রাজপথ বিএনপির বাপ-দাদার সম্পত্তি নয় : কাদের

আগের সংবাদ

সাফ জয়ীদের লাগেজ ভাঙল কে

পরের সংবাদ

কমছেই না ডলারের দাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাজারে ডলারের সংকট প্রকট। উদ্যোক্তারা চাহিদা অনুযায়ী আবশ্যকীয় পণ্যেরও এলসি খুলতে পারছেন না। এর মধ্যে ডলারের দাম নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি প্রয়োগেও উত্তাপ কমাতে পারছে না। গতকাল বুধবার খোলাবাজারে ডলারের দাম ১১৫ টাকায় উঠেছে। সকালে রাজধানীর একাধিক মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। এছাড়া এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করে প্রতি ডলারের দাম নিচ্ছে ১০৮ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, বিদেশ ভ্রমণে বা স্টুডেন্ট ভিসায় বাইরে যারা যাচ্ছেন তারা বেশির ভাগই ব্যাংকগুলোর কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিচ্ছেন। যদিও বিষয়টিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ডুয়েল কারেন্সি বা দ্বৈত মুদ্রার এসব কার্ড দিয়ে দেশে বসেই বিদেশের হোটেল বুকিং, নির্দিষ্ট পরিমাণে কেনাকাটাসহ নানা খরচ করা যাচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসা, পড়াশোনা ও কেনাকাটাসহ নানা কারণে বিদেশে যাওয়ার সময় অনেকেই কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা এনডোর্সমেন্ট করে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলারের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে বিদেশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মে থেকে জুলাই এই তিন মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪২ শতাংশ বেশি। এরমধ্যে গত জুলাই মাসেই লেনদেন হয়েছে প্রায় ৪৪২ কোটি টাকা, যা একক মাস হিসেবে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড। গত বছরের একই মাসের চেয়ে এটা প্রায় ২৭৫ শতাংশ বেশি।
ডলার-সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) শীর্ষস্থানীয় নেতারা ১১ সেপ্টেম্বর এক সভায় ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেন। এতে রপ্তানি আয়ে প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা, প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা দাম বেঁধে দেয়া হয়। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে এক টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকিং লেনদেনের পাশাপাশি মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোর ডলার কেনাবেচার দামও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর নগদ ডলার বিক্রির দরের চেয়ে সর্বোচ্চ দেড় টাকা মুনাফা করতে পারবে মানি চেঞ্জারগুলো।
এদিকে, সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকের সফররত প্রতিনিধিদলের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা সফররত বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদল। তারা বলেছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে একটি পর্যায়ে মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার মান একটি যৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছবে। এছাড়া প্রতিনিধিদলটি ব্যাংকিং খাত সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর দিয়েছে। এ খাতে প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংক আর্থিক সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, বিনিময় হার এখন বাজারভিত্তিকই আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেভাবে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা করছে, বাংলাদেশ ব্যাংকও আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা করছে। আর্থিক খাত সংস্কারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, নিজস্ব উদ্যোগেই আর্থিক খাত সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। এটি চলমান থাকবে। এর মাধ্যমে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে ঢাকা সফর করছে। তারা আর্থিক খাতের সংস্কার ও বিনিময় হার নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অফিসিয়ালি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার অনুসরণ করছে। তবে মাঝেমধ্যে হস্তক্ষেপ করে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখছে। বিশ্বব্যাংক এ ধরনের হস্তক্ষেপ পুরোপুরি বন্ধ করতে বলেছে। তারা মনে করে, বিনিময় হার পুরোপুরিই বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিনিময় হার বাজারভিত্তিকই রয়েছে। মুদ্রানীতির উপকরণগুলো মাঝেমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবহার করে বাজারকে স্থিতিশীল রাখে। এটি বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই করে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ না করলে বরং মুদ্রাবাজার আরো অস্থির হয়ে উঠবে। বৈঠকে বিশ্বব্যাংক আর্থিক খাত সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছে। এজন্য তারা আর্থিক সহযোগিতা করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ খাতে নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কার চালিয়ে নেয়ার বিষয়টি তাদের জানিয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানিসহ বিভিন্ন আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই তুলনায় বাড়েনি রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। ফলে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে প্রতিদিন ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। সেখান থেকে ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে ৯৬ টাকায় উন্নীত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলোয় ডলার কেনাবেচা হচ্ছে আরো ১২ টাকা বেশি দামে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়