স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল : হামলায় ‘অতি উৎসাহী’ কোন কর্মী জড়িত থাকলেই ব্যবস্থা

আগের সংবাদ

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে

পরের সংবাদ

দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জয় : নেপালকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশের মেয়েরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গতকাল নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। দলের হয়ে জোড়া গোল করেন কৃষ্ণা রানী সরকার। অন্য গোলটি আসে শামসুন্নাহারের পা থেকে। এর আগে ২০১৬ সালে শিলিগুড়ির ফাইনালে স্বাগতিক ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। এবার সেই ভুল করেনি গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। নান্দনিক ফুটবল শৈলী প্রদর্শন করে যোগ্যতর দল হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। অন্যদিকে এ নিয়ে পাঁচবার মেয়েদের সাফের ফাইনালে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে নেপাল।
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের এ সাফল্যে খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পৃথক বার্তায় অভিনন্দন জানান তারা। এছাড়া দলের সব খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্যে দিয়ে বিশ্ব নারী ফুটবলে বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা সূচিত হলো।
এবারের আসরে আক্রমণ থেকে রক্ষণ- সব বিভাগেই ডিসিপ্লিন ধরে রেখে সেরা খেলাটাই উপহার দিয়েছেন নারী ফুটবলাররা। তার পুরস্কারস্বরূপ আসরের সব সেরার পুরস্কারই উঠেছে বাংলাদেশের ফুটবলারের হাতে। চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জেতার পাশাপাশি বাংলাদেশ জিতেছে ফেয়ার প্লে ট্রফিও। এছাড়া টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। ৮ গোল করে তিনি জিতে নিয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারও। প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয়ে দুই গোল

করেন সাবিনা। পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের ৬-০ গোলে জয়ে তিন গোল সাবিনার। সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ৮-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ভুটানকে। সাবিনা হ্যাটট্রিক করেন সেদিনও। টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন বাংলাদেশের রূপনা চাকমা। ফাইনালে নেপাল ব্যবধান কমানো যে গোলটি করেছে, সেটাই বাংলাদেশের জালে প্রথম গোল। ৫ ম্যাচে বাংলাদেশ একটিমাত্র গোলই হজম করেছে। অন্যদিকে পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মেয়েরা গোল করেছেন ২৩টি।
নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের ১৯ বছরের শিরোপা খরা ঘুচেছে। পুরুষ ও নারীদের সাফের ইতিহাসে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের হাত ধরে ২০০৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব মুকুট জিতেছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল মালদ্বীপকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। তারও আগে ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) ফুটবল ইভেন্টে এই রঙ্গশালা স্টেডিয়ামেই নেপাল জাতীয় পুরুষ দলকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছিল বাংলাদেশ। গতরাতে সেই রঙ্গশালা স্টেডিয়ামের হাজার বিশেক দর্শককে নিস্তব্ধ, নিঃসাড় করে দিয়ে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়েছে সাবিনা-কৃষ্ণারা।
নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে গতকাল ম্যাচের শুরু থেকেই নেপালকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। প্রথম মিনিটেই বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া মান্ডার ডানপায়ের জোরালো শট শুয়ে পড়ে রুখে দেন নেপালের গোলকিপার আনজিলা সুব্বা। ১৩ মিনিটে বদলী ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়রের গোলে লিড নেয় বাংলাদেশ। ডান দিক থেকে মনিকার ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়রের ডানপায়ের ভলি গোলকিপারের চোখ ফাঁকি দিয়ে দূরের জাল কাঁপায়। ম্যাচের ৪১ মিনিটে ভুল পাস পেয়ে সাবিনা আড়াআড়ি পাস বাড়ান আনমার্কড কৃষ্ণাকে। বক্সে ঢুকে ঠাণ্ডা মাথায় বাঁ পায়ের নিখুঁত প্লেসিংয়ে ব্যবধান বাড়ান কৃষ্ণা। দ্বিতীয়ার্ধে গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে নেপাল। আক্রমণের ধার বাড়ায় তারা। একের পর এক আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণের কঠিন পরীক্ষাই নিচ্ছিলেন তারা। নিজেদের সেরা স্ট্রাইকার সাবিত্রা ভান্ডারিকে মাঠে নামান কোচ কুমার থাপা। একের পর এক আক্রমণে ৭০ মিনিটে সফলতার মুখ দেখে নেপাল। অনিতা বাসনেতের গোলে ব্যবধান কমায় তারা। বক্সের বাইরে থেকে সতীর্থের আড়াআড়ি পাস পেয়ে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান অনিতা। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে কৃষ্ণার দ্বিতীয়বার লক্ষ্যভেদে আবারো চালকের আসনে বসে বাংলাদেশ। এই গোলের পরই জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। প্রায় মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের থ্রæ পাস বক্সে ঢুকে আয়ত্বে নিয়ে ডানপায়ের প্লেসিংয়ে ব্যবধান ৩-১ করেন কৃষ্ণা।
গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেছেন বাংলার মেয়েরা। মালদ্বীপকে ৩ গোলে হারিয়ে শুরু, পরের ম্যাচেই পাকিস্তানের জালে হাফ ডজন গোল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয় ৩-০ গোলে। সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮ গোলে উড়িয়ে ফাইনালে উঠে বাংলাদেশের মেয়েরা। আর গতকাল ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে গোলাম রব্বানীর শিষ্যরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়