করোনা পরিস্থিতি : সংক্রমণের হার ১১.৬০ শতাংশ

আগের সংবাদ

খোলা ছাদে খুশির নিনাদ : মেয়েদের ঘিরে শোভাযাত্রায় লাখো মানুষ

পরের সংবাদ

নিলুফাই সংসারের একমাত্র অবলম্বন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : সাফ নারী চ্যাম্পিয়ন শিপের শিরোপাজয়ী দলের সদস্য কুষ্টিয়ার মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন নিলা। কুষ্টিয়া শহরের পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ড জুগিয়া সবজি ফার্মপাড়ায় নিলুফার বাড়ি। সরজমিনে গতকাল দুপুরে নিলুফার বাড়িতে পৌঁছে জানা গেল তার ক্রীড়া কৃতিত্বের পেছনের কাহিনী। মাসহ পিতা তাদের ছেড়ে যাওয়ার পর নিলাই এখন মায়ের অবলম্বন। পৌরসভার ভাগাড় সড়কের জুগিয়া ফার্মপাড়ায় করগেট টিনের ঘরের বাড়ি। নিলুফার মা বাছিরন আক্তার গৃহিণী। ছোট বোন সুরভী আক্তার ওই বাড়িতে থাকেন। নানা রকম ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে বাড়ির আঙিনায়। টিনসেটের ঘরে খাটে বসে বসেই কথা হয় নিলফার মা-বোনের সঙ্গে। ঘরের ভেতর আলমারিতে সাজানো রয়েছে মেডেল ও ক্রেস্ট। আলমারির ওপর একটি ফুটবল রাখা। নিচে রাখা বাইসাইকেল। বাড়িতে এলে বাইসাইকেল চালান নিলুফা।
দুই মেয়েই বাছিরণের সম্বল। বাছিরণের বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তবে বিয়ের কয়েক বছর পরই বাছিরণের রিকশাচালক স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন তাকে ছেড়ে চলে যান। মা-বাবার বিচ্ছেদের সময় নিলুফার বয়স ছিল মাত্র আড়াই বছর। আর ছোট মেয়ের বয়স মাত্র দেড় মাস। ওই সময় যেন অথই সাগরে পড়ে যান বাছিরণ। কিন্তু দমে যাননি তিনি। কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায় কুঠিপাড়ার চরে মায়ের বাড়িতে ওঠেন। তিনি স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি নেন। সামান্য বেতনে চলতে থাকে সংসার।
বাছিরণ আক্তার বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলে খেলাধুলায় নিয়মিত ছিল নিলুফা। শহরের চাঁদ সুলতানা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নিলুফা এসএসসি পাস করেন। দৌড়, লংজাম্পসহ বিভিন্ন খেলায় পুরস্কার নিয়ে বাড়িতে ফিরতেন। খেলাধুলায় মেয়ের সাফল্য দেখে বাছিরণও খুশি হতেন।
তাই কখনো খেলতে যেতে মানা করেননি। যদিও প্রতিবেশীরা টিপ্পনি কেটে বলতেন, ‘মা হয়ে মেয়েকে খেলায় পাঠায়।’ স্কুলে পড়ার পাশাপাশি সাভারে ফুটবল একাডেমিতেও খেলতেন নিলুফা। ধকল সইতে না পেরে একবার কুষ্টিয়াতে ফিরতে চেয়েছিলেন নিলুফা। কিন্তু মায়ের বারণ। যত কষ্টই হোক না কেন, থাকতে হবে। হাল ছাড়া যাবে না।
বাছিরণ বলছিলেন, ‘সংসারে অভাব-অনটন ছিল। অভাবে-কষ্টে মানুষ করিচি। ও (নিলুফা) যদি কোনো দিক (ফুটবল) ভালো করতে পারে করুক। বাধা দেব না। মানুষ যত খারাপ বলে বলুক, শেষ দেখে ছাড়ব।’
এসএসসির পর কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা সরকারি কলেজে ভর্তি হন নিলুফা। সেখান থেকেই এইচএসসি পাস করেন। এরপর খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি হন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিলুফার খেলোয়াড় হয়ে ওঠার পেছনে থানাপাড়া এলাকার আরেকজনের অবদানের কথা জানালেন বাছিরণ। সেই ব্যক্তি হলেন আবু ফাত্তাহ। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। আবু ফাত্তাহ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা ছিলেন। কুঠিপাড়া এলাকায় চরে নিলুফার ফুটবল খেলা দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে উৎসাহ দিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ, ঢাকায় ভর্তিসহ যাবতীয় কাজে তিনি সহযোগিতা করেন।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে নিলুফা বাড়িতে ফোন করেছিলেন। মাকে বলেছিলেন, ‘দোয়া কোরো মা। খুব টেনশন হচ্ছে। নামাজ পোড়ো আর কালকে (মঙ্গলবার) রোজা রেখো।’ মেয়ের কথামতো আজ রোজা রেখেছেন বাছিরণ।
সোমবার সন্ধ্যায় বাছিরণ মুঠোফোনে বাংলাদেশ দলের খেলা দেখেছেন। নিলুফা ফাইনালে মাঠে নামেনি। তবে এতে বাছিরণের আফসোস নেই। হেসে বললেন, ‘দলের সব মেয়েই আমার মেয়ে। সংগ্রাম করে মেয়ে বড় হয়েছে। আমার মেয়েদের বাংলাদেশ জয় পেয়েছে। এটা আমার গর্ব।’
কয়েক বছর আগে পাকিস্তানকে হারানোর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নিলুফা অর্থ পুরস্কার পেয়েছিলেন। ওই টাকা দিয়ে নিলুফা জমি কিনেছে। যে বাড়িতে বসে কথা হচ্ছিল, সেটা নিলুফার উপার্জনেই তৈরি। এককথায় সংসারের পুরো খরচ নিলুফা মেটাচ্ছেন।
বাছিরণ জানান, গতকাল সকালে কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দীন তাদের বাড়িতে এসেছিলেন। নিলুফার মা ও বোনের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। কোনো সমস্যা আছে কিনা, খোঁজখবর নেন। যে কোনো প্রয়োজনে পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন। নিলুফা বাড়িতে এলে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে বলে জানিয়ে গেছেন তিনি।
কথা প্রসঙ্গে বাছিরণ জানান, একসময় যারা মেয়ের খেলোয়াড় হওয়া নিয়ে নানা কথা শোনাতেন, তারা এখন ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন। অনেকে বাড়িতে এসে মেয়ের অনেক প্রশংসা করছেন। খুব ভালো লাগছে। আবার যারা নানা কথার জন্য আফসোস করছেন। তবে নীলাকে বরণ করতে আমন্ত্রণ পেলে ঢাকায় যাবেন বলে জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়