হাসপাতালে ভর্তি আরো ৩৮১ রোগী : ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার আহ্বান মন্ত্রীর

আগের সংবাদ

মহা আড়ম্বরে সমাহিত মহারানি

পরের সংবাদ

ইআরডির সেমিনারে বক্তারা : দেশের উন্নয়নে বড় অবদান রাখছে বৈদেশিক ঋণ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশে বৈদেশিক ঋণের পাইপলাইন বাড়ছে। এখন পর্যন্ত জমা আছে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রæত ৪৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সুশাসন নিশ্চিতকরণে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা শীর্ষক সেমিনারের সঞ্চালনা করেন ইআরডি সচিব শরিফা খান।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বক্তব্য দেন পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ। বৈদেশিক ঋণের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।
সেমিনারে জানানো হয়, বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ বাড়ছে বাংলাদেশের। তবে তা এখনো গ্রহণ সীমার মধ্যেই আছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪০ শতাংশ পর্যন্ত আমরা ঋণ নিতে পারি। আমরা এখন ঋণ নিচ্ছি জিডিপির ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এছাড়া রেমিট্যান্সের হিসেবে ঋণ নিতে পারি ১৮০ শতাংশ। সেখানে ৮৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এদিক থেকে আমাদের সক্ষমতার অনেক কম বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছি। তবে গত কয়েক বছরে ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। এই ঋণ পরিশোধেরও চাপ বাড়বে আগামীতে।
একই সেমিনারে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, উন্নত দেশ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রচুর ঋণ নিতে হবে। বৈদেশিক ঋণের নানামুখী সুফল তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদেশি ঋণের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা উঠেছে। আমরা ঋণ নেব কেন? আজকে যে বঙ্গবন্ধু সেতু সেটা কিন্তু বিদেশি ঋণে হয়েছে। আমি যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি এটাও ইউএসআইডির সহায়তায় স্থাপিত হয়েছিল। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষির উন্নয়নে কাজ করছে। এটা সম্ভব হয়েছিল বৈদেশিক ঋণ সহায়তায়। বিআইসিসি, মেট্রোরেল, ন্যাশনাল হাইওয়ে হচ্ছে বৈদেশিক ঋণে। তিনি বলেন, বিদেশি সহায়তা আমাদের উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করছে। আমাদের প্রচুর ঋণ নেয়া দরকার, যতক্ষণ পর্যন্ত উন্নত দেশ না হতে পারব। বৈদেশিক ঋণ নেয়ার যুক্তি তুলে ধরে ড. শামসুল আলম বলেন, বৈদেশিক ঋণে সুদ কম, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধ করতে হয়। বৈদেশিক ঋণে সুদ ০ দশমিক ৭৫ থেকে দেড় শতাংশ। এই ঋণ পরিশোধ করার সময়টাও অনেক বড়। অনেক ঋণ আবার ৩১ বছরে পরিশোধ করতে হয়। আর দেশীয় ঋণ যদি ব্যাংক থেকে নেয়া হয় তাহলে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দেয়া লাগে। বিদেশে যখন কম সুদ পাব তাহলে নেয়া উচিত। ৪৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাইপলাইনে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার ২০২২ সালে পেয়েছি। যেহেতু সস্তায় ঋণ পাওয়া যাচ্ছে, সেহেতু দীর্ঘমেয়াদি নিতে হবে।
ঋণের সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদেশি ঋণ নেয়ার কারণে অনেক সমালোচনা হয়। শ্রীলঙ্কা কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে উন্নত দেশ ছিল, মাথাপিছু আয় ও শিক্ষার হার ভালো ছিল। বেশ কিছু ভুলের জন্য তাদের এখন দুরবস্থা। দক্ষিণ কোরিয়াও ঋণ নিয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। তবে কিছু দেশ প্রচুর বৈদেশিক ঋণ নিয়েও কিছু করতে পারেনি, যেমন পাকিস্তান। তার অন্যতম কারণ ঋণ ব্যবস্থাপনার অভাব। কতগুলো ভুল করে তারা সমস্যায় পড়েছে, তাই আমাদের বৈদেশিক ঋণের বিষয়ে সাবধান হতে হবে। এ সময় আরো জানানো হয়, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত আমাদের দেশে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রæতি এসেছে ১৬৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে অর্থ ছাড় হয়েছে ১১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। এখনো পাইপলাইনে পড়ে আছে ৪৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। এখনো স্বল্প সুদের ঋণ বেশি পাচ্ছে বাংলাদেশ। মোট ঋণের ৭৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ হলো ফিক্সড রেটের বা স্বল্প সুদের ঋণ।
এছাড়া ফ্লটিং রেট বা কিছুটা অনমনীয় ঋণ ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এগুলোর গড় সুদের হার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। গড়ে ২৮ বছরে এসব ঋণ পরিশোধ করতে হবে। গড় রেয়াতকাল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। সেই সঙ্গে মোট বৈদেশিক ঋণের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ঋণ মাত্র ৪০ শতাংশ আর বহুপক্ষীয় ঋণ ৬০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাংক থেকে ৩২ শতাংশ, এডিবি থেকে ২৪ শতাংশ, জাপান থেকে ১৮ শতাংশ, চীনের ৮ শতাংশ, রাশিয়ার ৫ শতাংশ, ভারতে ২ শতাংশ, আইডিবি ও এআইআইবির ১ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস থেকে নেয়া হয়েছে ৫ শতাংশ ঋণ।
সেমিনারে আরো জানানো হয়, মোট নেয়া ঋণের মধ্যে এসডিআরে নেয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশি ৪১ শতাংশ ঋণ। এরপরই রয়েছে মার্কিন ডলারে ৩২ শতাংশ, জাপানি ইয়েনে ১৮ শতাংশ, ইউরোয় ৩ শতাংশ এবং অন্যান্য মুদ্রায় ৬ শতাংশ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়