করোনা পরিস্থিতি : সংক্রমণের হার ১১.৬০ শতাংশ

আগের সংবাদ

খোলা ছাদে খুশির নিনাদ : মেয়েদের ঘিরে শোভাযাত্রায় লাখো মানুষ

পরের সংবাদ

নওগাঁ ২৫০ শয্যা হাসপাতাল : ৫ কোটি টাকার টেন্ডার পছন্দের ঠিকাদারকে দিতে নানা কৌশল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবুবকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : নওগাঁর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ওষুধ, যন্ত্রপাতি, গজ-বেন্ডেজসহ প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের এমএসআর সামগ্রী সরবরাহের টেন্ডার পাইয়ে দিতে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক নানা অপকৌশলের অভিযোগ উঠেছে ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরীর বিরুদ্ধে। পিপিআর বহির্ভূত জটিল শর্তাবলি আরোপ করে টেন্ডার নোটিস প্রদান করায় অসংখ্য ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ নিতে পারছেন না। গত বছর টেন্ডারের শর্তাবলি পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে স্থানীয় ঠিকাদাররা যৌথভাবে তত্ত্বাবধায়ক বরাবরে আবেদন করলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। এমনকি চলতি অর্থবছরের টেন্ডারের নোটিস প্রদানের পর থেকে শর্তাবলি স্বাভাবিক করার জন্য দেন-দরবার করলেও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে ঠিকাদাররা অভিযোগ করেছেন। এতে করে একদিকে বিপুলসংখ্যক সিডিউল বিক্রি না হওয়ায় ঠিকাদারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হবে, তেমনি নওগাঁবাসীও অধিক স্বাস্থ্যসেবা থেকেও বঞ্চিত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
অভিযোগে জানা গেছে, নওগাঁ ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ওষুধপত্র, যন্ত্রাংশ, গজ- বেন্ডেজ, আসবাবপত্রসহ এমএসআর সামগ্রী সরবরাহের লক্ষ্যে ৬টি গ্রুপে প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আগামী ২ অক্টোরব পর্যন্ত সিডিউল বিক্রির শেষ তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৯ দিন অতিবাহিত হলেও গত সোমবার পর্যন্ত মাত্র ৬ থেকে ৭টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিডিউল সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী যোগসাজশ করে পিপিআর বহির্ভূত টেন্ডারে জটিল শর্তারোপ ও নানা অপকৌশল অবলম্বন করছেন। গত বছর একইভাবে জটিল শর্ত আরোপ করে টেন্ডার আহ্বান করায় স্থানীয় কোনো ঠিকাদার ওই টেন্ডারে অংশ নিতে পারেননি। স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে মেসার্স এন এল ট্রেডার্স, মেসার্স জীম মেডিসিন সেন্টার, আলম ট্রেডার্স, মেসার্স বাবু ফার্মেসি, মেসার্স সামেনা মেডিকেল হল ও মেসার্স শফিকুল আলম টেন্ডারের শর্ত পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে যৌথভাবে তত্ত্বাবধায়কের বরাবরে আবেদন করেন। যৌথ আবেদনের ওপর কোনো গুরুত্বই দেয়া হয়নি উল্লেখ করে মেসার্স এন এল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. নফিউল হোসেন কেতন বলেন, নওগাঁ সদর হাসপাতালের এমএসআর সামগ্রী সরবরাহে নানা অপকৌশলে গত ৩ বছর ধরে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক গত বছর আর্থিক সুবিধা নিয়ে তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়েছেন। আবার চলতি বছরে একইভাবে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিতে পিপিআর বহির্ভূত টেন্ডারে জটিল শর্তাবলি যুক্ত করা হয়েছে। অথচ পিপিআরের স্বাভাবিক নীতিমালা অনুযায়ী এমএসআর সামগ্রী সরবরাহ নেয়ার কথা। মেসার্স আলম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে টেন্ডারে এর আগে বিগত ৫ বছরের মধ্যে ৬টি গ্রুপ মিলে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে এবং সলভেন্সির প্রত্যয়ন হিসাবে ব্যাংক কর্তৃক সলভেন্সি সনদ দিলেই টেন্ডারে অংশ নিতে দেয়া হয়েছে। অথচ চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এমএসআর সামগ্রী সরবরাহের টেন্ডারে ৬টি গ্রুপের মধ্যে প্রথম ‘ক’ গ্রুপের প্রায় দেড় কোটি টাকার ওষুধপত্রাদি ক্রয়ে তিন বছরের মধ্যে ২ কোটি টাকার কাজ করার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। আবার ‘ঙ’ গ্রুপের প্রায় ৩৫ লাখ টাকার কেমিক্যাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে ৪০ লাখ টাকার এবং ‘চ’ গ্রুপের প্রায় ২৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র ক্রয়ের বিপরীতে ৩০ লাখ টাকার কাজ করার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শিডিউল দাখিলকারী ঠিকাদারদের প্রত্যেকের গ্রুপ অনুযায়ী ব্যাংক সলভেন্সি হিসাবে ব্যাংক ৬ কোটি টাকার লিকুইড মানি থাকতে হবে বলে টেন্ডার নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এর একটি শর্ত পূরণ করা না হলে ওই ঠিকাদার টেন্ডারে অংশ নিতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে এমএসআর সামগ্রী সরবরাহকারী ঠিকাদার মো. হাসানুজ্জামান বাবু বলেন, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নওগাঁ হাসপাতালের এমএসআর সরবরাহের টেন্ডারে স্বাভাবিক শর্তাবলির মাধ্যমে টেন্ডারে অংশ নিয়েছি। অথচ এরপর থেকে টেন্ডারে জটিল শর্তারোপ করে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষ কোনো ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য এমন জটিল ও কঠিন শর্তারোপ করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, পিপিআর ২০০৬ ও ২০০৮ অনুসরণ করেই টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়