হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

বাড়ছে করোনা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ : করোনা সংক্রমণ ১২ শতাংশ ছাড়াল, কমিটির ৫ সুপারিশ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ধসেবিকা দেবনাথ : প্রায় ৩ বছর ধরে দেশে ডেঙ্গু আর কোভিড-১৯ সংক্রমণ সমানভাবেই ভাবিয়ে তুলছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা ভয়াবহ হলেও এরপরের বছরগুলোতে তা অনেকটাই কমে আসে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে শুরু হয় কোভিড-১৯ সংক্রমণ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমণের চিত্রে কয়েক দফা ওঠানামা দেখা গেছে। গত বছরের শেষ দিক থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি করোনার ওমিক্রন ধরনের দাপট চলে। গত ২৩ জুলাইয়ের পর সংক্রমণের হার কমে এসেছিল। দেড় মাস পর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবারো বেড়ে যায় এ সংক্রমণের হার। ১৩ সেপ্টেম্বর শনাক্তের হার বেড়ে হয় ১০ দশমিক ৫৫। করোনার সংক্রমণ কেনো বাড়ছে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণা বলছে, করোনার ওমিক্রন ধরনের নতুন দুটি উপধরনের কারণে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। নতুন আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণে এ তথ্য জানা গেছে বলে শনিবার সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির পাওয়া তথ্যমতে, সা¤প্রতিক সময়ে সারা দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ার জন্য নতুন এই উপধরনগুলোই দায়ী।
এদিকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কার কথা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ভরা বর্ষায় বৃষ্টি না হলেও গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি ডেঙ্গুর মৌসুমকে আরো

দীর্ঘায়িত করবে বলেও জানিয়েছিলেন তারা। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া দৈনিক তথ্য সেই প্রমাণই দিচ্ছে। গতকাল রবিবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ হাজার ১৪৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। মৃত্যুর খাতা শূন্য থাকলেও শনাক্ত হয়েছে ৫২৭ জন। সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ।
ডেঙ্গু ও করোনার সংক্রমণ বাড়ায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। খোদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনার সংক্রমণ কিন্তু আবারো বাড়ছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারো অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে, স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব পড়বে। আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা যেন মাস্ক পরা ভুলে গেছি, মাস্ক বড় হাতিয়ার। যারা টিকা নেননি তাদের টিকা নেয়ারও আহ্বান জানান মন্ত্রী।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ওই একই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এ পর্যন্ত ১০/১২ হাজার লোক আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছে। এর বাইরেও অনেক রোগী হাসপাতালে আসেনি, সব মিলিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। সবাইকে সচেতন হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু ও করোনা পরিস্থিতিকে একেবারেই হালকাভাবে নেয়া যাবে না। আগামী কয়েকটি দিন যদি কোভিড সংক্রান্ত সব রকম সুরক্ষাবিধি মেনে চলা যায়, সেক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যাবে। তবে তার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে। যেহেতু অফিসের কাজ ও স্কুল-কলেজ চলছে পুরোদমে, তাই ভয় না পেয়ে সাবধান হতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।
এ দিকে দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত কয়েকদিন ধরে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় ৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। শনিবার রাতে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত কমিটির এক সভায় এর সদস্যরা এসব নির্দেশনার সুপারিশ করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা। কমিটি যেসব নির্দেশনার পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো হলো- সব ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের জন্য জনসাধারণকে উৎসাহিত করা; যারা করোনা টিকার ১ম, ২য় এবং বুস্টার ডোজ নেয়নি তাদের টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা; বন্ধ স্থানে সভা করা থেকে বিরত থাকা ও দাপ্তরিক সভা যথাসম্ভব ভার্চুয়ালি করা; অপরিহার্য সামাজিক অনুষ্ঠান বা সভায় মাস্ক পরা; বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড পরীক্ষার ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নিতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়া।
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা জানান, তারা এই সুপারিশগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন। সরকার এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে তরা আশা করছেন।
অন্যদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়েও চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গুতো প্রতি বছরই হচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসলে খুব জরুরি। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি আমরা নিজেরা চাইলেই রোধ করতে পারি। একটু সচেতনতা, নিজের আবাসস্থল পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই ডেঙ্গু থেকে বাঁচা যায়। কিন্তু মানুষের মধ্যে সচেতনতা এ ব্যাপারে আসলে খুবই কম। চলতি বছরের শুরুতে কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুব একটা ছিল না। এর মধ্যে রোগীর সংখ্যা উঠা নামা করেছে। তবে সেপ্টেম্বরে রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে একটু তো আশঙ্কা জাগছেই।
গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০০। এ সময় ৩৯৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে একজনের। চলতি বছর (১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১ হাজার ১৭৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯ হাজার ৬৪৯ জন। এই জ¦রে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪৫ জন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়