হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট : গবেষকদের পদোন্নতি আটকে পদে থাকার পাঁয়তারা ডিজির!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) অনিয়ম দুর্নীতির আখরা হিসেবে পরিণত হয়েছে। নানা কৌশলে আটকে দেয়া হয়েছে ৩৯ জন গবেষকদের পদোন্নতি। মহাপরিচালক (ডিজি) ড. আমজাদ হোসেনের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ফলে জাতীয় প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক গবেষণা ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বর্তমান ডিজির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ অক্টোবর। সাধারণ ডিজির পরের পদ চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার (সিএসও) পদ থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মহাপরিচালক (ডিজি) নিয়োগ দেয়া হয়। গত কয়েক বছর ধরে আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করে মহাপরিচালকের কূটকৌশলে এই পদ খালি রয়েছে। ফলে সিএসও পদ খালি দেখিয়ে নিজের মেয়াদ বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন ডিজি ড. আমজাদ হোসেন।
গত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা এই ডিজির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। সমন্বিত গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প, সাথী ফসল প্রকল্প, পরিচ্ছন্ন বীজ বিতরণ প্রকল্প এবং মধু প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিএসআরআইএর আওতাধীন পাবর্ত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য পাইলট প্রকল্পে বিশাল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ রয়েছে। টাকা হাতিয়ে নিতে সেই প্রকল্পের পরিচালক মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন নিজেই। এছাড়াও প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ না নিয়ে প্রশিক্ষণ ভাতা ও টিএডিএ নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। বিএসআরআই কর্তৃক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ক্ষেত্রেও নিয়ম না মেনে অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে কতিপয় মুখচেনা ব্যক্তিকে দিয়ে দীর্ঘদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের অভিযোগও রয়েছে। এই বিষয়ে তার কাছে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থবছরের পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সাথী ফসল গবেষণা কর্মসূচির জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি টাকা। প্রতিটি প্লটে কৃষকদের ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষক পর্যায়ে কম টাকা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাত্র আড়াই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের পর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার (সিএসও) পদের ১৬ জন বিজ্ঞানীকে প্রাপ্য পদোন্নতি দেয়া হয়নি। ফলে তাদের পদ এখনো শূন্য। তিনজন সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার (এসএসও) এবং দুটি প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার (পিএসও) পদ ১১ বছর ধরে খালি। বিজ্ঞানীরা বলছেন মামলার রায় বাস্তবায়ন না করায় প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব ধরণের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। প্রকল্পগুলোর আর্থিক অনিয়ম উদঘাটন করতে সকল প্রকল্পের সরকারি বিশেষ নিরীক্ষণের দাবি জানান তারা। পদের জ্যেষ্ঠতা পেতে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত বিজ্ঞানী আতাউর রহমান, গাজী আকরাম হোসেন ও আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বিএসআরআই এর মহাপরিচালককে আসামি করে ২০১১ সালে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। মামলার রায় বাদীর পক্ষে আসে। মন্ত্রণালয় হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ এবং রিভিউ আদেশ পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের রায়ের আদেশ অনুসরণ না করে আইনজীবীর মতামতের ভিত্তিতে মহাপরিচালক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করেন, যা আদালত অবমাননার শামিল। এতে বাদীর জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিধায় পরবর্তীতে কোর্ট কন্টেম মামলা হয়, যা বিচারাধীন রয়েছে।
বিএসআরআই এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কমকর্তা ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, ২০১৫ সালে আমার সিএসও পদে পদোন্নতি হওয়ার কথা। কিন্তু মামলার কারণে এখনো তা হয়নি। সর্বশেষ আমাকে ও ইসমোতয়ারাকে পরিচালক করা হয়েছে। অন্যান্য মুখ্য বৈজ্ঞানিক কমকর্তাদের সিএসও পদে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, মামলার অজুহাতে বিজ্ঞানীদের পদোন্নতি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বিজ্ঞানীদের।
এ বিষয়ে বিএসআরআই মহাপরিচালক (ডিজি) ড. আমজাদ হোসেন বলেন, অভিযোগকারীদের বলতে চাই- আমি এই পদে আর থাকতে চাই না। তাদের মামলার কারণেই সিএসও পদে পদোন্নতি আটকে আছে, এখানে আমার কিছু করার নেই। গবেষণা কার্যক্রম যথানিয়মেই চলছে। এরই মধ্যে ২৬ জনের তালিকা পদোন্নতির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়