হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

৩ প্রকল্পের শতভাগই নষ্ট : ঢাবিতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই কর্তৃপক্ষের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাফিউজ্জামান লাবীব : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তার জন্য নানা সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে লাগানো হয় দেড় শতাধিক ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। তবে রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে বর্তমানে সবকটিই অকেজো হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সিসি ক্যামেরার তত্ত্বাবধান একটি কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে থাকার কথা থাকলেও সেটি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আবাসিক হল, বিভাগ, প্রশাসনিক ভবন, ডিন অফিস ও আবাসিক এলাকাগুলোতে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে শত শত ক্যামেরা থাকলেও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো সিসি ক্যামেরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে ছয় শতাংশ নষ্ট ক্যামেরা নিয়েই চলছে কার্যক্রম। সিসি ক্যামেরার অপ্রতুলতা, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাব, হলগুলোতে সিসি ক্যামেরার বাজেট না থাকা, নি¤œমানের ক্যামেরা কেনার অভিযোগসহ নানা অভিযোগ আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সিসি ক্যামেরার অপ্রতুলতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় চোরকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ক্যাম্পাসে ঘটছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। এতে ক্যাম্পাস এলাকায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ঢাবি এলাকায় মোট তিনটি প্রকল্পের সিসি ক্যামেরা আছে। বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন প্রকল্প- ‘হেকেপ’ এর অধীনে ‘ই-প্রেজেন্স’, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অধীনে ক্যামেরা এবং মেট্রোরেলের সহায়তায় শাহবাগ থানার অধীনে বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা আছে। তবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ’ বেরিয়ে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এই তিনটি প্রকল্পের অধীনে দেড় শতাধিক ক্যামেরা থাকলেও বর্তমানে একটিও চালু নেই। ক্যাম্পাস এলাকায় দু’একটি সিসি ক্যামেরার খোলস দেখা গেলেও সেগুলো সম্পূর্ণ অকেজো।
শুধু তাই নয়, ক্যাম্পাস এলাকায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির অধীনে কোনো সিসি ক্যামেরাই নেই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার অধিকাংশ অংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১নং ওয়ার্ডের অধীনে হলেও ক্যাম্পাস এলাকায় সিটি করপোরেশনেরও

কোনো ক্যামেরা নেই। জানা যায়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান আসাদ ক্যাম্পাস এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগাতে উদ্যোগ নিলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি মেলেনি।
ক্যাম্পাস এলাকায় সিসি ক্যামেরা না থাকা ও শক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমানে নিজস্ব ক্যাম্পাসে অনিরাপদ রয়েছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স¤প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সামনে রাতে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা এই শঙ্কায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ ও স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রঞ্জু ইসলাম বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে এ রকম ছিনতাইয়ের ঘটনা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগকে বাড়িয়ে দেয়। এমনিতেই হলে নিয়মিত চুরির ঘটনা ঘটে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে আমরা প্রতিনিয়তই ভুক্তভোগী হব।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগে ‘হেকেপ’ প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) সিসি ক্যামেরার একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়। ‘ই-প্রেজেন্স’ নামে প্রজেক্টটির অধীনে ১১৩টি ক্যামেরা ছিল, যার সবকটিই বর্তমানে অকেজো।
এদিকে ডিএমপির অধীনে ক্যাম্পাস এলাকায় কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। তবে ক্যাম্পাসের আশপাশে বকশীবাজার, চানখাঁরপুলসহ কয়েকটি মোড়ে সিসি ক্যামেরা আছে, যার সঠিক কোনো হিসাব নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। শাহবাগ থানাতেও এটার কোনো তথ্য নেই।
শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত মেট্রোরেলের এই অংশটুকুতে মেট্রোরেলের সহায়তায় শাহবাগ থানার অধীনে ৩২টি ক্যামেরা ছিল। বর্তমানে সেগুলো শতভাগ নষ্ট। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদূত হাওলাদার ভোরের কাগজকে বলেন, ক্যাম্পাস এলাকায় ডিএমপির কোনো ক্যামেরা নেই। ক্যাম্পাসের কয়েকটি মোড়ে কিছু ক্যামেরা আছে, তবে সেগুলোর সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। আর মেট্রোরেলের ৩২টি ক্যামেরার সবগুলোই নষ্ট।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিড়ের অন্যতম একটি জায়গা হলো টিএসসি। শুক্রবার ও শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে বহিরাগতসহ কানায় কানায় পূর্ণ হয় টিএসসি এলাকা। ঘটে ছোটখাটো চুরির ঘটনা। টিএসসি এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছিল ১৬টি ক্যামেরা। বর্তমানে যার একটিও সচল নেই।
ক্যামেরাগুলো নষ্ট থাকায় কোনো ঘটনায় অপরাধীকে ধরা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান টিএসসির পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ আলী আকবর। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের এখানে যেসব ক্যামেরা দেয়া হয়েছে সেগুলো নি¤œমানের হওয়ায় কয়েক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা অনেকবার এটা নিয়ে উপর মহলে চিঠি পাঠিয়েছি কিন্তু সাড়া মেলেনি।
এর বাইরে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ১৯টি হলে মোট ৪১৪টি ক্যামেরার মধ্যে ছয় শতাংশ ক্যামেরাই অকেজো। অভিযোগ আছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে এসব ক্যামেরা তদারকির জন্য কোনো বরাদ্দ দেয়া হয় না। এতে সেসবের পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করাও সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক ও তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও পরিচালক মুহাম্মদ শফিউল আলম খান বলেন, আমাদের হলগুলোতে প্রতি তলায় ক্যামেরা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা শুধু প্রবেশ আর বাহির পথে রেখেছি। এতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বড় রকমের পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। হলগুলোতে সিসি ক্যামেরায় বাজেট দিতে হবে।
এদিকে গত জুনে ‘হেকেপ’ প্রকল্পের অধীনে নষ্ট ক্যামেরাগুলোর সংস্কার ও নতুন কিছু ক্যামেরা দিয়ে ‘পাইলট প্রজেক্ট’ নাম দিয়ে ক্যাম্পাসের নীলক্ষেত মোড় থেকে টিএসসি হয়ে শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ১০০টি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল এই প্রকল্পটি তত্ত্বাবধান করছে। গত ২৯ জুন এই প্রকল্পের জন্য দরপত্রও আহ্বান করা হয়। তবে প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে চলতি মাসের শেষে এটি বাস্তবায়িত হবে।
এ বিষয়ে আইসিটি সেলের পরিচালক আসিফ হোসেন খান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়েছে। এরপর ফাইন্যান্স কমিটি হয়ে সিন্ডিকেটে পাস হলে আমরা কাজ শুরু করব। কাজটি চলতি মাসেই হয়ে যাবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের অধীনে সিসিটিভিগুলো নিয়ন্ত্রিত। আমাদের কাছে কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনো ঘটনায় ডকুমেন্টস প্রয়োজন হলে বা আইনশৃঙ্খলার কাজে প্রয়োজন হলে আমরা তাদের সহযোগিতা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা আছে। সিসি ক্যামেরা রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য আগে কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ বিষয়ে আমরা একটা পদক্ষেপ নিচ্ছি। একটি কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো, রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক কাজ করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়