করোনা পরিস্থিতি : সংক্রমণের হার ১১.৬০ শতাংশ

আগের সংবাদ

খোলা ছাদে খুশির নিনাদ : মেয়েদের ঘিরে শোভাযাত্রায় লাখো মানুষ

পরের সংবাদ

বিল্টু চোর পড়ল ধরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিতু এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষার ছুটিতে গ্রামে নানুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। নানুর বাড়িতে এসে জিতুর যে কী আনন্দ! নানুর বাড়িতে এলে তার আদরের শেষ নেই। নানির হাতের মজার মজার খাবার, রাতের বেলা উঠানে বসে ভূতের গল্প শোনা, নানুর সঙ্গে সোনাইমুড়ি বাজারে গিয়ে মিষ্টি খাওয়া থেকে মামাতো ভাই রবিনের সঙ্গে টইটই করে ঘুরে বেড়ানো। রবিন জিতুর চেয়ে একবছরের ছোট। কিন্তু লম্বায় রবিনই জিতুর চেয়ে বড়। দুজনে একসঙ্গে হলে যে কী আনন্দ হয় বলে বোঝানো যাবে না।
আজ সকালে খাওয়ার পর জিতু বারান্দায় বসে আছে। এমন সময় সেখানে এলো রবিন।
– জিতু ভাইয়া, তুমি আমাকে ছাড়া নাস্তা করে ফেললে?
– হ্যাঁ, করেছি। তুই যে আমাকে ছাড়া বাজারে গিয়েছিস একবারও বলেছিস?
রবিন এরকম উত্তর আশা করেনি। আঁকুপাঁকু করতে করতে বলল- ঠিক আছে ভাইয়া, ভুল হয়ে গেছে। এবার থেকে বাজারে গেলে তোমাকে সঙ্গে করেই নিয়ে যাব।
বিকালবেলা ওরা দুজন মিলে পাশের আমবাগান দেখতে বের হলো। কিছুক্ষণ পর আমবাগানে পৌঁছে গেল। পুরো আমবাগান ঘুরে ঘুরে দেখল দুজনে। এক সময় জিতু বলল- রবিন, বলতে পারিস এই আমবাগান কত বছর ধরে আছে?
– ঠিক তো বলতে পারব না। তবে আমার জন্মের আগে থেকে তো হবেই।
– হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। অনেক পুরোনো বাগান।
এসব কথাবার্তার মধ্যেই খালের ওপার থেকে হইহুল্লোড় শব্দ ভেসে এলো।
খালের ওপারে কী হচ্ছে রে রবিন? উৎসুক হয়ে জানতে চাইল জিতু।
– ফুটবল খেলা ভাইয়া। তালতলী ইয়াং স্পোর্টিং ক্লাবের উদ্যোগে। আজ মনে হয় ফাইনাল।
– তাহলে চল না ফাইনাল ম্যাচটা দেখে আসি।
– তুমি যাবে?
– অবশ্যই যাব।
– চল তাহলে।
দুজনে খালের ওপারে ফুটবল খেলার ফাইনাল ম্যাচ দেখতে গেল। ম্যাচ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।
– ভাইয়া, সন্ধ্যা তো হয়ে গেল। আমাদের বাড়িতে ফিরতে হবে। তা না হলে দাদু চিন্তা করবে। বলল রবিন।
– ঠিক বলেছিস। চল বাড়ির দিকে রওনা দেই।
তালতলীর মাঠ থেকে দুজনে হাঁটা শুরু করল। খাল পার হতেই রাত হয়ে গেল। আকাশে চাঁদ উঠেছে। পূর্ণিমার চাঁদ। রূপার থালার মতো। চাঁদের আলোয় সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তাদের হাঁটতে কোন অসুবিধাই হচ্ছে না। দুজনে হাঁটতে হাঁটতে আমবাগানের কাছে চলে এলো। আমবাগানের ভেতর দিয়ে রাস্তা। চাঁদের আলোয় রাস্তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। কিছুদূর যেতেই সামনে থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ পেল রবিন। ভয় পেয়ে জিতুর হাত শক্ত করে ধরে ভীতু রবিন।
– ভাইয়া, শব্দটা শুনতে পেলে?
– হ্যাঁ, তাতে কী হয়েছে?
– দাদিমা বলে, রাতেরবেলা নাকি আমবাগানে ভূত ঘুরে বেড়ায়।
– কী রে রবিন। তুই এই ডিজিটাল যুগে ভূতের ভয় পাস। আরে ভূত বলে কিছু হয় না।
– না, না ভাইয়া, ভূত আছে। এই তো কিছুদিন আগে তুতুলের আম্মুকে ধরেছিল। ভাইয়া সামনের আমগাছাটায় দেখছ, দুটো পায়ের মতো কিছু দেখা যাচ্ছে?
– হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি। হবে হয়তো কোন জীবজন্তুর পা।
– না ভাইয়া, ওটা অন্য কারো পা না। ওটা ভূতেরই পা।
– কী বলিস যা-তা। দাঁড়া আমি একটু ঠিক করে দেখি।
– বেশি পাকামো করো না কিন্তু।
– দেখে তো মনে হচ্ছে, ওর পায়ে লাল রঙের জুতা। চাঁদের আলোয় একদম পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। দেখ ভালো করে দেখ।
– হ্যাঁ, তাই তো।
– তাহলে বুঝলি ওটা ভূতটুত কিছুই না।
– না ভাইয়া, ওটা ভূতেরই পা।
