রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীরা দ্বিমুখী চাপে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিমা খাতের মুখ্য নির্বাহীদের সংকট বিরাজ করছে। এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) বিধিনিষেধ, অন্যদিকে কিছু কিছু মালিকদের অলিখিত চাপ। সব মিলে দিমুখী চাপে পড়েছেন বিমা কোম্পানিগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা। আসলে কোনোটি সামাল দেবেন বিমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীরা। এমন দ্বিমুখী চাপে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীরা।
বিমা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিনিষেধ না মানলে হবেন অপরাধী; জুটতে পারে জেল-জরিমানা। আবার মালিকদের কথা না শুনলেও থাকবে না চাকরি; বন্ধ হবে রুটি-রুজির পথ। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানির উন্নয়ন বা গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কোনোটিতেই মনোযোগ দিতে পারছেন না বিমা কোম্পানিগুলোর মুখ্য নির্বাহীরা। ফলে নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নের পরিবর্তে এখন তারা চাকরি রক্ষার কৌশল রপ্ত করতেই ব্যতিব্যস্ত। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই দেশের বিমা খাতে দক্ষ জনবলের চরম সংকট। তার ওপর মালিকদের অনাকাক্সিক্ষত চাপ এই সংকট আরো বাড়িয়ে তুলছে। নেতিবাচক ইমেজ ও কাঠামোবিহীন বেতন-ভাতার কারণে এমনিতেই উচ্চ-শিক্ষিতরা বিমা পেশায় আসতে চায় না। আবার বিমা পেশায় যাদের ডিগ্রি আছে এবং কিছুটা দক্ষতাসম্পন্ন তাদের অনেকেই এখন পেশা বদলের কথা ভাবছেন নানামুখী চাপে।
বিশ্লেষকদের মতে, মুখ্য নির্বাহীরা আইন মেনে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে তা হবে দেশের বিমা খাতের উন্নয়নে বড় অন্তরায়। ক্ষুণ্ন হবে গ্রাহকস্বার্থ। মুখ থুবড়ে পড়বে দক্ষ জনবল গঠনের বিষয়টিও। ফলে বিমা খাতের সংকট আরো বাড়বে। তাই বিমা খাতের উন্নয়নের স্বার্থে এখনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী জানিয়েছেন, আমরা কোন দিকে যাব! একদিকে কোম্পানির মালিকপক্ষের চাপ, অন্যদিকে আইন মানতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ। আমরা তো দিশাহারা হয়ে পড়ছি। কর্মদক্ষতা বা যোগ্যতা বাড়ানোর পরিবর্তে এখন আমাদের চাকরি রক্ষার কৌশল রপ্ত করাই যেন গুরুত্বপূর্ণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় একটি নন-লাইফ বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, মুখ্য নির্বাহীরা আসলে সবসময়ই বাধার সম্মুখীন হয়। অনেকে মনে করেন যে, মুখ্য নির্বাহীরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পায়; গাড়ি, বেতন-ভাতা ইত্যাদি নানান সুবিধা থাকে তাদের। অথচ একজন মুখ্য নির্বাহীকে কত রকমের যে চাপ সহ্য করতে হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তিনি বলেন, আইডিআরএ সার্কুলার দিয়ে বলে এটা ঠিক রাখেননি, ওটা ঠিক রাখেননি, ওইটা করেননি। ওইদিক দিয়ে ডাইরেক্টররা বলে ব্যবসা না বাড়ালে তোমাকে রাখা যাবে না; তুমি ব্যবসা বাড়াও। আর তোমাকে ব্যবসা বাড়াতে গেলে কমিশন বেশি দিতে হবে। কমিশন বেশি দিতে হলে সেটা অ্যাডজাস্ট করতে হবে। আর অ্যাডজাস্ট তোমাকেই করতে হবে। কিভাবে করবে সেটা তোমার ব্যাপার; আমরা এগুলো জানি না। এক্ষেত্রে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও এক প্রকার বাধ্য হয়েই তখন একজন মুখ্য নির্বাহীকে আনফেয়ার মিনস (অসাধু উপায় অবলম্বন) করতে হয়। তাছাড়া তার তো আর কোনো উপায় নেই। অথচ এই আনফেয়ার মিনসের দায় কোম্পানি বা বোর্ড কেউই বহন করবে না। সেটা মুখ্য নির্বাহীকেই বহন করতে হয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তখন মুখ্য নির্বাহীকে ধরে, গণমাধ্যমও তাকেই ধরে বলেন, নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ওই মুখ্য নির্বাহী।
