মর্টার শেল নিক্ষেপ,: রোহিঙ্গা নিহত, আহত ছয়জন

আগের সংবাদ

মাঠে মারমুখী আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

হাসাপাতালে ফেলে যাওয়া : কুষ্টিয়ার সেই নবজাতক পাচ্ছে নতুন মা-বাবা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর আলম দুলাল, কুষ্টিয়া থেকে : জন্মের পর নবজাতক সন্তানকে হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যান এক মা। গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওই নবজাতক ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের বিশেষ পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ওই নবজাতকের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে। তিনি সিলেট জেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত আছেন। ৭ বছর বিবাহিত জীবনে ওই দম্পতির কোনো সন্তান হয়নি। চিকিৎসকরা ওই দম্পতিকে জানিয়েছেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের আর কোনো দিন সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে তাদের পূর্ণ পরিচয় গোপন রাখার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক জানান, নবজাতক ওই শিশুটির দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ১৪ দম্পতি আগ্রহ প্রকাশ করে আবেদন করেন। আবেদনকারীদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, প্রবাসী, চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ছিলেন। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়। সভায় ১৮ জন সদস্যের প্রত্যেকেই উপস্থিত ছিলেন। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে আবেদনকারী দম্পতিদের মধ্যে এক দম্পতির হাতে শিশুটির দায়িত্বভার দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দুয়েকদিনের মধ্যেই শিশুটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওই দম্পতির হাতে হস্তান্তর করা হবে। আর হাসপাতালে ফেলে যাওয়া সেই নবজাতক ছেলে সন্তানটি পাচ্ছে নতুন মা-বাবা।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক আরিফুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (আইসিটি ও শিক্ষা) আ ন ম আবুজর গিফারী, এনডিসি শাহেদ আরমান, কুষ্টিয়ার সমাজসেবা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মুরাদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন জানান, শিশুটি বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বর ভোরের দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য এক নারী আসেন। চিকিৎসক ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা দেন। কিন্তু ওই নারী গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই চিকিৎসক তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশনা দেন। সকাল ৮টার দিকে তার পেটে তীব্র ব্যথা শুরু হলে তাকে গাইনি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই নারী নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। কিছুক্ষণ পর ওই নারীকে ওয়ার্ডে পাঠানো হলে একপর্যায়ে তিনি সদ্য নবজাতক সন্তানকে ফেলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যান।
সেই থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে শিশুটিকে নবজাতকদের বিশেষ পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী রফিকুল আলম টুকু এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলে সবশেষে আমরা একজন মানুষ। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম একটি মহতি কাজ করেছেন। তিনি ইচ্ছা করলে এটি এড়িয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি শিশুটির দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ যতেœ রেখে আবার একজন উপযুক্ত মা-বাবার হাতে তুলে দিতে উদ্যোগ নিয়েছেন। এর চেয়ে ভালো কাজ আর হয় না। তিনি আরো বলেন, প্রশাসনের প্রতিটি ব্যক্তিকে এমন মানবিক হওয়া দরকার। তবেই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে যাবে। মানুষের মধ্যে সহানুভূতির মনোভাব আরো বাড়বে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়