– আরে বোকা, ভূত কী কখনো জুতা পরে?
– এখনকার ভূত ডিজিটাল ভূত। শুধু জুতাই না ওরা নাকি রাতেরবেলা সানগøাসও পরে।
– কী বলিস যা-তা। ওটা নিশ্চয়ই কোনো মানুষের কাজ। যে আমাদের ভয় দেখানোর জন্য এসেছে। দাঁড়া এখুনি ওকে ধরে ফেলব।
– না, ভাইয়া তুমি যাবে না। জানি না ওটা কোন ভূত। গেছো ভূত হলে তো ঘাড় মটকে ছাড়বে। আমি তোমাকে যেতে দেব না।
– ধুর বোকা আমার কিছু হবে না।
– তুমি যদি যাও তাহলে আমি কিন্তু তোমার সঙ্গে আর কোনোদিন কথাই বলব না।
– আচ্ছা বাবা, যাব না।
মাথা নিচু করে কী যেন একটা ভাবতে থাকল জিতু। মুখ উঠিয়ে আবার আমগাছের দিকে তাকাল। এবার আর সেই পা দুটো দেখতে পেল না। নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেছে। তারপর দুজনে হনহন করে হাঁটা শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেল বাড়িতে। রবিন যেন প্রাণ ফিরে পেল।
সকালবেলা মানুষের হইচইয়ে………….. ঘুম ভেঙে গেল জিতুর। বাইরে গিয়ে শুনতে পেল, রহিমদের বাড়িতে নাকি কাল চুরি হয়েছে। রহিমের মার সোনার গহনাসহ নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে গেছে চোর।
এরকমভাবে বেশকিছু দিন ধরে গ্রামে সবার কিছু না কিছু চুরি হয়েই চলছে। কিন্তু কেউ চোরটাকে ধরতে পারছে না। জিতু মনে মনে ভাবে, লাল জুতা পরা পা দুটোর কথা। নিশ্চয়ই চোর ওই লোকটাই।
সেদিন রাতে রবিনকে বলল- দিনদিন তোদের গ্রামে চুরির ঘটনা বাড়ছে, খেয়াল করেছিস।
– হ্যাঁ, ভাইয়া।
– শোন, চোরের খবর আমি পেয়ে গেছি। চল ধরতে যাই। চোর আজ পালাতে পারবে না।
– তুমি কী করে জানলে?
– ও তুই বুঝবি না। তুই আমার সঙ্গে যাবি কিনা বল?
– অ্যা… চল তাহলে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলো রবিন।
ঘর থেকে চুপিচুপি বের হয়ে দুজনে হাঁটা শুরু করল। কিছুক্ষণ পর তারা আমবাগানের কাছাকাছি পৌঁছে গেল। আমবাগানের কাছে এসে রবিন বলল- ভাইয়া, এখানে চোর কোথা থেকে আসবে? এটা তো ভূতের আস্তানা।
– চোর এখানেই আছে। আর ভূত-টুত বলে কিছু নেই এখানে।
– আমার ভীষণ ভয় করছে।
– ভয় করলে চলবে না। মনে সাহস রাখ। ভূত বলে কিছু হয় না রে।
রবিন জিতুর পিছুপিছু হাঁটছে। আর চাপা স্বরে কী যেন আওড়াচ্ছে। কয়েক মিনিট হাঁটার পর তারা পৌঁছে গেল সেই আমগাছটার কাছে। দুজনের চোখে পড়লো সেই পা দুটো।
জিতু বলল…
– আমি চোর ধরতে গেলাম। তুই এখানে থাক।
– আমিও তোমার সঙ্গে যাবো, একা থাকতে পারব না।
– চল তাহলে।
জিতু আর রবিন আস্তে আস্তে লোকটার পেছনে গেল। তারপর এক ঝাপটায় ধরে ফেলল ভূত চোরকে। আর গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে লাগল দুজনে।
– চোর ধরেছি। চোর ধরেছি। সবাই বেরিয়ে আসুন। চোর ধরেছি চোর…
জিতু আর রবিনের চেঁচামেচিতে আশপাশের বাড়িগুলোর লাইট জ্বলতে শুরু করল। কেউ টর্চলাইট, কেউ হারিকেন নিয়ে আমবাগানে চলে এলো। জিতুর নানা আর মামাও এলো। তারপর যা দেখল, তাতে সবার চোখ কপালে উঠে গেল।
এতো আমাদের বিল্টু চোর! তার মানে এতদিন ধরে সবার বাড়িতে বিল্টুই চুরি করছিল। ক’জন লোক বিল্টু চোরকে আচ্ছা করে ধোলাই দিতে এগিয়ে এলো। কিন্তু জিতু ওদের থামিয়ে দিল। বিল্টু চোরকে থানায় নিয়ে গেল। ততক্ষণে জিতু আর রবিনের পুরো শরীর ঘামে একাকার হয়ে গেছে। সবাই জিতু আর রবিনের প্রশংসায় ব্যস্ত।
রবিন হেসে বলল…
– জিতু ভাইয়া, তুমি একটা জিনিয়াস। আচ্ছা এটাই যে চোর তুমি কি করে বুঝলে?
– তোকে আগেই বলেছিলাম, ভূত বলে কিছু হয় না। তাহলে জুতা আবার কে পরবে? নিশ্চয়ই মানুষ পরবে। পরেরদিন যখন শুনলাম রহিমদের ঘরে চুরি হয়েছে। তখনই বুঝে গেছিলাম যে, ওইটা আসলে চোর ছিল। চুরি করে এসে আমবাগানে লুকিয়েছিল। আর তুই তো তাকে ভূত বলে ভয় পেয়ে আমাকে বাসায় নিয়ে গেলি।
– সত্যি আমি একটা বোকার হাঁড়ি। তুমি একটা জিনিয়াস।
– শাকিব হুসাইন

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়