রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

জেলায় জেলায় চলছে নারী ফুটবলারদের বরণের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : হিমালয়কন্যা নেপালে ইতিহাস গড়েছেন বাংলার নারী ফুটবলাররা। গত সোমবার কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের স্বাদ পায় তারা। এরমধ্য দিয়ে ফুটবলাররা গর্বিত করেছেন জাতিকে, ভাসিয়েছেন আনন্দে। গতকাল বুধবার দেশে ফিরেছেন তারা। তাদের এই ঘরে ফেরা রাঙাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় সরকার, দেশের মানুষ।

নারী ফুটবলার সাবিনার দলের প্রত্যেকেই উঠে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে, যেখানে মেয়েরা ঘরের বাইরে বের হলেই নানা কটূক্তির শিকার হতো। মেয়েরা ছেলেদের মতো ফুটবল খেলবে, এটা গ্রামের মানুষের কাছে মেনে নেয়াটা ছিল খুব কঠিন। শুধু সমাজের প্রতিবন্ধকতাই নয়, ছিল পারিবারিক প্রতিবন্ধকতাও। তবে সাফ জয়ে এখন খুশি তাদের নিজ নিজ জেলার বাসিন্দারা। মেয়েদের আগমনকে ঘিরে জেলায় জেলায় চলছে উৎসবের আমেজ। আমাদের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে এসব জানা গেছে।
ধোবাউড়ায় (ময়মনসিংহ) মিষ্টিমুখ : সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পুলক কান্তি চক্রবর্তী মেয়েদের অভিভাবকদের সংবর্ধনা দিয়েছেন। গতকাল বুধবার বিকালে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক প্রথমে সানজিদা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় করে মিষ্টিমুখ করান। এ সময় নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা তাদের হাতে তুলে দেন। পরে কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, মারজিয়া আক্তার, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা, তহুরার অভিভাবকদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এ সময় প্রত্যেকের অভিভাবককে নগদ পঞ্চাশ হাজার করে টাকার খাম তুলে দেয়া হয়। যদিও এ দিনটিকে ঘিরে তাদের পরিবারে আগে থেকেই একটি অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করছিল। এই মেয়েরা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সম্মান অক্ষুণ্ন রেখে চূড়ান্ত সফলতা নিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখেছে। এ কারণেই এখন ধোবাউড়া উপজেলায় বিরাজ করছে এক অতুুলনীয় আনন্দ-উৎসব।
রুপনা ও রিতুপর্ণা দেশে ফেরার আনন্দে ভাসছে রাঙ্গামাটির মানুষ : সাফ ফুটবল জিতে তিনদিন পর রাঙ্গামাটি ফিরে এসে নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। তাদের সঙ্গে রাঙ্গামাটির দুই সোনার কন্যাও দেশে ফিরেছেন। তাদের দেশে ফেরার আনন্দ বইছে রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা ঘিলাছড়ির ভূয়াদম ও কাউখালীর উপজেলার মঘাছড়িতে। প্রতিনিয়ত তাদের বাড়িতে ছুটছে প্রশাসনের লোকজন ও রাঙ্গামাটির কর্মরত সাংবাদিকরা। এই যেন অন্যরকম এক আনন্দ উপভোগ করছে গ্রামবাসী। তারা বলছে রুপনা ও রিতুপর্ণার জন্যই আমাদের গ্রামের উন্নয়ন হবে।
নানিয়ারচরের স্থানীয়রা বলেন, পাহাড়ের সোনার কন্যারা আজ দেশে এসেছে। তাদের দেশবাসী সম্মাননা দিচ্ছে। আমরা গ্রামবাসীও রুপনাকে সম্মাননা দেব। আমাদের মেয়েরদের আর ঘরে বসিয়ে রাখব না। মেয়েদেরও মাঠে খেলতে পাঠাচ্ছি। তারাও একদিন রুপনা হবে।
রুপনা চাকমার মা কালা সোনা চাকমা বলেন, আমার মেয়ে দেশের জন্য ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছে। তার বাড়ি ফেরার আনন্দে রয়েছি আমি। দুবেলা খেতে না দেয়া মেয়ে আজ আমার জন্য খাবার জোগার করে দিয়েছি। আজ আমি মরে গেলেও শান্তি পাব।
ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কোচা শান্তিমনি চাকমা বলেন, এ জয়ে সারাদেশের মানুষের মতো আমরাও গর্বিত। আমরা চাই, রাঙ্গামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে আরো বেশি পার্বত্য এলাকায় খেলোয়াড় গড়ে উঠুক। রুপনা ও রিতুপর্ণা আমার হাতেই বড় হয়েছে। তাদের দেশে ফেরার আনন্দে আমিও গর্বিত।
এদিকে রিতুপর্ণার বাড়িতে চলছে খুশির বন্যা। তার বড় বোন বলেন, সকাল থেকে প্রশাসনের লোকজন এসে আমাদের বাড়িতে ভিড় করছে। সাংবাদিকরাও প্রতিনিয়ত আসছে। আমাদের আনন্দের শেষ নেই। গ্রামবাসীরা খুশি। তারা বলছেন, আমার বোনের কারণে আমাদের গ্রাম আজ দেশবাসীর কাছে পরিচিত। আমার বোন দেশে ফিরে এসেছে। কখন বাড়ি আসবে এই আনন্দে মেতে আছি।
সাতক্ষীরাবাসীর ভালোবাসার মধ্যেই ঘরভাঙার আতঙ্কে নারী ফুটবলার : দীর্ঘ অপেক্ষা প্রহর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে বাংলার বাঘিনীরা। জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। সাফের নতুন রানি হওয়ার পর লাল-সবুজের মেয়েরা গতকাল দুপুরে ঢাকায় ফিরেছেন। তাদের এই শিরোপা জেতার মাধ্যমে উভয়ে মিলিয়ে দীর্ঘ ১৯ বছরের শিরোপা না জেতার আক্ষেপের অবসান হয়েছে।
