খাতুন সন্তানটি দত্তকপত্রের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তবে দত্তকপত্রে তসলিমার করা স্বাক্ষরটি জাল বলে জানান তসলিমা নিজেই। আইনি জটিলতায় দীর্ঘ চার বছর নিজের সন্তানকে একনজর দেখতে পাননি তসলিমা। তিনি বলেন, আমার পেট থেকে জন্ম নেয়া সন্তানের চেহারা দেখার জন্য আমি চার বছর ধরে চেষ্টা করছি। আইনি জটিলতায় এখনো সম্ভব হয়নি। নিজের সন্তানকেও পেতে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হয়। আমার ফুফাতো ভাই সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সালাম হোসেন মিলে পরিবারকে জব্দ করে আমার সন্তানটি বিক্রি করে দেন। অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য সালাম হোসেন বলেন, তসলিমার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় হিংসার বশবর্তী হয়ে মামলায় আমার নাম যুক্ত করেছেন। তার সন্তান জন্মের সময় আমি তো ক্লিনিকেই ছিলাম না। চুয়াডাঙ্গা ইউনাইটেডে ক্লিনিকের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, তসলিমার সন্তানটি তার পরিবারের সদস্যরা দত্তক দিয়ে থাকতে পারেন। এখানে হয়রানি করার জন্য ক্লিনিকের নামে মামলা করা হয়েছে। দত্তক নেয়া পুলিশ সদস্য সুজন আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, পিবিআইএর দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর নারাজি আবেদন করেন তসলিমা। এরপর ২০১৯ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের দায়িত্ব দেন আদালত। বর্তমানে সিআইডি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। মেহেরপুর সিআইডির ওসি ছাইয়েদুর রহমান বলেন, তসলিমার সন্তানটি দলিল করে দত্তক দেয়া হয়েছে। সেগুলো সঠিক নাকি ভুল জানতে স্বাক্ষর এক্সপার্টের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন এলে আদালতে জমা দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়