কাগজ প্রতিবেদক : পুরাণভিত্তিক কাব্যনাট্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিনী’। এতে মহাভারতের ঋষ্যশৃঙ্গ ও তরঙ্গিনী, বুদ্ধদেব বসুর নির্মাণে আধুনিক মানুষের দ্ব›দ্ব, বেদনা, মানসিকতা ও মনস্তত্ত্বের সমকালীন হয়ে উঠেছে। পুরাণ কাহিনীকে যেমন তিনি নতুন বোধে উত্তীর্ণ করেছেন, তেমনি নাট্যকাহিনীতে মাতা-কন্যা, পিতা-পুত্র সম্পর্কের বিরোধগুলোকে উন্মোচিত করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। মূলত মানব সম্পর্কের দ্ব›দ্বগুলো উদ্ঘাটিত হয়েছে লোলাপাঙ্গী, তরঙ্গিনী, বিভাণ্ডক, ঋষ্যশৃঙ্গ ও রাজমন্ত্রী অংশুমান চরিত্রের বিন্যাসে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে লোকনাট্যদল প্রযোজিত ‘তপস্বী ও তরঙ্গিনী’ নাটকের মঞ্চায়ন হয়। প্রযোজনাটি ইতিপূর্বে ৪৫টি প্রদর্শনী হয়েছিল এবং সর্বশেষ প্রদর্শনী হয় ২০০৪ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর নির্দেশক লিয়াকত আলী লাকী নতুনভাবে এ বছর পুনরায় নাটকটি মঞ্চে আনেন। নাটকে দেখা যায়, অঙ্গদেশে যখন অনাবৃষ্টি ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিল, দৈবজ্ঞেরা বললেন, আজন্ম বনবাসী তরুণ তপস্বী ঋষ্যশৃঙ্গকে রাজধানীতে নিয়ে আসতে পারলেই দুর্যোগের অবসান হবে। ঋষ্যশৃঙ্গ কখনো কোনো নারীকে চোখেও দেখেননি, তরুণ হয়েও তপোবনে তিনি অগ্রগণ্য। তাই এই অসাধ্য সাধন শুধু তারই পক্ষে সম্ভব, কিন্তু সে জন্য তার কৌমার্যনাশ প্রয়োজন।
রাজমন্ত্রীদের আজ্ঞায় এক বৃদ্ধ এই অপহরণের ভার নিল। তারই রূপসি ও যুবতী কন্যা নিপুণ উপায়ে তপস্বীকে ব্রহ্মচর্য থেকে ভ্রষ্ট করলে, তারপর তাকে রাজধানীতে নিয়ে আসা কঠিন হলো না। তিনি নগরে প্রবেশ করামাত্র প্রচুর বৃষ্টিপাত হলো। রাজা লোমপাদ তার কন্যা শান্তার সঙ্গে ঋষ্যশৃঙ্গের বিয়ে দিলেন। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকের কাহিনী।
নাটকে তরঙ্গিনী রূপে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে অভিনয়ে ফিরেছেন নন্দিত নাট্যাভিনেত্রী ফারহানা মিলি। অন্য অভিনয় শিল্পীরা হলেন- স্বদেশ রঞ্জন দাসগুপ্ত, রুবেল শঙ্কর, আবু বকর বকশী, মাসউদ সুমন, শামীমা তুষ্টি, মুমু মাসউদ, মূসা রুবেল,

মাশরুবা যুথি, অনন্যা নিশি ও মিতু রহমান প্রমুখ।
পোশাক পরিকল্পনা ও আবহ সঙ্গীত পরিচালনায় ইয়াসমীন আলী। মঞ্চ পরিকল্পনা করেছেন আলী আহমেদ মুকুল এবং আলোক পরিকল্পনায় জুনায়েদ ইউসুফ।
উল্লেখ্য, আমেরিকান এসোসিয়েশন অব কমিউনিটি থিয়েটার (এএসিটি)’র আমন্ত্রণে সম্প্রতি নাটকটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসব (এএসিটি ওয়ার্ল্ড ফেস্ট ২০২২)-এ মঞ্চায়ন হয় এবং দুটি ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে। পরবর্তীতে নিউইয়র্কের বাংলাভাষী দর্শকদের আমন্ত্রণেও একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।