হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

এনবিআর কর্তাদের ভ্রমণ বিলাস! : এবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে সাত কর্মকর্তা, সুযোগ পেলেই প্রশিক্ষণে যান কর্মকর্তারা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থায় সরকার কৃচ্ছ্রসাধনে জোর দিচ্ছে। চলমান ডলার সংকট কাটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে অভিজ্ঞতা বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র সফরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাত কর্মকর্তা। এই বিদেশ সফরে রয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান, কাস্টমস পলিসির মেম্বার, একজন সিস্টেম ম্যানেজার, দুইজন কাস্টমস কমিশনার, একজন যুগ্ম কমিশনার ও একজন উপকমিশনার। সাত দিনের ‘বিজনেস ডিজাইন এন্ড ফিউচার টেকনোলজি আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ শীর্ষক সেমিনারে নলেজ শেয়ারিংয়ে অংশ নেবেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। যদিও এই বিদেশ ভ্রমণের সব ধরনের ব্যয় বহন করবে ওরাকল করপোরেশন। এর আগে অর্থাৎ গত ২৫ জুলাই এক কাস্টমস কমিশনারের নেতৃত্বে স্ক্যানার দেখতে মালোশিয়ায় যান এনবিআরের ৬ কর্মকর্তা। এত সফর ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের পরও কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারে কোনো সমস্যা হলে বিদেশি প্রতিষ্ঠান আঙ্কটাডের কাছে যেতে হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- দেশের এই সংকটের সময় বিদেশ ভ্রমণ সরকারের ব্যয় সাশ্রয় নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কাস্টমসের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতি আনতে ২০১৪ সালে নতুন করে যুক্ত করা হয় অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। সম্প্রতি এই সিস্টেমে আপডেট দেয়া হয়েছে। এই আপডেটের পরও কার্যক্রমে ভোগান্তি কাটেনি ব্যবসায়ীদের। এই সিস্টেম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওরাকল করপোরেশন প্রতি বছরই এনবিআরের আইটি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বিদেশে বিভিন্ন সেমিনারে নিয়ে যায় এবং সব খরচ বহন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিকোতে সাত দিনের একটি সেমিনারে অংশ নিতে এনবিআরের সাত কর্মকর্তা যাচ্ছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের নেতৃত্বে ‘বিজনেস ডিজাইন এন্ড ফিউচার টেকনোলজি আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ শীর্ষক সেমিনারের নলেজ শেয়ারিং প্রোগ্রামে অংশ নেবেন তারা। গত ৩০ আগস্ট জারি হওয়া সরকারি আদেশে এই সেমিনারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছিল ১৫ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে প্রোগ্রাম পিছিয়েছে বলে জানায় এনবিআর সূত্র। এই কারণে গতকাল রবিবার এমিরেটস এয়ারলাইন্সের রাত ১টা ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার করার কথা রয়েছে তাদের। ১৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় বেলা ২টায় তারা সানফ্রান্সিকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন। আগামী ২১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সেমিনারে সফটওয়্যার সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আয়োজিত ওয়ার্কশপে অংশ নেবেন তারা। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এমিরেটসের আরেকটি ফ্লাইটে দেশে ফেরার কথা রয়েছে এনবিআর চেয়ারম্যানের।
এ বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ জানতে চাইলে দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠান

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একদিকে সরকার ব্যয় সংকোচন করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। দেশে থেকেও এই সেমিনারে অংশ নিতে পারতেন সরকারি কর্মকর্তারা। এছাড়া অবসরে যাওয়ার আগে এ ধরনের সফর নৈতিকতা বিরোধী বলেও মনে করেন তিনি।
এনবিআর সূত্রে আরো জানা গেছে, এনবিআর কর্মকর্তাদের এই যুক্তরাষ্ট্র সফরে আরো আছেন এনবিআরের কাস্টমস পলিসির সদস্য মো. মাসুদ সাদিক। এছাড়া আগামী বছরে অবসরে যাচ্ছেন এনবিআরের সিস্টেম ম্যানেজার মো. ফজলুর রহমানও রয়েছেন এই নলেজ শেয়ারিং সফরে। এছাড়া আরো আছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান, ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ, এনবিআরের প্রথম সচিব রাকিবুল হাসান এবং কাস্টম পলিসির দ্বিতীয় সচিব মো. পারভেজ রেজা চৌধুরী। এছাড়া আগামী ৪ অক্টোবর একটি সেমিনারে অংশ নিতে জার্মানি যাবেন এনবিআরের আয়কর নীতির দয়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য মো. সামসুদ্দিন আহমেদ। এসব বিদেশ সফর নতুন কিছু নয় এনবিআরের কর্মকর্তাদের। এর আগেও অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের ২৫ জুলাই স্ক্যানার দেখতে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর সফরে যান এনবিআরের ৬ কর্মকর্তা। একটি বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে স্ক্যানার দেখতে যান তারা। অভিযোগ রয়েছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে বিদেশ সফর এখন একটি স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার নলেজ শেয়ার করতে গেছেন সুদূর আমেরিকায়। তবে লক্ষ্যণীয়- বিভিন্ন সময়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা বিদেশে সেমিনার ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে হওয়া ওয়ার্কশপে অংশ নিলেও কার্যত সুফল মেলে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেছেন, অ্যাসাইকুড ওয়ার্ল্ডের সমস্যা সমাধানের জন্য এখনো আঙ্কাটাডের দ্বারস্থ হতে হয় তাদের। অভিযোগ রয়েছে, এনবিআরের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সংশ্লিষ্ট সেমিনার বা বিভিন্ন আয়োজনে গত এক বছরে প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা বিদেশ সফর করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়