রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল : শয্যা ও জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুর জেলার ২৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল। জামালপুর ছাড়াও কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, শেরপুর জেলার মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। দীর্ঘ এক বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে হাসপাতালটিতে। আর এ কারণে হাসপাতালে আগত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। চরম দুর্ভোগে পড়ছেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা।
রোগী ও স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালে কয়েক দিন ভর্তি থাকার পরও পাওয়া যায় না বেড। শয্যার সংকট থাকায় বারান্দা ও হাঁটাচলার রাস্তায় থাকতে হয় তাদের। এছাড়া জায়গার সংকট থাকায় এক বেডে থাকতে হয় একাধিক রোগীকে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মশিউর রহমান বলেন, আমি এখানে ৭ দিন ধরে ভর্তি। এখানে কোনো বেড নেই। পাটি নিয়ে এসে থাকতে হয়। তাও অনেক সমস্যা। এক পাটির ভেতরে দু’তিনজন এসে বসে থাকে। ফ্লোর অনেক শক্ত। আমাদের থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
চিকিৎসাসেবা নিতে আসা আরেক রোগী সুজন মিয়া বলেন, এখানে বেডের খুব সমস্যা। এক বিছানার মধ্যে দুইজন বসে আছি। খুবই কষ্ট হয়ে গেছে। মন চাইলে একটু ভালো মতো শুইতে পারি না, বসতে পারি না।
এভাবে কি থাকা যায়? অসুস্থ নাতিকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন মানিক মিয়া। তিনি বলেন, এই জায়গার পরিবেশ তেমন সুবিধাজনক নয়। দুর্গন্ধ, জায়গায় জায়গায় ময়লা। সিট নেই। একটা সিটে দুই-তিনজন করে রোগী। এই জায়গায় এসে রোগী আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা প্রদানে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। অতিরিক্ত রোগী ভর্তি থাকায় হাসপাতালে তৈরি হয়েছে নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশ। এতে আরো বিপাকে পড়েছেন রোগীরা।
বকুল মিয়া নামে একজন রোগী বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেল আমি আসছি। আমার কোনো তথ্য, কোনো খোঁজ কেউ নেইনি। ডাক্তারের কোনো সাজেশন পাওয়া যাচ্ছে না। এদের তত্ত্বাবধান দুর্বল। কোনো রোগীর তেমন তদারকি নেই। খুব কষ্টের মধ্যে আছি।
আরেক রোগীর স্বজন হাফিজুর রহমান বলেন, এই জায়গার পরিবেশ অতো সুবিধাজনক হচ্ছে না।
আর ডাক্তারও ঠিকমতো খবর নিচ্ছে না। নার্সরা ঠিকমতো খোঁজ নিচ্ছে না। আবার ডাক্তার রুমে ঠিকমতো থাকে না। এরকম অবস্থায় আছি আমরা। আমরা গরিব মানুষ। তাই এই জায়গায় আসছি। টাকা থাকলে তো প্রাইভেট ডাক্তারের কাছেই যেতাম। পেটের ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগী শাওন মোল্লা বলেন, এখানে কোনো পরিবেশ নেই। সাইডে কুকুর-বিড়াল বসে আছে। সরকার যদি এ বিষয়ে একটু পদক্ষেপ নেয় তাহলে হাসপাতলের চিকিৎসসেবা আরো উন্নত হবে। এতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের এমন রুগ্ণ অবস্থা দূর করে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও অতিরিক্ত শয্যা প্রদানের দাবি রোগীর স্বজন ও জেলাবাসীর।
রমিছা বেগম নামে একজন রোগীর স্বজন বলেন, দুই দিন ধরে আছি। এখন পর্যন্ত বেড পাইনি। বিছানা পাতার জায়গটাও নেই।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা মেহেদী হাসান বলেন, এখানে প্রচুর রোগী। কিন্তু বেড নেই। আমরা খুব কষ্টে আছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই আবেদন। আমরা এখানে বেড চাই। আর কিছু চাই না।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে ১০ শয্যার জনবল নিয়োগ দেয়া আছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই, নার্স নেই, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নেই। সব মিলিয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা হ-য-ব-র-ল। আমরা অনতিবিলম্বে ২৫০ শয্যার জনবল নিয়োগ চাই। হাসপাতালের রুগ্ণ অবস্থা দূর করে রোগীদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করার সুযোগ দেয়া হোক।
এসব বিষয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, এই হাসপাতাল এখন অস্থায়ী শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের দরুণ রোগীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে। শুধু আমাদের জামালপুর না। পাশাপাশি কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং শেরপুরের সব রোগী আমাদের এই হাসপাতালে আসে। আমরা আমাদের এই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী নিয়েও তাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় হচ্ছে অবকাঠামোগত সমস্যা। পাশাপাশি ডাক্তার, নার্সদের বসার রুমের সংকট দেখা দিয়েছে। যদি এই আবাসনগত সমস্যার সমাধান করতে পারি, হাসপাতালের ভবন যদি আরো সম্প্রসারিত হয়, তাহলে ইনশাল্লাহ আমরা এইসব রোগীদের ভালো মানের সেবা দিতে পারব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়