সাবিনার হাতে শিরোপা দেখতে পেয়ে ভীষণ তৃপ্ত সাতক্ষীরাবাসী। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর থেকেই সাতক্ষীরা শহরের সবুজবাগ এলাকায় অবস্থিত সাবিনাদের বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ সময় সাবিনার পরিবারকে অভিনন্দন জানান তারা।
রাণীশংকৈলে উৎসবের আমেজ : ইতিহাস গড়া খেলায় অংশ নিয়ে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড প্রমিলা ফুটবল একাডেমির দুই কৃতী খেলোয়াড় স্বপ্না রানি ও সোহাগী কিসকু। ২১ সেপ্টেম্বর নেপাল থেকে দেশে ফিরলে ঢাকা বিমানবন্দরে নারী ফুটবলারদের বরণ করে নিতে হাজারো মানুষের ঢল নামে। উপজেলা জুড়ে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে বরণ করা ছবি তেমনিভাবে তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকে। টেলিভিশনের সামনে বসে অনেকেই এ বরণ করা উপভোগ করছেন দল বেঁধে।
দরিদ্র স্বপ্না রানির বাবা নিরেন চন্দ্র বলেন, আমার ৩ মেয়ে ১ ছেলে সব চেয়ে ছোট হচ্ছে স্বপ্না রানি। সে আজ জাতীয় দলের খেলোয়াড়। শুধু দারিদ্র্য নয়, একসময় আমার পরিবারকে লড়াই করতে হয়েছে ধর্মীয় কুসংস্কারের সঙ্গে। কিন্তু সে বাধা উপেক্ষা করে আমার মেয়ে খেলার মাঠে যেত প্রতিদিন। তার খেলার সামগ্রী বুট, জার্সি, ওষুধ এবং মাঠে যাওয়ার জন্য একটি বাইসাইকেল কিনে দেন রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড প্রমিলা ফুটবল একাডেমির পরিচালক সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম। আজ চ্যাম্পিয়ান হওয়ায় আমায় খুব আনন্দ লাগছে।
সোহাগী কিসকুর বোন ইপিনা কিসকো বলেন, বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল জয়ী হয়েছে। এতে আমার বোন রয়েছে। আমরা সবাই খুশি আর ঠাকুরগাঁও জেলাবাসী গর্বিত। এ প্রসঙ্গে রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড প্রমিলা ফুটবল একাডেমির পরিচালক সাবেক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম বলেন, নারী ফুটবল দল চ্যাম্পিয়ান হওয়ায় আমাদের জন্য গর্ব। এ বিজয় আমাদের জন্য যেমন গর্বের তেমনি ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য একটু বেশি গর্বের।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, বাংলাদেশ ফুটবল দলকে অভিনন্দন জানাই। সেই সঙ্গে এ উপজেলার দুজন খেলোয়াড় জাতীয় দলের হয়ে খেলায় অংশ নেয়ায় আমরা গর্বিত। ৫ অক্টোবর ছুটিতে আসলে তাদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হচ্ছে। নতুন রূপে সাজানো হবে রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমিক দলকে।
স্বপ্নাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি রংপুর : সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ী দলের অন্যতম সদস্য সিরাত জাহান স্বপ্নাকে বরণ করে নিতে উন্মুখ এখন রংপুরবাসী। গতকাল বুধবার দেশের মাটিতে পা রাখার পর নিজ এলাকা রংপুরের সদ্যপুস্করিনী ইউনিয়নের পালিচড়ার জয়রাম গ্রামসহ পুরো জেলার মানুষের যেন আর তর সইছে না। দিনক্ষণ ঠিক না হলেও নানা আয়োজনে তাকে বরণ করে নিতে চলছে আলাপ আলোচনাসহ প্রস্তুতিপর্ব।
স্বপ্নার বাবা মোকছার আলী বলেন, খুব আনন্দ লাগছে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল জয়ী হয়েছে। এতে আমার মেয়ে খেলেছে। আমার মেয়ের জন্য সকলে দোয়া করবেন। সে যাতে দেশের জন্য আরো ভালো কিছু করতে পারে। মা লিপি বেগম জানান বলেন, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে তার ফুটবল খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। মেয়েকে খব কষ্ট করে মানুষ করছি। আজ তার জন্য গর্ববোধ হচ্ছে।
নমিতাকে বরণ করতে প্রস্তত গোপালপুরবাসী : কৃষ্ণার মা নমিতা রানি সরকার বলেন, আমরা খুবই গরিব। এক সময় টাকার অভাব ও গ্রামের মানুষের কটুকথার কারণে মেয়েকে ফুটবল খেলতে বারণ করেছিলাম। তারপরও কৃষ্ণার ইচ্ছার কাছে কটূক্তি করা মানুষজন হেরে গেছে। সে এখন দেশের গৌরব। সবাই তার প্রশংসা করছে। তবে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি হচ্ছে না আমাদের। এক মেয়ের ওপর নির্ভর করে সংসার খরচ ও ছেলের পড়াশোনা চলে।
কৃষ্ণার বাবা বসুদেব সরকার বলেন, ছেলে খেলোয়াড়রা অনেক টাকা বেতন পায়। অথচ মেয়েরা সামান্য সম্মানী পায়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও দেশসেরা হয়েছে। সুতরাং তাদের কেন ন্যায্য বেতনভাতা দেয়া হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়