স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল : হামলায় ‘অতি উৎসাহী’ কোন কর্মী জড়িত থাকলেই ব্যবস্থা

আগের সংবাদ

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে

পরের সংবাদ

যে ভাবে গোল্ডেন বুট জিতলেন সাবিনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক: সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে বাংলাদেশের হয়ে পুরো প্রতিযোগিতায় দুর্দান্ত খেলেছেন সাবিনা খাতুন। দলকে নেতৃত্বে দিয়ে ঘরে তুলেছেন দেশের প্রথম সাফ শিরোপা। স্বপ্ন পূরণের অভিযাত্রায় বাংলার বাঘিনীদের তুরুপের তাস এই তারকা ফরোয়ার্ড। সাতক্ষীরার এই কন্যা মাঠে নামা মানেই মুড়িমুড়কির মতো গোল। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরেও গোলের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন তিনি। যেন একান্তই নিজের করে নিয়েছেন এবারের মেয়েদের ষষ্ঠ সাফ। পাঁচ ম্যাচ খেলে করেছেন টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৮ গোল। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। এরমধ্যে আছে দুটি হ্যাটট্রিক। দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে সাবিনাকে। বাবা হারানো এই অগ্নিকন্যা সমাজের রক্তচক্ষুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আপন মহিমায় রাঙিয়ে চলেছেন নিজেকে। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে উঠে আসা এই সাবিনাই এখন বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। ব্রাজিলের তারকা মার্তাকে আদর্শ মানেন সাবিনা। স্কার্ট পরা পেলে হিসেবে পরিচিত মার্তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে একটি দেশের নারী ফুটবলের সমার্থক হয়ে গেছেন সাবিনা। ফুটবল ভক্তদের কাছে বাংলার মেসি কন্যা নামে পরিচিত এই ফুটবলার নৈপুণ্য দিয়েই তার এই নামটি স্বার্থক করে তুলছেন।
সাবিনা খাতুনের জন্ম ১৯৯৩ সালে। জন্মস্থান খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা। তার পিতা মো. সৈয়দ গাজী ও মা মমতাজ বেগম। ফুটবলের প্রতি তার নেশা ছোটবেলা থেকেই। ২০০৭ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল কোচ আকবরের মাধ্যমে তার ফুটবলের হাতেখড়ি। সেখান থেকে খেলেন স্কুল পর্যায়ে, আন্তঃস্কুল ও আন্তঃজেলা পর্যায়ে। ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে ডাক পান বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে। দেশের হয়ে অভিষেক হয় ২০০৯ সালে। সিটিসেল জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পর ধারবাহিকভাবে খেলেছেন ঢাকা মহানগর মহিলা ফুটবল লিগে। কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবলে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ ঘরোয়া ফুটবলের শতাধিক গোল করেন সাবিনা, হয়ে যান জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০১৫ তে এসে পান অধিনায়কের দায়িত্ব। পাকিস্তানে মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই গোল করেন সাবিনা। এর মাধ্যমেই মালদ্বীপ ফুটবল কর্তাদের নজরে আসেন তিনি। এরপর দেশের প্রথম প্রমীলা ফুটবলার হিসেবে দেশের বাইরের লিগে খেলার সুযোগ পান। এর আগে কাজী সালাউদ্দিন, কায়সার হামিদ, প্রয়াত মোনেম মুন্না এবং মামুনুল দেশের বাইরে খেলার ডাক পেলেও নারী হিসেবে সাবিনাই প্রথম। প্রথমবারেই বিদেশি লিগে খেলতে গিয়ে সাবিনা যে কৃতিত্ব করেছেন তা রূপকথাকেও হার মানায়। মালদ্বীপে পুলিশ ক্লাবের পক্ষে অভিষেকেই করেছেন চার গোল, পরের ম্যাচে একাই করেছেন ১৬ গোল (৫টি হ্যাটট্রিক)। এর আগে ঢাকার মাঠে একবার এক ম্যাচে ১৪ গোলের রেকর্ড ছিল এই স্ট্রাইকারের। মালদ্বীপে মোট ছয় ম্যাচে সাবিনা গোল করেছিলেন ৩৭টি এবং এর পাঁচটিতেই ছিলেন ম্যাচসেরা। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এবারের আসরে মালদ্বীপ ও পাকিস্তানকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ২ ম্যাচে ৫ গোল করেন বাংলাদেশের এই ফরোয়ার্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক। এরপর সেমিফাইনালে ভুটানের বিপক্ষে আবারো হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ফলে তার গোল সংখ্যা দাঁড়ায় ৮। এর আগে ২০১৬ সাফে শিলিগুড়িতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬-০ গোলের জয়ে ৫ গোলই করেন বাংলাদেশের এই গোল মেশিন। সাফে এ পর্যন্ত ১৯ গোল করেছেন সাবিনা খাতুন। পরপর দুই ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বে ২০১৬ তে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশীপে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ। ২০১১ সালে শেখ জামালের হয়ে ২৫ গোল করেন সাবিনা। ২০১৩ সালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে করেন ২৮ গোল। নারীদের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বসুন্ধরার হয়ে করেন ৩৫ গোল। প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে ৮ ম্যাচে ১৩ গোল করে পূর্ণ করেন গোলের সেঞ্চুরি। পরবর্তী ম্যাচগুলোতেও পেয়েছেন গোলের দেখা। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পূর্ণ করেন এই মাইলফলক।
বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনার একেকটি গোল যেন ইতিহাসের অংশ। পেশাদার ফুটবলে প্রবেশের পর ২০২১ সালে ঘরোয়া লীগে করেছেন মাইলফলক। মেয়েদের লিগে বসুন্ধরা কিংসের জার্সিতে খেলা এ ফরোয়ার্ডের এক ম্যাচে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ডও আছে। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে টানা খেলে যাচ্ছেন তিনি। সাত বছর ধরে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে ইতোমধ্যে সাবিনার গোল চারশর কাছাকাছি। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী ফুটবলার, যিনি বিদেশি লীগে খেলছেন। মালদ্বীপের ক্লাবের জার্সিতেও গোল উৎসব করেছেন। মালদ্বীপে উইমেন্স ফুটসাল ফিয়েস্তা নামের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৩৭ গোল করার রেকর্ড গড়েছেন। ২০১৬ সালে ভারতের শিলিগুড়ি সাফে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে তুলেছিলেন ফাইনালে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়