হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

নড়াইল হাসপাতালে সাপের বিষের প্রতিষেধক নেই : ওঝামুখী হচ্ছেন অনেকেই

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শুভ সরকার, নড়াইল থেকে : দুসপ্তাহ ধরে নড়াইল সদর হাসপাতালে জীবন রক্ষাকারী সাপের বিষের প্রতিষেধক সিরাম নেই। এর আগে ২১ জুলাই ২শ সিরাম আনা হলেও তার মেয়াদ ছিল ৪০ দিন। ২০১৩ সাল থেকে সদর হাসপাতালে সরকারিভাবে এ প্রতিষেধক দেয়া চালু হলেও ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৮২০ পিস সিরামের একটিও ব্যবহার হয়নি। গত ৫ বছরে নড়াইল সদর হাসপাতালে কত পিস সিরাম এসেছে এবং কতটি ব্যবহার হয়েছে সে তথ্য দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত আগস্ট মাসে এক কিশোরকে নড়াইল সদর হাসপাতালে সিরাম দেয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয়। ফলে এ প্রতিষেধক সাপে কাটা রোগীর কতোটা কাজে আসছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই মানুষ এখন ওঝা-কবিরাজের দ্বারস্থ হচ্ছে। বিষধর সাপে কাটলে রোগীর অবস্থা বুঝে ৫ থেকে ১০টি সর্প বিষ প্রতিষেধক সিরাম দিলে সুস্থ হয়ে ওঠে রোগী।
নড়াইলে সম্প্রতি সাপের উপদ্রব বেড়েছে। প্রায়ই ঘটছে সর্প দংশনের ঘটনা। গত আড়াই মাসে এক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু এবং অনেককে সাপে কাটার খবর পাওয়া গেছে। নড়াইল শহর সংলগ্ন সদরের আউড়িয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামের কুরবান আলী জানান, ১৫ আগস্ট তার ছেলে আশিক (১৪) রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার পর তাকে সাপে কাটে। রাত ১১টার দিকে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স প্রথমে স্যালাইন ও পরে ইনজেকশান দেবার ১০ মিনিটের মাথায় সে নিস্তেজ হয়ে পড়লে খুলনা নিয়ে যেতে বলেন। পরে মাইক্রোবাসে রওনার ১ মিনিটের মধ্যেই ছেলেটির মুত্যু ঘটে।
একই ইউনিয়নের খলিশাখালী গ্রামের হেনা বেগম জানান, ৩১ আগস্ট তার প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা) ছেলে মামুন রহমানকে বাড়িতে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় সাপে দংশন করলে রাত ২টার দিকে এম্বুলেন্সে খুলনায় নেয়ার পথে মৃত্যু ঘটে। সদর হাসপাতালে নিয়েছিলেন কিনা এ প্রশ্নে তিনি ও মামুনের স্ত্রী বলেন, কেউ বলেছেন নড়াইল সদর হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই আবার কেউ বলেছেন থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ। সে কারণে তাকে খুলনায় নিয়েছিলাম।
গত ২ জুলাই সাপের কামড়ে কালিয়ার কলাবাড়িয়া গ্রামের হিংগুল শেখের স্ত্রী জরিনা বেগমের (৪০) মৃত্যু হয়। আউড়িয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আনোয়ারা বেগম বলেন, কমলাপুর, খলিশাখালীসহ কয়েকটি গ্রামে গত এক মাসে কমপক্ষে ১০ জনকে সাপে কেটেছে। পরিবারের লোকজন রোগীদের হাসপাতালে না নিয়ে ওঝার দ্বারস্থ হচ্ছেন। নড়াইল পৌরসভার বাহিরডাঙ্গা এলাকার কৃষক দিপক বিশ্বাস জানান, তাদের গ্রামে গত ১ মাসে ৬ জনকে বিষধর গোখরা সাপে কেটেছে। তাদের সবাই ওঝার কাছে গিয়ে ঝাঁড়-ফুঁকের আশ্রয় নিয়েছেন।
নড়াইলের উজিরপুর অর্গানিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সায়েদ আলী শান্ত বলেন, ইকো সিস্টেমের অংশ হিসেবে সাপ বিল-মাঠে বসবাসের কারণে ফসলের ওপর ইঁদুরের আক্রমণ কম হয়। ফলে কৃষক বেশি ফসল ঘরে তোলে। নড়াইল সাপ প্রবণ এলাকা। চৈত্র-বৈশাখ ও বর্ষা মৌসুমে বেশি সর্প দংশনের ঘটনা ঘটে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দিয়ে সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করালে একজন রোগীও মরত না। নড়াইল সদর হাসপাতালের স্টোর কিপার(ভারপ্রাপ্ত) আলফাজ উদ্দিন বলেন, স্টোরকিপার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর ৫০০ পিস সর্প বিষ প্রতিষেধক সিরাম আনা হয়। এরপর গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি বিভাগ থেকে ২০০ সিরাম পাওয়া যায়, যার মেয়াদ ছিল গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। স্বল্প মেয়াদের এ সিরাম আনতে অপারগতা প্রকাশ করলেও না এনে উপায় ছিলনা। সদর হাসপাতালের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে ১০০ পিস দিয়ে বাকি সিরাম স্টোরে রেখে দেয়া হয়। ৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আরও ১শ পিস সিরাম বরাদ্দ পেলেও হাতে পাইনি। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর দেয়া হবে। হাসপাতালে গত ৫ বছরে কত পিস সিরাম এসেছে এবং কত পিস ব্যবহার হয়েছে- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এ তথ্য আমার জানা নেই।
এদিকে দুদিন সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. সুজল কুমার বকশি এবং তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডলের সঙ্গে হাসপাতালে এ বিষয়ে তথ্য আনতে গেলেও কিন্তু অফিসিয়াল প্রোগ্রাম থাকায় তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়নি। পরে আরএমওকে ফোন দিলে তিনি তত্ত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এ প্রসঙ্গে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে ফোন করলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ১০০ সর্প বিষ প্রতিষেধক সিরাম পাওয়া যাবে।
গত আগস্ট সাপে কাটা এক রোগীকে সর্প বিষ প্রতিষেধক প্রয়োগের ১০ মিনিটের মধ্যে মারা যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, বিভিন্ন কারণে মারা যেতে পারে। আমি কিভাবে বলব কিভাবে সে মারা গেছে? গত এক বছরে হাসপাতালে কত পিস সিরাম ব্যবহার হয়েছে এ বিষয়ে জানতে তিনি আমাকে স্টোরকিপারের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। স্টোরকিপার বিষয়টি জানেন না বলে জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়