নতুন প্রজন্মের একটি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী বলেন, আমাদের নিয়োগ হয় চুক্তিভিত্তিক। আর নবায়ন হয় পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। আমি একটি বিমা কোম্পানিতে আছি, হয়তো আগামীতে অন্য কোনো কোম্পানিতে থাকব। তবে সেটা নির্ভর করবে আমার যোগ্যতা ও দক্ষতার ওপর। আমি ভালো করলে আরো ভালো সুযোগ-সুবিধা পাব এবং বড় কোনো কোম্পানিতে আমার চাকরি হবে। কিন্তু আমার দ্বারা যদি নেতিবাচক কিছু ঘটে, সেটা হবে আমার ক্যারিয়ারের জন্য বড় বাধা। বন্ধ হয়ে যেতে পারে আমার রুটি-রুজির পথ। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি কখনো অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়াতে চাইব না। চাইব না কোন অনাকাক্সিক্ষত অনিয়মেরও ভাগিদার হতে। কিন্তু বিমা কোম্পানির মালিকদের প্রত্যাশা আর বর্তমান বাজার পরিস্থিতি-কোনটাই আমাদের ভালো থাকতে চাওয়ার অনুকূলে নয়। চাকরি বাঁচাতে গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মালিকদের অনিয়মের সায় দিতে হয়। আর সেই অনিয়মের দায় এসে চাপে আমাদের ঘাড়ে। লাইফ বিমা কোম্পানির এই মুখ্য নির্বাহী আরো বলেন, আমরা এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে চাই। আইন মেনে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই। নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাই। গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা, কোম্পানির উন্নয়ন- সার্বিকভাবে বিমা খাতের স্বার্থে আমরা কাজ করতে চাই। সেক্ষেত্রে আইডিআরএর পক্ষ থেকে আমাদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের চাকরির নিশ্চয়তা দাবি করে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরামের (বিআইএফ) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম নুরুজ্জামান বলেন, একটি কোম্পানির সকল দায়দায়িত্ব মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার। আমরা কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে একদিকে যেমন বোর্ডের চাপে থাকি। অন্যদিকে তেমনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পরিপালনের চাপের মধ্যে থাকতে হয়। অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে আমাদের অনিয়ম মেনে নিতে হয়। আমরা এ ক্ষেত্রে আপত্তি করলে ক্ষেত্রে বিশেষে চাকরিও হারাতে হয়। মালিকপক্ষ এর কোনো দায়দায়িত্ব নিতে চান না। তাই আমরা চাই অনাকাক্সিক্ষতভাবে যেন কোনো মুখ্য নির্বাহীর চাকরি না যায় সে বিষয়টিতে কর্তৃপক্ষ মনোযোগ দিবেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে যখন সহযোগিতা করা হবে তখন মুখ্য নির্বাহীদের কাজের আগ্রহ ও আন্তরিকতা বাড়বে। আইনের বিধিবিধান ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মেনে কোম্পানি পরিচালনা করলে ব্যবসা বাড়বে। এর ফলে মালিক ও গ্রাহকরা লাভবান হবে। এগিয়ে যাবে দেশের সম্ভাবমনাময় এই খাত।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্বাহী পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও সংস্থাটির মুখপাত্র এস এম শাকিল আখতার বলেন, আমরা বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ম্যানেজমেন্টের এই চাপের ক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাহীদের সহযোগিতা করা বা এটার সমাধান দেয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। হার্ডলাইনে গিয়ে এটা কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। খুব শিগগিরই আমরা হয়তো বিষয়টি নিয়ে বসব। কর্তৃপক্ষের সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানান আইডিআরএর মুখপাত্র।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়