হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ : সাবিনাদের আজ ইতিহাস গড়ার মিশন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আজ নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় ম্যাচটি শুরু হবে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে নামবে নেপাল। অন্যদিকে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ফাইনালে খেলেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেবার ভারতের বিপক্ষে হেরে ভঙ্গ হয়েছিল সাবিনাদের। এবার সেই ভারতকে গ্রুপ পর্বেই উড়িয়ে দিয়ে আজ ইতিহাস গড়তে মাঠে নামছে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।
ফাইনালের পথে চার ম্যাচে বাংলাদেশ গোল করেছে ২০টি। তাতে মূল কৃতিত্ব স্বাভাবিকভাবেই পাচ্ছে দলের আক্রমণভাগ। কিন্তু গোলের সেই সুযোগগুলো সাজিয়ে দেয়ায় বড় ভূমিকা ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডারদের। সাবিনা-কৃষ্ণা-স্বপ্নাদের নির্ভার থেকে আক্রমণে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছেন মাসুরা-আঁখিরা রক্ষণ জমাট রেখে। মনিকা-মারিয়ারা মাঝমাঠে থেকে বুনে দিয়েছেন আক্রমণের জাল। তাতে একের পর এক ধরাশায়ী মালদ্বীপ, পাকিস্তান, সাফের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত এবং সবশেষ সেমি-ফাইনালের প্রতিপক্ষ ভুটান। আজ নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে রক্ষণ এবং মিডফিল্ডে ছন্দময় ফুটবলের প্রত্যয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। ফাইনালে ওঠার পথে বাংলাদেশ করেছে ২০ গোল। অন্য দিকে ফাইনালে উঠে আসার পথে তিন ম্যাচে ১১ গোল করেছে নেপাল। নেপালের আক্রমণভাগে আছে সাবিত্রা ভান্ডারির মতো ক্ষুরধার ফরোয়ার্ড। তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ৪০টি আন্তর্জাতিক গোল। অনিকা বাসনেত, রাশ্মি কুমারি ঘিসিংও হয়ে উঠতে পারেন ম্যাচের নির্ণায়ক।
নেপালের ফরোয়ার্ডদের সমীহ করলেও ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বার ডিফেন্ডার আঁখির চাওয়া, ফাইনালেও বিগত ম্যাচগুলোর দৃঢ়তা ধরে রাখুক তার রক্ষণের সতীর্থরা। গতকাল রক্ষণভাগের অতন্দ্র প্রহরী আঁখি বলেন, এ পর্যন্ত আমরা চারটা ম্যাচ খেলেছি এবং এ পর্যন্ত আমাদের ডিফেন্স লাইন কোনো ভুল করেনি। ডিফেন্স নিয়ে আমরা বাংলাদেশে থাকতে এবং নেপালে এসেও অনেক কাজ করেছি। নেপাল শক্তিশালী দল এবং ওদের আক্রমণভাগও ভালো। তবে তাদের আটকাতে আমরা সেভাবেই অনুশীলন করছি, মাঠেও নামব সেভাবে। চেষ্টা করব ফাইনালে কোনো ভুল না করার।
কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন খুব একটা চিন্তিত নন রক্ষণ ও মাঝমাঠ নিয়ে। তিনি বলেন, গত চার ম্যাচে কেউ আমাদের জালে গোল পায়নি, মানে আমাদের ডিফেন্ডারদের সামর্থ্য আছে। মিডফিল্ডারদের প্রতিও আমার পুরোপুরি আস্থা আছে। মারিয়া-মনিকা-সানজিদা গত ম্যাচগুলোতে যেভাবে মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণ করেছে, এককথায় অবিশ্বাস্য। সেই বিশ্বাসের ছোঁয়াতেই শেষের বাধা পার হতে তৈরি দল।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গত পাঁচবারের আসরে বাংলাদেশ ও নেপাল তিনবার মুখোমুখি হয়েছে। তিনবারই জিতেছে নেপালিরা। দুই দলের প্রথম দেখা হয়েছিল ২০১০ সালে কক্সবাজারে প্রথম সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। নেপাল জিতেছিল ৩-০ গোলে। ২০১৪ সালের সেমিফাইনালে নেপালের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ২০১৯ সালে গ্রুপপর্বে। নেপাল জিতেছিল ৩-০ গোলে। গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছে বাংলার মেয়েরা। মালদ্বীপকে ৩ গোলে হারিয়ে শুরু আর পরের ম্যাচেই পাকিস্তানের জালে হাফ ডজন গোল। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে জয় ৩-০ গোলে। সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮ গোলে উড়িয়ে ট্রফি জয় থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে আছে বাংলাদেশের মেয়েরা। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের জালে দিয়েছে ২০ গোল। গোলমেশিন সাবিনা একাই ৮ গোল দিয়েছেন। বিপরীতে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের জালে বল পাঠাতে পারেনি।
এবারের ফাইনাল দিয়ে ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশ। অর্ধযুগ আগে শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও হয়নি স্বপ্ন পূরণ। এবার হিমালয় জয় করতে আর এক ধাপ বাকি বাংলার জয়িতাদের। স্বাগতিক নেপাল কঠিন প্রতিপক্ষ হলেও ফাইনালে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। চাপমুক্ত হয়ে খেললে প্রথমবারের মতো সাফের শিরোপা ঘরে আনবে বাংলাদেশের নারীরা। এমন মন্তব্য করেছেন নারী ফুটবল দলের সাবেক কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী। তিনি বলেন, নারী দল আজ অনেক এগিয়েছে। আমি যখন কোচ ছিলাম সেই দলেও সাবিনা ছিল। আর আজ এই দলেরও সাবিনা অধিনায়ক। একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে সে যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর বর্তমানে যেভাবে খেলে আসছে দল এভাবে খেললে আমাদের দল চ্যাম্পিয়ন হবে। বাংলাদেশের প্রথম শিরোপার জন্য মাঠ ও মাঠের বাইরে সবকিছুই সামলাতে হবে সানজিদা-মাসুরাদের। তিনি যোগ করেন, তারা (নেপাল) স্বাগতিক। ওরা অনেক চাপ দেবে মাঠে। তবে আমি মনে করি, আমাদের দল অনেক পরিপক্ব, তারা চাপমুক্ত খেলেই দলকে শিরোপা জেতাতে পারবে।
মেয়েদের ফুটবল নিয়ে বরাবরই সিরিয়াস বাফুফে। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে হয়েছে যথাযথ পরিকল্পনা। যার ফলে আজ এই পর্যায়ে এসেছে নারী দল। যার পুরো কৃতিত্ব ফুটবলার-কোচদেরই দিচ্ছে বাফুফে। বাফুফে নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, আমাদের দল যে আজ ফাইনালে উঠেছে, এটা কারো একার কৃতিত্ব না। এটা দলগত সাফল্য। দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর, দলের হেড কোচ, সহকারী কোচসহ আরো যারা কোচিং স্টাফ আছেন সবাই যেভাবে পরিশ্রম করেছে আর আমাদের খেলোয়াড়রা যেভাবে অনুশীলন করে এসেছে তার ফলেই আমরা এমন অবস্থায় আসতে পেরেছি। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের একটি শক্তিশালী দল তৈরি হবে। তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের এই সাফল্যে কারো একক কৃতিত্ব নেই। বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনের দক্ষ নেতৃত্ব আর একটি টিম ওয়ার্কের কারণে বাংলাদেশ ফের ফাইনালে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়