দেব দুলাল মিত্র : পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে আগামী ডিসেম্বরে ভারত থেকে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ দেশে আসার সম্ভাবনা কম। এই বিদ্যুৎ আমদানির জন্য দেশের উত্তরাঞ্চলের দুইপ্রান্তের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপনের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষের পথে দাবি করা হলেও এই লাইনে পূর্ণ সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। এ কারণে চুক্তি অনুযায়ী ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ একসঙ্গে পাচ্ছে না বাংলাদেশ। আদানী গ্রুপ দুই দফায় এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ভারতের আদানি গ্রুপ ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা এলাকায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তারা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে। দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২৫ বছর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনবে। আদানির বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি পড়লেও বাংলাদেশ এই বিদ্যুৎ এখন কিনবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়। হোটেলে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। এই সাক্ষাতের পর গৌতম আদানি তার ভেরিফায়েড টুইটারে এক টুইটে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন, চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।
তবে বাস্তব পরিস্থিতি যে কিছুটা ভিন্ন তেমন আভাসই মিলছে। ডিসেম্বরে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলা হলেও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলছেন না। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, আদানির বিদ্যুৎ ভারত থেকে আনতে একটু সময় লাগবে। ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সীমান্ত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কিলোভোল্টের সঞ্চালন লাইন বসিয়েছে পিজিসিবি। বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নিতে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পর্যন্ত ২৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এখানের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। উপকেন্দ্র নির্মাণে আরো সময় লাগবে। দুই ধাপে সঞ্চালন লাইন নির্মিত হচ্ছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাংহাই ইলেকট্রিক কোম্পানি এই উপকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে। আগামী অক্টোরব মাসে উপকেন্দ্রে নির্মাণের জন্য সব ধরনের মালামাল ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। এরপর উপকেন্দ্রে দুটি নির্মাণে ডিসেম্বর মাস লেগে যাবে। উপকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ না হলে আদানি গ্রুপ তাদের বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে সরবরাহ করলেও বাংলাদেশ নিতে পারবে না। কিন্তু যখন আদানি সরবরাহ শুরু করবে, তখন থেকেই বাংলাদেশকে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ
জাতীয় গ্রীডে যুক্ত না হলেও এখন একইভাবে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হচ্ছে। উপকেন্দ্র তৈরি হওয়ার পর পরীক্ষামূলকভাবে সঞ্চালন প্রক্রিয়া শুরু হবে। ৫০ মেগাওয়াট করে পর্যায়ক্রমে সরবরাহ বাড়ানো হবে। এ ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালাতেও সময় লাগবে। সঞ্চালন লাইন ও উপকেন্দ্রের পূর্ণ সক্ষমতা অর্জন করার পরেই বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা শাখা পাওয়ার সেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কিছু কাজ এখনো বাকী থাকায় একটু দেরি হবে। আমরা আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, আদানি গ্রুপের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি পড়বে। প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে প্রায় ৮ টাকা ৭১ পয়সা। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের দাম ধরা হয়েছে ৭ টাকা ৭১ পয়সা। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, আদানির বিদ্যুৎ তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে দামে সাশ্রয়ী হবে। আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কম বিদ্যুৎ কেনা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৫ আক্টোবর বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে আগামী ২৫ বছর আদানির এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনে নেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।