হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

শৌচাগার সংকটে জামালপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জামালপুর প্রতিনিধি : একবিংশ শতাব্দীতে এসেও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই জামালপুরের পাহাড়ি অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কিছু পরিবারে। এ জন্য খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতে হচ্ছে তাদের।
ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা নয়নাভিরাম পাহাড়ি অঞ্চল বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন। জেলা সদর থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার উত্তরে এই পাহাড়ি জনপদে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে গারো সম্প্রদায়ের তিন হাজার সদস্য। তাদেরই একজন মনিকা মারাক। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে ছোট সংসার তার। দীর্ঘদিন ধরে একটি শৌচাগার নেই তার বাড়িতে। অর্থাভাবে শৌচাগার না থাকায় কখনো খোলা জায়গায় কখনো অন্যের শৌচাগারে মলমূত্র ত্যাগ করতে হচ্ছে পরিবারটিকে।
দিঘলাকোনা এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য মনিকা মারাক বলেন, সরকার থেকে তো অনেক কিছুই দিতাছে আমরাতো পাইতাছি না। আমরাতো চাই যে সরকার থেকে একটা কল বা একটা বাথরুম পাই। এইডেইতো আমগোরে দরকার বেশি। আমরা আর বেশি কিছু আশা করি না।
মনিকা মারাক আরো বলেন, যখন ছোট আছিলাম তখনতো পাহাড়ে জঙ্গলে পায়খানা করছি। এহন এই যে মাসিগোরে বাথরুম আছে ওখানে যাই। এই ভাবে কতোদিন চলব জানি না। স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ি অঞ্চলে অনেক পরিবারে এখনো নিজস্ব শৌচাগার না থাকায় কখনো খোলা জায়গায় আবার কখনো পাহাড়ি জঙ্গলে মল ত্যাগ করতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে অন্যের শৌচাগারও ব্যবহার করতে হচ্ছে তাদের।
দিঘলাকোনা এলাকার আরেকজন বাসিন্দা দিলিপ সাংমা বলেন, আমাদের এখানে বাথরুম নেই। তাই পায়খানা প্র¯্রাপের জন্য অসুবিধায় আছি। উপজাতিরা এখন বাথরুম নেই বলে পাহাড়ে পায়খানা করে। সমস্যা এটাই, টাকা পয়সা হাতে নাই।
এছাড়াও পাহাড়ি অঞ্চলের অধিকাংশ শৌচাগার অস্বাস্থ্যকর ও ভঙ্গুর। আর্থিক সমস্যার কারণে শৌচাগার নির্মাণ ও সংস্কার করতে না পারায় ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে গারো উপজাতির এসব বাসিন্দা।
দিঘলাকোনা এলাকার সত্তরোর্ধ্ব বাসিন্দা ফরলা সাংমা বলেন, আমরা গরিব মানুষ টাকা পয়সা নাই হাতে। বাথরুম কেমনে করমু? ঘরবাড়ি ঠিক নাই। এহন টাকা ছাড়াতো হয় না। কেরা কইরে দিব।
দিঘলাকোনা এলাকার আরেক বাসিন্দা মারগেট সাংমা বলেন, সরকারতো বাথরুম দিছে। এক বছর না যাইতে নষ্ট হয়ে গেছে। এহন ঠিক করতে পারতাছি না টেকার কারণে। কেমনে ঠিক করব? কামাই তো নাই।
২০১৫ সালে সারাদেশে শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন থাকার ঘোষণা দেয় সরকার। পিছিয়ে থাকা এই জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে ও পরিবেশ রক্ষায় জনস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের। বকশিগঞ্জ ট্রাইব্যাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি পিটিশন সাংমা বলেন, এই পাহাড়ি এলাকায় আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের এখন পর্যন্ত ভালো টয়লেট নেই। পাহাড়ে, খালে, জঙ্গলে পায়খানা প্র¯্রাব করে। উপজেলা থেকে যদি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ পদক্ষেপ নেয় তাহলে আমাদের উপকার হত। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মী দ্বারা এলাকায় সাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ করলে অনেক উপকার হত। জামালপুরের মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ২০১৫ সালের মধ্যে শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন সম্পন্ন হয়েছে বলে সরকার ঘোষণা করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হলো এখনো ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিটি পরিবারের ল্যাট্রিন নেই। একটা ল্যাট্রিন থাকলেও একাধিক পরিবার সেটা ব্যাবহার করে এবং সেটা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনকে এই ধরনের একটা সার্ভে করে যাদের বাড়িতে ল্যাট্রিন নেই তাদের স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
জামালপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, বর্তমানে জামালপুরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। পয়ঃনিষ্কাশন তথা টয়লেটের জন্য অনেক বড় আকারে একটা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পটা পাস হলে তখন রেগুলার বরাদ্দ থাকবে। সেটা দিয়ে উপজাতিদের জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়